সাকিবদের আবার ডোবালেন সামিত প্যাটেল

ডাগ আউটে ফিরেও প্যাড পরেই বসে ছিলেন ড্যারেন স্যামি। চোখে-মুখে অবিশ্বাস। মাঠের বাইরে সাব্বির-মুমিনুলরাও হতবিহ্বল। আরও একটি ম্যাচ কি বেরিয়ে যাবে মুঠো থেকে! শঙ্কা জেগেছিল প্রবলভাবেই। দূর হলো শেষ ওভারের দুটি চারে। ফরহাদ রেজার চারে ফিরে এল বিশ্বাস। মেহেদী হাসান মিরাজের বাউন্ডারিতে জয়। শেষ ওভারের ফাড়া কাটিয়ে জিতল রাজশাহী কিংস।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2016, 08:59 AM
Updated : 21 Nov 2016, 12:25 PM

সামিত প্যাটেলের ঝড়ো ব্যাটিং আর মুমিনুল হকের সঙ্গে দারুণ জুটিতে জয়টা এক সময় ছিল রাজশাহীর নাগালেই। কিন্তু আবারও গুবলেট পাকায় তারা কাছে গিয়ে। আগে দু দফায় হেরেছে শেষ ওভারে। এবার স্বস্তির ব্যতিক্রম, শেষের ওই দুই চারে অবশেষে জয়।

বিপিএলে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ঢাকা ডায়নামাইটসকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে রাজশাহী কিংস। ১৮৩ রান তাড়ায় জিতেছে ১ বল বাকি থাকতে। জয়ের মূল নায়ক আবারও সেই সামিত প্যাটেল।

কাগজে-কলমে যেমন, তেমনি পারফরম্যান্সেও দুই দলের ফারাক বিশাল। তবে পরস্পরের মোকাবেলায় ফলাফলটা উল্টো। সব দিক থেকে পিছিয়ে থাকা রাজশাহী জিতল দুই ম্যাচেই। দুবারই পার্থক্যটা গড়ে দিলেন প্যাটেল।

মিরপুরে ৬ উইকেটের জয়ে ম্যাচে ২ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে প্যাটেল করেছিলেন ২৫ বলে অপরাজিত ৪৪। এবার উইকেট নেই বলেই হয়ত ব্যাট হাতে আরও বিধ্বংসী। খেললেন ৩৯ বলে ৭৫ রানের ইনিংস!

প্যাটেলর টর্নেডো ইনিংস আর মুমিনুল হকের দারুণ ব্যাটিংয়ে বড় রান তাড়ায়ও রাজশাহী ছিল অনায়াস জয়ের পথে। দুজনের শতরানের জুটি দলকে নিয়ে গিয়েছিল জয়ের কাছে।

কিন্তু শেষে দ্রুত কিছু উইকেট হারানোয় দেখা দেয় আবারও ম্যাচ হারার শঙ্কা। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৯ রান। ম্যাট কোলসের প্রথম বলেই আউট হন আবুল হাসান। তৃতীয় বলে চার মেরে সমীকরণ খানিকটা সহজ করেন ফরহাদ। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে মুমিনুলের দারুণ চারে এক বল আগেই শেষ ম্যাচ।

রান তাড়ায় রাজশাহীর শুরুটা হয়নি ভালো। জুনায়েদ সিদ্দিক ফেরেন প্রথম ওভারেই। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাব্বির রহমান সীমানায় ধরা পড়েন নাসির হোসেনের অসাধারণ ক্যাচে। ৪ ওভার শেষে রান তখন ২ উইকেটে ৩১।

সেখান থেকেই মুমিনুল ও প্যাটেলের জুটি। রানরেটকে কখনোই নাগালের বাইরে যেতে দেননি প্যাটেল। মুমিনুলও বাজে বলকে সাজা দিয়ে সঙ্গ দিয়েছেন দারুণভাবে।

ম্যাট কোলসের এক ওভারে ২০ রান নিয়ে প্যাটেল অর্ধশতক স্পর্শ করেন ২৬ বলে। মুমিনুলের পঞ্চাশ আসে ৩৮ বলে। এবারের বিপিএলে এটি তার তৃতীয় অর্ধশতক।

দুজনের ৬৩ বলে ১০০ রানের জুটি ভাঙে মুমিনুলের বিদায়ে। মোহাম্মদ শহিদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন ৫৬ রানে (৪২ বলে)।

প্যাটেল অবশ্য থামেননি। তুলোধুনো করে ছাড়েন সাকিবকেও। আউট হন সাকিবের বলেই। বিশাল দুটি ছক্কা মারার পর আবারও একই চেষ্টায় লাইন মিস করে বোল্ড। তবে ৬ ছক্কা আর ৫ চারে ৩৯ বলে ৭৫ রানের ইনিংসে আগেই নাড়িয়ে দিয়েছেন ঢাকাকে।

জিততে রাজশাহীর চাই তখন ২৫ বলে ২৯ রান। সহজ এই সমীকরণও কঠিন বানিয়ে ফেলেছিল তারা নিজেদের দোষে। উমর আকমল ও ড্যারেন স্যামি ফেরেন বাজে শটে। পারেননি অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করা আবুল হাসানও। শেষ পর্যন্ত ফরহাদ আর মিরাজের ব্যাটে রক্ষা।

প্যাটেলের ঝড়ে আড়াল হয়ে গেছেন সাঙ্গাকারা ও সিকুগ প্রসন্ন। মূলত এই দুজনের ব্যাটেই বড় রান তুলেছিল ঢাকা। টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম অর্ধশতক করেছেন সাঙ্গাকারা। স্বদেশি প্রসন্ন আবার ঝড় তুলেছেন শেষ দিকে।

ঢাকার ভিত্তিটা গড়ে দিয়েছিল সাঙ্গাকারা ও মেহেদী মারুফের উদ্বোধনী জুটি। দুই ব্যাটসম্যানই এগিয়ে যান প্রায় সমান গতিতে। ৮ ওভার শেষে দুজনেরই রান ছিল ৩১, দুজনেরই দুটি করে চার ও ছয়!

৩১ রানেই আবুল হাসানের বলে পয়েন্টে সাঙ্গাকারার ছাড়েন সামিত প্যাটেল। তবে রাজশাহী প্রথম উইকেটের দেখাও পায় ওই ওভারেই। দারুণ একটি চার মারার পরের বলেই ছক্কার চেষ্টায় লং অফে ধরা পড়েন মারুফ (২৫ বলে ৩৫)। ভাঙে ৫২ বলে ৭১ রানের উদ্বোধনী জুটি।

৪৩ রানে আবার জীবন পান সাঙ্গাকারা। এবার ড্যারেন স্যামির বলে কাভারে তার ক্যাচ ছাড়েন মুমিনুল হক। খেসারতও দিত হয়। সেই স্যামির পরের ওভারেই চার-ছক্কায় ১৬ রান আনেন সাঙ্গাকারা।

শেষ পর্যন্ত ফরহাদ রেজাকে প্যাডল স্কুপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ধরা পড়েন সাঙ্গাকারা। আগের ৬ ম্যাচ মিলিয়ে ১০০ রান করেছিলেন লংকান কিংবদন্তি। এদিন ৪৬ বলে ৬৬।

এই ওভারে ফরহাদ আগেই ফিরিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেনকে। তিনে প্রমোশন পেয়ে এদিন সুবিধা করতে পারেননি তরুণ ব্যাটসম্যান। ১৩ করেছেন ১৭ বলে।

জোড়া উইকেটের ধাক্কা ফেরত জোড়া ছক্কায়। মিরাজকে এক্সট্রা কাভার দিয়ে উড়িয়ে দেন প্রসন্ন। মিড উইকেট গ্যালারিতে ফেলেন ম্যাট কোলস। মোহাম্মদ সামি আক্রমণে ফিরেই বোল্ড করে দেন কোলসকে।

কিন্তু পরের ওভারে আবারও আবুল হাসানের বলে প্রসন্নর ক্যাচ ছাড়েন মুমিনুল। সেটির মূল্য চোকাতে হয় শেষ ওভারে। আবুল হাসানকে বিশাল দুটি ছয় মারেন প্রথম দু বলেই। বাউন্ডারিতে করেন শেষ। মাঝে সাকিবের ব্যাট থেকে আসে চার। সব মিলিয়ে শেষ ওভারে ২২ রানে ঢাকা ছাড়িয়ে যায় ১৮০।

আগের ম্যাচে ৭ ছক্কার টর্নোডের পর এবার ৩ ছক্কায় ১৬ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত প্রসন্ন। সাকিব অপরাজিত ১২ বলে ১৮ করে।

কিন্তু তারা কেউ নন, ঢাকা-রাজশাহী ম্যাচের নায়ক তো একজনই হতে পারেন! ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণীতে সাকিবও বললেন একই কথা, “সামিত প্যাটেলই ম্যাচটি ছিনিয়ে নিয়েছে আমাদের কাছ থেকে।”

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০ ওভারে ১৮২/৪ (মারুফ ৩৫, সাঙ্গাকারা ৬৬, মোসাদ্দেক ১৩, প্রসন্ন ৩৪*, কোলস ৮, সাকিব ১৮*; সামি ১/২০, মিরাজ ০/৪৪, প্যাটেল ০/১৭, ফরহাদ ২/২২, আবুল হাসান ১/৪৪, স্যামি ০/৩১)।

রাজশাহী কিংস: ১৯.৫ ওভারে ১৮৩/৭ (মুমিনুল ৫৬, জুনায়েদ ৪, সাব্বির ৭, প্যাটেল ৭৫, আকমল ১২, স্যামি ৯, আবুল হাসান ৫, মিরাজ ৬*, ফরহাদ ৫*; ব্রাভো ৩/৩৫, শহিদ ২/২৯, সাকিব ১/৩৬, নাসির ০/১০, সানজামুল ০/৯, প্রসন্ন ০/১৭, শুভ ০/১২, কোলস ১/৩৫ )।

ফল: রাজশাহী কিংস ৩ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: সামিত প্যাটেল