মাশরাফিদের হারিয়ে শীর্ষে সাকিবের ঢাকা

সাকিব আল হাসানের এক ওভারে বিশাল চারটি ছক্কা হাঁকালেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবুও হাসি নেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়কের মুখে। তার আগেই যে ম্যাচ ঢাকা ডায়নামাইটসের মুঠোয়। 

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2016, 03:04 PM
Updated : 14 Nov 2016, 05:09 PM

কুমিল্লাকে সহজেই ৩৩ রানে হারিয়ে শীর্ষে উঠেছে ঢাকা। রান রেটে বরিশাল বুলস ও খুলনা টাইটান্সকে পেছনে ফেলেছে তারা। চার ম্যাচে তিন দলেরই পয়েন্ট ৬ করে।

চমৎকার এক অর্ধশতক করেন মেহেদী মারুফ। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ভিত গড়ে দেন নাসির হোসেন। শেষটায় ঝড় তুলেন সাকিব। তাতে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবারের দ্বিতীয় ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেটে ১৯৪ রান করে ঢাকা।

শুরু থেকে নিয়মিত উইকেট হারানোয় কুমিল্লা কখনও জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি। ৯ উইকেটে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা তুলতে পারে ১৬১ রান। এ নিয়ে চারটি ম্যাচের সবকটিতেই হারল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।

বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় ইমরুল কায়েসের ওপর অনেকখানি নির্ভর করেছিল কুমিল্লা। দলকে হতাশ করেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। চমৎকার শুরু করেও নাসির হোসেনের বাজে বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে আলাউদ্দিন বাবুকে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি।

ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যানের বাজে শটের ধাক্কা কাটিয়ে আর ফিরতে পারেনি কুমিল্লা। অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জসিমউদ্দিন আক্রমণে আসা লেগ স্পিনার সিকুগে প্রসন্নর বলে সীমানায় ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন।

চলতি আসরে প্রথমবারের মতো খেলা আহমেদ শেহজাদ মোসাদ্দেক হোসেনকে পরপর দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ফিরেন। এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন পাকিস্তানের এই ব্যাটসম্যান।

ভালো করেননি তরুণ নাজমুল হোসেন শান্তও। সানজামুল ইসলামের সোজা বলে বোল্ড হন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। উইকেট বৃষ্টিতে বাধ দিতে পারেননি রায়ান টেন ডেসকাট, রশিদ খান, আমিন জুনিয়রও। প্রসন্নর বলে বোল্ড হন ডেসকাটে। মোহাম্মদ শহীদ জোড়া আঘাতে ফিরিয়ে দেন রশিদ ও আল আমিন জুনিয়রকে।    

মাশরাফি ক্রিজে যাওয়ার সময় দলের স্কোর ১১ ওভারে ৭৪/৭। অধিনায়কের ব্যাটেই ব্যবধান কমায় কুমিল্লা। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিবের এক ওভারে চারটি বিশাল ছক্কা হাঁকান মাশরাফি। ৩৫ বলে দুটি চার ও পাঁচটি ছক্কায় ৪৭ রান করে ফিরেন তিনি। ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন তরুণ সাইফুদ্দিন।

৩৪ রানে ৩ উইকেট নেন ঢাকার পেসার শহীদ।

অলরাউন্ডারদের দল ঢাকার ব্যাটিং গভীরতাও বিশাল। দুইশ’ ছুঁই ছুঁই সংগ্রহ পেতে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা মোসাদ্দেক হোসেনকে পর্যন্ত প্রয়োজন হয়নি তাদের।

১২ বলে ২০ রানের ছোট্ট ইনিংসে ঢাকাকে উড়ন্ত সূচনা দিয়ে যান কুমার সাঙ্গাকারা। উইকেটের সামনে পিছনে ব্যর্থ লিটন দাসের জায়গায় খেলতে নেমেই নিজের সামর্থ্য দেখান জসিমউদ্দিন। আল আমিন জুনিয়রের বলে সাঙ্গাকারা একটু এগিয়ে যেতেই স্টাম্প ভেঙে দেন তরুণ উইকেটরক্ষক।

চতুর্থ ওভারে উইকেট হারানোর ধাক্কা দলের ওপর পড়তে দেননি মারুফ ও নাসির। দ্বিতীয় উইকেটে ৮.৪ ওভারে এই দুই জনে গড়েন ৮৪ রানের আক্রমণাত্মক জুটি। বাজে বল পেলেই চড়াও হচ্ছিলেন নাসির। মারুফ যথারীতি ছিলেন খুনে মেজাজে।

প্রথমবারের মতো খেলতে নামা রায়ান টেন ডেসকাটে ভাঙেন বিপজ্জনক জুটি। তার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লংঅফে আহমেদ শেহজাদকে ক্যাচ দেন নাসির। ৩৫ বলে ৫টি চারে ৪৩ রান করেন টানা দুই ম্যাচে টপ অর্ডারে খেলা এই ব্যাটসম্যান।

নাসিরের বিদায়ে ভাটা পড়ে রানের গতিতে। রানের জন্য সেই সময়ে সংগ্রাম করা ঢাকাকে আরও চাপে ফেলেন রশিদ খান। জোড়া আঘাতে রবি বোপারা ও মারুফকে ফিরিয়ে দেন এই আফগান লেগ স্পিনার।

ইংলিশ অলরাউন্ডার বোপারা বোল্ড হন। ৩৯ বলে তিনটি ছক্কা ও চারটি চারে ৬০ রান করা মারুফ ক্যাচ দেন ডেসকাটকে।

তারকা খচিত ঢাকা অবশ্য এই চাপ কাটিয়ে উঠতে সময় নেয়নি। ২.৪ বলে সাকিব আল হাসান-ডোয়াইন ব্রাভো গড়েন ৩৬ রানের জুটি। দুটি ছক্কা ও একটি চারে ২৪ রান করা ঢাকার অধিনায়ককেও ফেরান রশিদ। ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন ব্রাভো।

২৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে কুমিল্লার সেরা বোলার রশিদ। দলকে প্রথম জয় এনে দিতে তার একার লড়াই যথেষ্ট ছিল না।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০ ওভারে ১৯৪/৫ (মারুফ ৬০, সাঙ্গাকারা ২০, নাসির ৪৩, বোপারা ৮, সাকিব ২৪, ব্রাভো ১৩*, প্রসন্ন ৬*; মাশরাফি ০/৩১, তানভির ০/৩৬, আল আমিন ১/৭, নাবিল ০/৩২, রশিদ ৩/২৮, সাইফুদ্দিন ০/১৮, ডেসকাটে ১/৩৬)

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৬১/৯ (ইমরুল ১৯, জসিম ১০, শেহজাদ ১৫, নাজমুল ১৬, তানভির, রশিদ ২, আল আমিন ০, মাশরাফি ৪৭, সাইফুদ্দিন ১৮*, নাবিল ১*; সাকিব ০/৩৪, নাসির ১/২০, প্রসন্ন ২/১৫, মোসাদ্দেক ১/১৪, সানজামুল ১/১৩, শহীদ ৩/৩৪, ব্রাভো ০/১৭, বোপারা ১/১৩)

ফল: ঢাকা ৩৩ রানে জয়ী