আগের ম্যাচেই জিম্বাবুয়ের সঙ্গে টাই করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ত্রিদেশীয় সিরিজের আরেকটি শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেছনে পড়ল আরেকটু। তাদের ১ রানে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করল শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানদের ৩৩০ রান তাড়ায় ক্যারিবিয়ানরা তুলতে পারে ৩২৯।
১৪৮ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেও লুইসকে পেতে হলো হারের যন্ত্রণা। তিনশ’ রান তাড়া করে জয় অধরাই রইল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তারাই একমাত্র টেস্ট খেুড়ে দেশ, কখনোই জেতেনি তিনশ’ রান তাড়ায়।
ব্যাটসম্যানদের রাজত্বের ম্যাছে শেষ মুহূর্তে পার্থক্য গড়ে দিলেন একজন বোলার। শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিল ১০ রান। নুয়ান প্রদিপের প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন জেসন হোল্ডার। পরের বলে রান নিতে পারেননি সুলিমান বেন।
সবাইকে চমকে দিয়ে তৃতীয় বলে ছক্কা মারেন বেন। ৩ বলে তখন চাই ৩ রান। ম্যাচ হেলে ক্যারিবিয়ানদের দিকেই। কিন্তু পরের বলে আবারও রান নেই। পঞ্চম বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কাভার সীমানায় ধরা বেন। শেষ বলে চাই ৩ রান। কিন্তু প্রদীপের ১৪৪ কিমি গতির ইয়র্কারে ১ রানের বেশি নিতে পারেননি ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হতাশার আরেকটি মুহূর্তেও জড়িয়ে ছিলেন হোল্ডার। দায় যদিও তার ছিল না। তার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতেই রান আউট হয়ে যান লুইস। তবে তার আগে খেলেছেন অসাধারণ।
বড় রান তাড়ায় শুরু থেকেই চালিয়ে খেলেন লুইস। জনসন চার্লসের সঙ্গে মিলে উদ্বোধনী জুটিতে তোলেন ৮ ওভারে ৬৩।
চার্লসের পর ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট, শাই হোপ খানিকটা সঙ্গ দিয়েছেন। তবে দলকে জয়ের পথে রেখেছিলেন মূলত লুইসও। অসাধারণ সব শটে এলোমেলো করে দেন লঙ্কানদের। প্রথম ওয়ানডে অর্ধশতককে রূপ দেন দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে। ৯১ বলে স্পর্শ করেন তিন অঙ্ক।
দলের ভার কাঁধে বয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন একশ’ ছাড়িয়ে দেড়শর কাছে। হঠাৎই গড়বড়। মিড অফে খেলেই রানের জন্য ছুটেছিলেন লুইস। অপরপ্রান্তে হোল্ডার তাকিয়ে ফিল্ডারের দিকে। মাঝপথ থেকে ফিরে আসার চেষ্টায় পেরে ওঠেননি লুইস। ১৫ চার ও ৪টি ছক্কায় ১২২ বলে ১৪৮ করে রান আউট!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাই তখন ৫৭ বলে ৬৯। হোল্ডারের সঙ্গে কার্লোন ব্র্যাথওয়েট। দুজন দলকে টেনেও নেন অনেকটা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেননি কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। শেষ পর্যন্ত থেকেও জেতাতে পারলেন না হোল্ডার (৪৫*)।
শ্রীলঙ্কার ইনিংসে ছিল না কোনো সেঞ্চুরি। তবে ছিল দুটি ‘প্রায় সেঞ্চুরি’। দুজন আউট হয়েছেন ৯৪ রানে!
ওপেনিংয়ে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা করেন ৬০ বলে ৫৮। দ্বিতীয় উইকেটে নিরোশান ডিকভেলার সঙ্গে জুটি ১০৫ রানে। তৃতীয় উইকেটে ডিকভেলার সঙ্গে কুসল মেন্ডিসের জুটি ১০৭ রানের।
১০৬ বলে ৯৪ করে ডিকভেলা ফিরেছেন এলবিডব্লিউ হয়ে। সমান তালে এগিয়ে যাওয়া মেন্ডিস সঙ্গকে হারানোর পর তুলেছেন ঝড়। ৯৪ রানে তিনি ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। ৭৩ বলের ইনিংসে ছিল ৫টি ছক্কা।
শেষদিকে অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গার ১৯ বলে ২৬ আর সাচিথ পাথিরানার ১৭ বলে ২৬ রানে শ্রীলঙ্কা গড়ে বড় সংগ্রহ।
তখন কে ভাবতে পেরেছিল, শেষ বলে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেবেন একজন পেসার!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কার: ৫০ ওভারে ৩৩০/৭ (ধনাঞ্জয়া ৫৮, পেরেরা ৭, ডিকভেলা ৯৪, মেন্ডিস ৯৪, জয়াসুরিয়া ৯, থারাঙ্গা ২৬, গুনারত্নে ৬, পাথিরানা ২৪*; গ্যাব্রিয়েল ১/২৯, হোল্ডার ৩/৫৭, কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ১/৬৪, নার্স ১/৫৮, ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ১/৫৬, বেন ০/৫৯)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ৩২৯/৯ (চার্লস ২৬, লুইস ১৪৮, ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ১৬, হোপ ২৫, কার্টার ৬, পাওয়েল ১০, হোল্ডার ৪৫*, কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ১৯, নার্স ২, বেন ১১, গ্যাব্রিয়েল ০*; কুলাসেকারা ২/৭৩, লাকমল ২/৬৭, জয়াসুরিয়ার ০/২০, প্রদিপ ১/৬৫, পাথিরানা ০/৫১, গুনারত্নে ০/৪৭)।
ফল: শ্রীলঙ্কা ১ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: কুসল মেন্ডিস