স্যামি ঝড়ে রাজশাহীর প্রতিশোধ

দুই দলের প্রথম দেখায় শেষ ওভারে তালগোল পাকিয়ে হেরেছিল রাজশাহী কিংস। এবার ড্যারেন স্যামির বিধ্বংসী এক ইনিংসে মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে দলটি। মাহমুদউল্লাহর খুলনা টাইটানসকে ৯ রানে হারিয়েছে তারা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2016, 01:43 PM
Updated : 26 Nov 2016, 04:00 PM

এই জয়ে আট ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ নম্বরেই আছে রাজশাহী। তবে চিটাগং ভাইকিংসের সঙ্গে পয়েন্টের পার্থক্য ঘুচিয়েছে তারা। পিছিয়ে আছে রানরেটে। ৯ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই রয়েছে খুলনা।

বিশাল সব ছক্কা হাঁকিয়েছেন স্যামি। ক্যারিয়ান অলরাউন্ডারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ ৫ ওভার ৬৬ রান সংগ্রহ করা রাজশাহী শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে করেছে ১৫৪ রান। 

শেষের দিকে দারুণ বোলিংয়ে খুলনাকে বেধে রাখেন ফরহাদ রেজা ও মোহাম্মদ সামি। তাদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে ৬ উইকেটে ১৪৫ রানের বেশি করতে পারেনি মাহমুদউল্লাহর দল।

লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি খুলনার। ১ রান করেই রিকি ওয়েসেলসের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফিরেন হাসানুজ্জামান। ২ রান করে নাজমুল ইসলামের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন শুভাগত হোম চৌধুরী।

শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে ৮.১ ওভারে ৪৭ রানের জুটি গড়েন ওয়েসেলস ও মাহমুদউল্লাহ। একাদশ ওভারে ওয়েসেলসকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন স্যামি।

নিকোলাস পুরান যখন ক্রিজে আসেন, তখন ওভার প্রতি প্রায় ১০ রান চাই খুলনার। এসেই চড়াও হওয়া এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ২.৫ ওভারে অধিনায়কের সঙ্গে গড়েন ৩৯ রানের বিধ্বংসী এক জুটি। মেহেদী হাসান মিরাজকে পরপর দুই বলে ছক্কা হাঁকিয়ে আবার একই চেষ্টা করতে গিয়ে ফিরেন পুরান। ১২ বলে তিনটি ছক্কা ও একটি চারে তিনি করেন ২৮ রান।

এরপর বেশিক্ষণ টিকেননি মাহমুদউল্লাহও। তিনটি চার ও একটি ছক্কায় ৩৩ বলে ৩৩ রান করে ফিরেন আবুল হাসানের বলে বোল্ড হয়ে।

শেষ ৩ ওভারে ৩১ রান দরকার ছিল খুলনার। উইকেটে কেভন কুপার ও আরিফুল হক ছিলেন বলে আশায় ছিল দল। দারুণ সব ইয়র্কারে কুপার-আরিফুলকে রান নেওয়ার খুব একটা সুযোগ দেননি রেজা-সামি। কুপার ফিরে গেলেও চেষ্টা করেছিলেন আরিফুল, কিন্তু পেরে উঠেননি।

নাজমুল ইসলাম, সামিত প্যাটেল, আবুল হাসান হিসেবী বোলিং করেন। ১৮ ও ২০তম ওভার করা রেজা দেন কেবল ১৪ রান। কোনো উইকেট না পেলেও দলের জয়ে রেখেছেন বড় অবদান।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে রাজশাহীর শুরুটা ছিল সতর্ক। রানের গতি বাড়ানোর মুহূর্তে উইকেট হারায় দলটি। অসাধারণ এক ফিরতি ক্যাচে মুমিনুল হককে ফিরিয়ে প্রথম আঘাত হানেন মাহমুদউল্লাহ।

শফিউল ইসলামের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে পরের বলে ফিরে যান জুনায়েদ সিদ্দিক। দশম ওভারে তাকে অনুসরণ করেন সাব্বির রহমান। মোশাররফ হোসেনের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে পরের বলে এলবিডব্লিউ হন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।

কেভন কুপারের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে পরের এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন উমর আকমল। থিতু হয়ে কুপারকে ফিরতি ক্যাচ দেন সামিত প্যাটেল। মেহেদী হাসান মিরাজের রান আউটে রাজশাহী স্কোর দাঁড়ায় ১৫ ওভারে ৮৮/৬। সেখান থেকে দলকে দেড়শ’ রানে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব অধিনায়ক স্যামির।

জুনায়েদের বলে ছক্কা-চার হাঁকিয়ে রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন স্যামি। শফিউলের পরের ওভারে দুটি ছক্কা ও একটি চারে নেন ১৯ রান। ডানহাতি এই পেসারের শেষ ওভারে আবার চড়াও হন রাজশাহীর অধিনায়ক। প্রথম পাঁচ বলে দুটি ছক্কায় নেন ১৭ রান।

শেষ পর্যন্ত ৭১ রানে অপরাজিত থাকেন স্যামি। তার ৩৪ বলের বিধ্বংসী ইনিংসটি ৫টি ছক্কা ও ৪টি চার সমৃদ্ধ।

স্যামি ঝড়ের সবচেয়ে বড় অংশটা গেছে শফিউলের ওপর দিয়ে। এই পেসার ৫৩ রানে নিয়েছেন দুই উইকেট। কুপার দুই উইকেট নিতে খরচ করেছেন ৩১ রান। পরের স্পেলে পেসার জুনায়েদ উইকেট না পেলেও দিয়েছেন ২৫ রান, যার প্রথম দুই ওভার থেকে এসেছিল কেবল ৪ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রাজশাহী কিংস: ২০ ওভারে ১৫৪/৮ (মুমিনুল ১২, জুনায়েদ ২১, সাব্বির ১৬, প্যাটেল ১৬, আকমল ৯, স্যামি ৭১*, মিরাজ ১, রেজা ৩, হাসান ৩; শুভাগত ০/৫, মাহমুদউল্লাহ ১/৭, জুনায়েদ ০/২৫, কুপার ২/৩১, শফিউল ২/৫৩, মোশাররফ ১/২৫, তাইবুর ০/৭)

খুলনা টাইটানস: ২০ ওভারে ১৪৫/৬ (ওয়েসেলস ৩৬, হাসানুজ্জামান ১, শুভাগত ২, মাহমুদউল্লাহ ৩৩, পুরান ২৮, আরিফুল ২৫*, কুপার ১৪, তাইবুর ২*; নাজমুল ১/১৭, সামি ১/৩২, প্যাটেল ০/১৮, হাসান ১/২৫, স্যামি ১/৮, মিরাজ ১/২৭, রেজা ০/১৪)

ফল: রাজশাহী ৯ রানে জয়ী