রান রথে পুজারা, অসাধারণ কোহলি

দিনের শুরুতে একবার হাসলেন জেমস অ্যান্ডারসন। শেষ দিকে আরেকবার। কিন্তু দুই হাসিতে কত পার্থক্য! দিনের শুরুর দিকের উইকেটে ছিল চওড়া হাসি। শেষ বেলার উইকেটে হাসিতে মিশে থাকল ক্লান্তি, শ্রান্তি। মাঝের সময়টায় যে রাজত্ব করেছেন বিরাট কোহলি ও চেতেশ্বের পুজারা!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2016, 01:09 PM
Updated : 17 Nov 2016, 01:09 PM

ইন্দোর থেকে রাজকোট হয়ে এবার বিশাখাপত্তম, তিন মাঠের অভিষেক টেস্ট। টানা তিনটি ম্যাচেই সেঞ্চুরিতে রাঙালেন পুজারা। আর অসাধারণ এক সেঞ্চুরিতে দেড়শ ছাড়িয়েও অপরাজিত কোহলি (১৫১*)। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে ভারতের রান ৪ উইকেটে ৩১৭।

সকালে টস হারার পরই আত্মসমর্পণের সুরে অ্যালেস্টার কুক বলেছিলেন, “এখন আর আমাদের কিছুই হারানোর নেই।” ইংল্যান্ড অধিনায়কের শঙ্কাটাই যেন বাস্তব রূপ নিল পুজারা ও কোহলির ব্যাটে। ভারত দুই ওপেনারকে হারিয়েছিল সকালেই। কিন্তু পুজারা ও কোহলির ২২৬ রানের জুটিতে প্রথম দিনটি ভারতেরই।

প্রথম দিনে ইংল্যান্ডের প্রাপ্তি অ্যান্ডারসন। চোট কাটিয়ে ফিরেছেন তাদের ইতিহাসের সফলতম বোলার। ম্যাচ অনুশীলনের ঘাটতি আছে বলে তাকে এখনই খেলানো নিয়ে সংশয়ে ছিল ইংল্যান্ড। ক্রিস ওকসের খানিকটা চোটে অ্যান্ডারসনকে খেলাতেই হয়। সুইং বোলিংয়ের এই শিল্পীও আরও একবার চিনিয়ে দেন নিজের জাত। পেস প্রতিকূল উইকেটেও প্রথম দিনে নেন ৩ উইকেট!

প্রথম উইকেটটি ছিল সম্ভবত দিনের সেরা ডেলিভারিতে। আগের টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান মুরালি বিজয় এবারও শুরু করেছিলেন দারুণ। কিন্তু প্রাণহীন উইকেটেও লেংথ থেকে আচমকা লাফানো অ্যান্ডারসনের ডেলিভারি বিজয়ের গ্লাভসে ছোবল দিয়ে বেন স্টোকসের হাতে!

ইংল্যান্ড উইকেটের দেখা পেয়ে গেছে অবশ্য এর আগেই। দিনের দ্বিতীয় আর স্টুয়ার্ট ব্রডের প্রথম ওভারেই বাইরের বল তাড়া করে সেই স্টোকসের হাতেই ধরা পড়েছেন চোট কাটিয়ে ফেরা লোকেশ রাহুল (০)।

টস হারের পরও ২২ রানে ২ উইকেট নিয়ে তখন উজ্জীবিত ইংল্যান্ড। কিন্তু কোহলি ও পুজারার ব্যাটে আস্তে আস্তে মিইয়ে যায় তাদের সেই প্রাণশক্তি। জোড়া উইকেটের ধাক্কায় ভড়কে না গিয়ে দারুণ সব শট খেলেছেন দুজনই। দুই প্রান্তেই মেলে ধরেন ধ্রুপদি সব শটের প্রদর্শনী।

উইকেটে ঘাসের লেশমাত্র নেই। শুষ্ক উইকেটে স্পিন ধরবে পরে। বেশ কিছু বল একটু নীচু হয়েছে, তবে মূলত উইকেট ছিল ব্যাটিং সহায়কই। দুই ব্যাটসম্যানই সেখানে ব্যাট করেছেন অনায়াসে। ইংলিশ স্পিনাররা রাখতে পারেননি কোনো প্রভাব।

অর্ধশতক আগে স্পর্শ করেন কোহলি। তবে এরপর বেশি ইতিবাচক ছিলেন পুজারাই। তিনিই আগে পৌঁছে যান সেঞ্চুরিতে। আদিল রশিদের শর্ট বলে ছক্কা মেরে ছুঁয়ে ফেলেন সেঞ্চুরি। ৪০ টেস্টে তার দশম!

খানিকপর তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন কোহলিও। ক্যারিয়ারের পঞ্চাশথম টেস্ট স্মরণীয় করলেন ১৪তম সেঞ্চুরিতে। অধিনায়ক হিসেবে ১৯ টেস্টেই সাত শতক! ৫৬ রানে অবশ্য স্টোকসের বলে লং লেগে তার ক্যাচ নিতে পারেননি রশিদ। ইনিংসে সেটিই একমাত্র খুঁত।

জুটি ভাঙার যখন কোনো পথই পাচ্ছিলো না ইংল্যান্ড, ধারার বিপরীতেই ধরা দেয় উইকেট। হঠাৎ পুজারার মনোযোগে ঘাটতি, অ্যান্ডারসনের বেশ বাইরের বল তাড়া করে আউট। ১১৯ রানের ইনিংসে ছিল দুটি ছক্কা। ক্যারিয়ারে এই প্রথম ইনিংসে একটির বেশি ছক্কা মারলেন পুজারা!

শেষ বিকেলে দ্বিতীয় নতুন বল নিয়েই দারুণ এক ডেলিভারিতে অজিঙ্কা রাহানেকে ফেরান অ্যান্ডারসন। তবে কোহলিকে হারাতে পারেননি। প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে তিনি খেললেন এক বছরে তিনটি দেড়শ রানের ইনিংস।

কোহলি জিতেছেন মুখোমুখি লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জটাও। এই টেস্টের আগে সবচেয়ে বেশি পাঁচবার, অ্যান্ডারসনের বলেই আউট হয়েছেন কোহলি। ১৩১ বল খেলে করতে পেরেছিলেন ৪২ রান। এবার অ্যান্ডারসনের ৪৪ বল খেলে ২৫ রান করে আউট হননি।

কোহলি জিতলেন বলেই প্রথম দিনে দাপট ভারতের। দ্বিতীয় দিনে ইংল্যান্ডের বড় বাধা ভারত অধিনায়কই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ৩১৭/৪ (বিজয় ২০, রাহুল ০, পুজারা ১১৯, কোহলি ১৫১*, রাহানে ২৩, অশ্বিন ১*; অ্যান্ডারসন ৩/৪৪, ব্রড ১/৩৯, স্টোকস ০/৫২, আনসারি ০/৪৫. রশিদ ০/৮৫, মইন ০/৫০)।