চট্টগ্রামে নবির তাণ্ডবের পর তাসকিনের দাপট

খুনে মেজাজে ব্যাটিং করে রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে মোহাম্মদ নবি খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। পরে গতির ঝড় তুলে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করা তাসকিন আহমেদ নিলেন ৫ উইকেট। টানা চার হারের পর জয়ের দেখা পেল চিটাগং ভাইকিংস।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2016, 09:27 AM
Updated : 18 Nov 2016, 01:54 PM

রাজশাহী কিংসকে ১৯ রানে হারিয়ে ৫ ম্যাচে দ্বিতীয় জয়ে পাঁচ নম্বরে উঠে এসেছে তামিম ইকবালের দল। চার ম্যাচে তৃতীয় হারে ছয় নম্বরে নেমে গেছে রাজশাহী।

শুরুতে ঝড় তোলেন স্মিথ। মাঝখানে দৃঢ়তাভরা এক অর্ধশতক করেন এনামুল। শেষটায় রাজশাহীর বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালান নবি। তাতে ৫ উইকেটে ১৯০ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে চিটাগং।

রাজশাহীর প্রথম চার ব্যাটসম্যানই দারুণ শুরু করেন কিন্তু অর্ধশতক পর্যন্ত যেতে পারেননি কেউই। অলরাউন্ডার মিলিয়ে ১১ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলা দলটির টেলএন্ড পারেনি পরিস্থিতির দাবি মেটাতে। তাসকিনের দারুণ বোলিংয়ে ৯ উইকেটে ১৭১ রানে থেমে যায় রাজশাহীর ইনিংস।  

বড় লক্ষ্য তাড়ায় রাজশাহীকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন মুমিনুল হক ও প্রথমবার খেলতে নামা জুনায়েদ সিদ্দিক। ৪.৩ ওভারে এই দুই জনে গড়েন ৪৪ রানের জুটি। মাহমুদুল হাসানের ওভারে টানা চারটি চার হাঁকানো মুমিনুল ১৪ বলে করেন ২২ রান। এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠা জুটি ভাঙেন দলে ফেরা পেসার তাসকিন।

তিনটি ছক্কা ও একটি চারে ৩৮ রান করে গ্রান্ট এলিয়টের বলে নবিকে ক্যাচ দেন জুনায়েদ। রাজশাহীর দ্রুত রান তোলায় এতে কোনো বাধা পড়েনি। ১২ বলে ২১ রান করে দলকে কক্ষপথেই রাখেন উমর আকমল। ২৪ রানে মাহমুদুলের হাতে জীবন পাওয়া সাব্বির রহমান তখনও আশা হয়ে টিকে ছিলেন। তবে ইমরান খানের বলে তামিমের চমৎকার ক্যাচে পরিণত হলে বড় একটা ধাক্কা খায় রাজশাহী। ৩০ বলে চারটি ছক্কা ও একটি চারে ৪৬ রান করেন সাব্বির।

সাব্বিরের বিদায়ে রান-বলের সমীকরণ কঠিন হয়ে যায় রাজশাহীর জন্য। অধিনায়ক স্যামি তখনও ক্রিজে ছিলেন বলে আশা টিকে ছিল দলটির। কিন্তু ইমরান খানের ফুলটসে স্যামি জহুল ইসলামের ক্যাচে পরিণত হলে ম্যাচ ঘুরে যায় চিটাগংয়ের দিকে।

ব্যাটিং গভীরতার জন্য তবুও আশায় ছিল রাজশাহী। ১০ নম্বরে ছিলেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান নুরুল হাসানের মতো মারকুটে ব্যাটসম্যান। কিন্তু শেষের ব্যাটসম্যানরা পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছেন কেবল।

৩১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে চিটাগংয়ের সেরা বোলার তাসকিন। টি-টোয়েন্টিতে তার আগের সেরা বোলিং ছিল ৩১ রানে চার উইকেট। পেসার ইমরান খান ২৮ রানে নেন ২ উইকেট। নবি আঁটসাঁট বোলিংয়ে ২৪ রানে নেন ১ উইকেট।

এর আগে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুক্রবারের প্রথম ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি চিটাগংয়ের। তরুণ অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তামিম।

শুরুতেই অধিনায়ককে হারানোর ধাক্কা দলের ওপর পড়তে দেননি এক ম্যাচ পর দলে ফেরা স্মিথ। ফরহাদ রেজার এক ওভারে তিন চার হাঁকানো এই অলরাউন্ডার মিরাজের বলে মারেন ছক্কা-চার। উড়ন্ত সূচনা এনে দেওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করেন আবুল হাসান।

গ্রান্ট এলিয়ট, জহুরুল ইসলামের দ্রুত বিদায়ে চিটাগং হারাতে বসে ভালো ভিতের সুবিধা। দেখেশুনে খেলা এনামুল ও খুনে মেজাজে থাকা নবির দারুণ ব্যাটিংয়ে কক্ষপথে ফেরে দলটি।

প্রান্ত বদল করার দিকে বেশি মনোযোগ ছিল এনামুলের। অপেক্ষায় ছিলেন বাজে বলের। সেগুলো পেলে আর হাতছাড়া করেননি। প্রতিটা বল কাজে লাগানোর চেষ্টা ছিল নবির। আফগান অলরাউন্ডারের ৩৭ বলের ইনিংসে ডট বল মাত্র পাঁচটি।

হাসানের বলে বিশাল ছক্কায় চলতি আসরে নিজের প্রথম পঞ্চাশ স্পর্শ করেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। সেই ওভারে তার তিনটি চার ও একটি ছক্কায় আসে ২০ রান।

৩৯ বলে অর্ধশতকে পৌঁছে পরের বলে ফিরেন এনামুল। ভাঙে ৯.১ ওভারে ১০৫ রানের দারুণ জুটি। চিটাগংয়ের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের ৪০ বলের ইনিংসটি গড়া ৪টি চার ও দুটি ছক্কায়।

৬০ রানে স্যামির হাতে জীবন পান নবি। শেষ পর্যন্ত ৮৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। আফগান অলরাউন্ডারের আগের সেরা ছিল ৫৭ রান। তার ৬টি করে ছক্কা-চারের ঝড়ের বেশিটা গেছে পেসার হাসানের ওপর দিয়ে।

৪ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে ১ উইকেট পান হাসান। আরেক পেসার ফরহাদ রেজা ৪৪ রান দিয়ে পান ১ উইকেট। বোলারদের অকাতরে রান দিয়ে যাওয়ার ম্যাচে ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল সামিত প্যাটেল। ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন এই ইংলিশ অলরাউন্ডার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১৯০/৫ (তামিম ৫, স্মিথ ৩৪, এনামুল ৫০, এলিয়ট ৮, জহুরুল ২, নবি ৮৭*, নাজমুল ১*; রেজা ১/৪৪, মিরাজ ১/১৮, হাসান ১/৪৭, প্যাটেল ২/২১, সিরিবর্ধনে ০/২৯, স্যামি ০/৩০)

রাজশাহী কিংস: ২০ ওভারে ১৭১/৯ (মুমিনুল ২২, জুনায়েদ ৩৮, সাব্বির ৪৬, আকমল ২১, প্যাটেল ৬, স্যামি ১৪, সিরিবর্ধনে ৪, মিরাজ ২, রেজা ৯, নুরুল ৩*, হাসান ৫*; নবি ১/২৪, মাহমুদুল ০/৩৩, তাসকিন ৫/৩১, ইমরান ২/২৮, সাকলাইন ০/৩২, এলিয়ট ১/২৩)

ফল: চিটাগং ১৯ রানে জয়ী।

ম্যাচ সেরা: মোহাম্মদ নবি