এবারের বিপিএলে প্রথম বড় রান প্রসবা রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে রাজশাহীকে ৪ রানে হারাল বরিশাল। বরিশালের ১৯২ রান তাড়ায় রাজশাহী শেষ পর্যন্ত থমকে যায় ১৮৮ রানে।
শেষ ওভারে দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে রাজশাহীর দুই ব্যাটসম্যানকে হাত খুলতে দেননি থিসারা পেরেরা। চারটি সিঙ্গেলসের বেশি নিতে পারেননি নুরুল হাসান ও আবুল হাসান।
মন্থর উইকেটে ব্যাটসম্যানদের ভোগান্তির পর এবার বিপিএলে দেখা গেল নিখাদ ব্যাটিং উইকেট। মুশফিকুর রহিম ও শাহরিয়ার নাফীসের দারুণ দুটি ইনিংসে এবারের আসরের সর্বোচ্চ রান তুলেছিল বরিশাল।
রান তাড়ার শুরুতেই রাজশাহী হারায় রকিবুল হাসানকে। এবার প্রথম খেলতে নামা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ক্যাচ দেন কাভারে।
সাব্বির শুরু করেছিলেন আল আমিনকে চার মেরে। এরপর আর থামাথামি নেই। এক পাশ থেকে কিছুক্ষণ মুমিনুল, পরে সামিত প্যাটেল সঙ্গ দিয়েছেন সাব্বিরকে। আক্ষরিক অর্থেই অন্যরা ছিলেন স্রেফ ছায়া হয়ে। সাব্বিরের ব্যাটে ছিল টর্নোডো।
পাশে পান ভাগ্যকেও। ১৪ রানে মনির হোসেনের বলে পয়েন্টে সহজতম ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান আল আমিন হোসেনের হাতে।
সাব্বিরের ব্যাট থেকে প্রায় প্রতি ওভারেই এসেছে চার-ছক্কা। অর্ধশতক স্পর্শ করেন ২৬ বলে। এরপরও ছুটতে থাকেন একই গতিতে। পেস-স্পিন, সব বলই গুঁড়িয়েছেন, উড়িয়েছেন। বল ফেলার জায়গাই পাচ্ছিলেন না বরিশালের বোলাররা। অধিনায়ক মুশফিককে মনে হচ্ছিল দিশেহারা।
শুরুতে যার হাতে জীবন পেয়েছিলেন, সেই আল আমিনকে ছক্কা মারতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত আউট হন সাব্বির। মালানের দারুণ ক্যাচ হয়ে যখন ফিরছেন, সাব্বিরের নামের পাশে ৬১ বলে ১২২! চার-ছক্কা সমান ৯টি করে।
২৪ বলে তখন রাজশাহীর চাই ৩৪ রান, হাতে ৫ উইকেট। ক্রিজে স্যামির মতো ফিনিশার। পেন্ডুলাম হেলে তাদের দিকেই। দলকে এগিয়েও নিচ্ছিলেন স্যামি। কিন্তু শেষের আগের ওভারে রায়াদ এমরিটের স্লোয়ার স্যামি টেনে আনলেন স্টাম্পে (১৯ বলে ২৭)। রাজশাহীর হারের ঘণ্টাও বুঝি বেজে গেল!
থিসারা পেরেরার দুর্দান্ত শেষ ওভারে এল মাত্র ৪ রান। সাব্বিরের তাণ্ডবে দিশাহারা বরিশালই শেষ পর্যন্ত মাতল বিজয় উল্লাসে।
বোলিংয়ের মত ব্যাটিংয়েও শেষ দিকে পেরেরা ছিলেন দুর্দান্ত। তবে তার আগেই বরিশালকে বড় রানের দিকে নিয়ে গেছেন শাহরিয়ার ও মুশফিক।
টস জিতে বোলিংয়ে রাজশাহীর শুরুটা ছিল দারুণ। প্রথম ওভারেই দিলশান মুনাবিরাকে ফেরান ফরহাদ রেজা। লেংথ বল তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন মিড অফে। খানিক পর ফরহাদেরই বেরিয়ে যাওয়া বলে কটবিহাইন্ড ডেভিড মালান। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে বরিশালের রান ছিল ২ উইকেটে ২৮।
তিন ম্যাচে দুজনই করেছেন দ্বিতীয় অর্ধশতক। ৬৩ করে শাহরিয়ার বিদায় নিলেও মুশফিক শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৫২ বলে ৮১ রানে।
ফরহাদকে ডাউন দা উইকেটে চার মেরে মুশফিকের শুরু। পরের ওভারে প্রিয় স্লগ সুইপে ছক্কা মেহেদী হাসান মিরাজকে।
শাহরিয়ারের রান তখন ১৯ বলে ৯। অধিনায়ককে দেখে বুঝি ভাবলেন, এবার শুরু করতে হয়! সামিত প্যাটেলকে বোলিংয়ে স্বাগত জানালেন মাথার ওপর দিয়ে চার মেরে। ওভারের শেষ বলে আরেকটি চার। ব্যস, ডানা মেলে দিলেন!
শাহরিয়ার-মুশফিকের ব্যাট থেকে মাঠের নানা প্রান্তে ছুটতে থাকল বল, উড়তে থাকল নানা দিকে। মাঠের চেয়ে বল বেশি থাকল হাওয়ায় আর গ্যালারিতে!
স্যামিকেও স্লগ সুইপে ছক্কা মারলেন মুশফিক। শাহরিয়ার পিছিয়ে থাকবেন কেন! আবুল হাসানের স্লোয়ারকে ওড়ালেন মিড উইকেট সীমানার বাইরে। পরের ওভারে সেই প্যাটেলকে টানা দুটি বিশাল ছয়!
অর্ধশতক স্পর্শ করলেন ৩৮ বলে। মাইলফলক উদযাপন করলেন সম্ভবত সেরা শটটি খেলে, স্যামিকে ছক্কা এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে! দুই বল পর আরেকটি চার মেরে শাহরিয়ার বিদায় নিলেন ওই ওভারের শেষ বলে। চারটি করে চার ও ছক্কায় ৪৪ বলে ৬৩!
জুটি ভাঙলেও রানের গতি কমেনি, বরং বেড়েছে। কেসরিক উইলিয়ামসকে টানা দুই বলে চার ও ছক্কা মারেন মুশফিক। পরের ওভারের আবুল হাসানকে টানা দু বলে চার ও ছয়।
উইলিয়ামসের বিপিএল অভিষেক দু:স্বপ্নে পরিণত করে থিসারা পেরেরাও মারেন বিশাল দুটি ছক্কা। ইনিংসের শেষ বলে রান আউট হওয়া পেরেরা নামের পাশে তিন ছক্কায় ১১ বলে ২৪।
পাঁচটি চার ও চারটি ছক্কায় মুশফিক অপরাজিত ৮১ রানে। পেরেরার সঙ্গে তার জুটি মাত্র ৪ ওভারে ৫৯!
প্রথম ১০ ওভারে যে দলের রান ছিল ৬২, পরের ১০ ওভারে সেই বরিশালই তুলল ১৩০ রান।
দু:সাহসী সাব্বিরের ব্যাটে ভর করে সেই এভারেস্টও প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিল রাজশাহী। কিন্তু কাছে গিয়েও পারলেন না, পারল না রাজশাহীও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বরিশাল বুলস: ২০ ওভারে ১৯২/৪ (মুনাবিরা ০, মালান ১৩, শাহরিয়ার ৬৩, মুশফিক ৮১*, পেরেরা ২৪,; ফরহাদ ২/২২, মিরাজ ০/১৫, উইলিয়ামস ০/৩৭, প্যাটেল ০/২৭, আবুল হাসান ০/৪৯, স্যামি ১/৩৬)।
রাজশাহী কিংস: ২০ ওভারে ১৮৮/৬(মুমিনুল ১২, রকিবুল ০, সাব্বির ১২২, আকমল ০, প্যাটেল ১৫, স্যামি ২৭, নুরুল ৫*, আবুল হাসান ৩*; মনির ১/৩০, আল আমিন ৩/৩৫, আবু হায়দার ১/২৯, এমরিট ১/৩৪, তাইজুল ০/২২, পেরেরা ০/২৭, মুনাবিরা ০/৯)।
ফল: বরিশাল বুলস ৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাব্বির রহমান