চোয়ালবদ্ধ লড়াইয়ের পর ইংল্যান্ডের শেষের অস্বস্তি

চারশ’ তাড়া করে জয়? ইংল্যান্ড কখনও সাড়ে তিনশও তাড়া করতে পারেনি। এশিয়ায় চতুর্থ ইনিংসে তো তিনশই ছাড়িয়েছে ইতিহাসে একবার। দেড়শ ওভার টিকে থাকা? এই উইকেটে অসম্ভবের কাছাকাছি। কিন্তু অবিশ্বাস্য দৃঢ়তা আর চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটিই কাটিয়ে দিল ৫০ ওভার! ভারতীয়দের কপালে চিন্তার ভাঁজ। অবশেষে শেষ বিকেলে মিলেছে তাদের স্বস্তি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2016, 12:57 PM
Updated : 20 Nov 2016, 01:02 PM

৪০৫ রানের পেছনে ছোটার সমীকরণ নাগালের বাইরে আগেই। তবে দেড়শ ওভার টিকে থাকার লড়াইয়ে ক্ষান্তি দিচ্ছে না ইংল্যান্ড। ৫০ ওভার উইকেটশূন্য থাকার পর শেষ বিকেলে ভারত ফেরাতে পেরেছে অ্যালেস্টার কুক ও হাসিব হামিদকে।

ইংলিশরা দিন শেষ করেছে ২ উইকেটে ৮৭ রানে। জয়ের জন্য চাই আরও ৩১৮ রান। তবে শেষ দিনের রোমাঞ্চটা মূলত ৮ উইকেট না হারানো আর তুলে নেওয়ার লড়াই।

বল হাতে রোববার দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। তবে স্বস্তি খুব একটা ছিল না তার পরও। চতুর্থ দিনে তখনও বাকি ৬০ ওভার। শেষ দিন তো ছিলই। কিন্তু কুক ও হামিদ দেখালেন লড়াইয়ের পথ।

ব্লকের পর ব্লক করে গেছেন দুজন, ছেড়েছেন একের পর এক ডেলিভারি। টেকনিক, টেম্পারামেন্ট আর শক্ত মানসিকতার অপূর্ব প্রদর্শনী মেলে ধরলেন দুজন। রানের চাকা থেমে থাকল। কিন্তু উইকেটের ঘরও থাকল শূন্য। দুজনে ফিরিয়ে আনলেন টেস্ট ক্রিকেটের হারিয়ে যাওয়া দিন, যেখানে উইকেটে পড়ে থাকাই শেষ কথা।

৫০ ওভারে ৭৫ রানের জুটি গড়লেন দুজন। শেষ পর্যন্ত এই প্রতিরোধ ভাঙল এমন এক বলে, যেটিতে ব্যাটসম্যানের করার ছিল না কিছুই। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অফ ব্রেক প্রায় গড়িয়ে ছোবল দিল হাসিব হামিদের গোড়ালির নিচে! আরও একবার নিজের টেকনিক-টেম্পারেমেন্টর উজ্জ্বল প্রমাণ দিয়ে তরুণ ওপেনার ফিরলেন ১৪৪ বলে ২৫ রানে।

কুক তবু লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ১৭১ বলে স্পর্শ করেন অর্ধশতক। শেষ রক্ষা হলো না। দিনের শেষ ওভারে এলবিডব্লিউ হয়ে গেলেন রবীন্দ্র জাদেজার বলে (১১৮ বলে ৫৪)।

সকালে নিজের জাত আবারও চিনিয়েছেন বিরাট কোহলি। যে উইকেটে ধুঁকেছে সব ব্যাটসম্যান, সেখানেই ভারতীয় অধিনায়ক খেলেছেন ওয়ানডে গতিতে। এক পাশে উইকেট পড়েছে নিয়মিত, আরেক পাশে কোহলি তাক লাগিয়েছেন চোখধাঁধানো সব শটে।

মনে হচ্ছিলো ৫০তম টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরিই করে ফেলবেন কোহলি। ইনিংসটি থামাতে প্রয়োজন ছিল দারুণ কিছু। সেটাই করেছেন বেন স্টোকস। পরিসংখ্যানে উইকেটটি লেখা থাকবে আদিল রশিদের, কিন্তু প্রাপ্য আসলে বেন স্টোকসের। স্লিপে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে অবিশ্বাস্য ক্ষীপ্রতায় এক হাতে তালুবন্দী করেছেন স্টোকস। প্রথম ইনিংসে ১৬৭ রানের পর কোহলি এবার ১০৯ বলে ৮১।

প্রথম ইনিংসের মতো এবারও শেষ দিকে গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস খেলেছেন অভিষিক্ত অফ স্পিনার জয়ন্ত যাদব। অপরাজিত ছিলেন ২৭ রানে। শেষ উইকেটে মোহাম্মদ শামিকে নিয়ে ৪২ রানের জুটি।

স্পিনিং উইকেটেও দারুণ বোলিংয়ে চার উইকেট নিয়েছেন স্টুয়ার্ট ব্রড। চারটি নিয়েছেন আদিল রশিদও।

শেষ বিকেলের উইকেটে দিনশেষে এগিয়ে তবু ভারতই। তবে ইংল্যান্ড জানিয়ে দিল, হারার আগেই হার নয়!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত ১ম ইনিংস: ৪৫৫

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৫৫

ভারত ২য় ইনিংস: ৬৩.১ ওভারে ২০৪ (বিজয় ৩, রাহুল ১০, পুজারা ১, কোহলি ৮১, রাহানে ২৬, অশ্বিন ৭, ঋদ্ধিমান ২, জাদেজা ১৪, জয়ন্ত ২৭*, উমেশ ০, শামি ১৯; অ্যান্ডারসন ১/৩৩, ব্রড ৪/৩৩, রশিদ ৪/৮২, স্টোকস ০/৩৪, মইন ১/৯)।

ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৪০৫) ৫৯.২ ওভারে ৮৭/২ (কুক ৫৯, হামিদ ২৫, রুট ৫*; শামি ০/১৬, উমেশ ০/৮, অশ্বিন ১/২৮, জাদেজা ১/২৫, জয়ন্ত ০/৭)।