মোসাদ্দেক ঝড়ে রংপুরকে হারাল ঢাকা

উড়তে থাকা রংপুর রাইডার্সকে মাটিতে নামিয়েছে ঢাকা ডায়নামাইটস। মোসাদ্দেক হোসেনের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের পর স্পিনারদের দারুণ বোলিংয়ে ৭৮ রানের বড় জয় পেয়েছে সাকিব আল হাসানের দল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2016, 03:03 PM
Updated : 12 Nov 2016, 04:38 PM

৯ উইকেটে আগের দুটি জয় পাওয়া রংপুরের চলতি আসরে এটাই প্রথম হার।

নাসির-কুমার সাঙ্গাকারার ব্যাটে দারুণ শুরুর পর বাকিটুকু শেষ করেন তরুণ মোসাদ্দেক। দ্রুত টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারানো রংপুর পারেনি ঘুরে দাঁড়াতে। কন্ডিশন খুব ভালোভাবে বোঝা সাকিব স্পিনেই বেধে রাখেন নাইম ইসলামের দলকে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবারের দ্বিতীয় ম্যাচে টস হেরে ৬ উইকেটে ১৭০ রান করে ঢাকা। এই আসরে আগের সর্বোচ্চ ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে চিটাগং ভাইকিংসের ৩ উইকেটে ১৬১। জবাবে চার বল বাকি থাকতে ৯২ রানে অলআউট হয়ে যায় রংপুর।

বড় লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম বলেই উইকেট হারাতে পারতো রংপুর। ডোয়াইন ব্রাভোর বলে মোহাম্মদ শাহজাদের সহজ ক্যাচ স্লিপে তালুবন্দি করতে পারেননি মেহেদী মারুফ। তবে আফগান উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। সানজামুল ইসলামের বলে নাসিরকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ১১ রান করে।

তার আগেই সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ মিঠুনকে হারায় রংপুর। দ্বিতীয় ওভারে নাসিরের বলে বোল্ড হন সৌম্য। পরের ওভারে মিঠুনকে বোল্ড করেন সাকিব। 

২৩ রানে ৩ উইকেট হারানো রংপুর পায়নি তেমন কোনো জুটি। কোনো ব্যাটসম্যান পারেননি দায়িত্ব নিয়ে খেলতে। রান-বলের সমীকরণ মেলানোর কোনো চেষ্টা ছিল না প্রতিরোধ গড়া লিয়াম ডসন (২৩ বলে ১৬) ও নাঈমের (২৯ বলে ২৬)।

শেষের ঝড়ের ভরসা শহিদ আফ্রিদিও পারেননি কিছু করতে। ১০ বলে ৬ রান করে ফিরেন এই অলরাউন্ডার। অন্য ব্যাটসম্যানরাও বেশিক্ষণ টিকেননি। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে সোহাগ গাজী ফিরে গেলে সেখানেই রংপুরের ইনিংস শেষ হয়ে যায়। বোলিংয়ের সময় চোট পাওয়া রিচার্ড গ্লিসন ব্যাটিংয়ে নামেননি।

আগের ম্যাচে প্রতিপক্ষকে ৪৪ রানে গুঁড়িয়ে দেওয়া রংপুরের বোলারদের এবার সামলাতে হয়েছে ঢাকার ঝড়। যার শুরুটা নাসির-সাঙ্গাকারার ব্যাটে। মাঝের ছন্দপতনের পর শেষ করেন তরুণ মোসাদ্দেক। তাতে এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ ইনিংস গড়ে ঢাকা।

মাত্র চার বল টিকেন মারুফ। তবে এর মধ্যেই একটি করে ছক্কা-চার হাঁকিয়ে ম্যাচের সুর বেধে দেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম ওভারে উইকেট নিতে তাকে ফেরান সোহাগ গাজী।

আগের দুই ম্যাচে ব্যাটিং না পাওয়া নাসির এবার তিন নম্বরে এসেই চড়াও হন। ৯.৩ ওভারে সাঙ্গাকারার সঙ্গে উপহার দেন ৬৯ রানের জুটি। তাদের দৃঢ়তায় ৩৫ বলে আসে দলের অর্ধশতক। জুটির পঞ্চাশ আসে ৪০ বলে।   

১০ ওভারে ১ উইকেটে ৭৯ রানের সুবিধাজনক জায়গায় থাকা ঢাকা হঠাৎ ছন্দ হারায়। একাদশ ওভারে কোনো রান না দিয়ে নাসির ও রবি বোপারাকে ফেরান আফ্রিদি।

এগিয়ে এসে চড়াও হতে গিয়ে লংঅফে রুবেল হোসেনের হাতে জমা পড়েন নাসির। ৩৩ বলে ৬টি চারে ৩৮ রান করেন ডান হাতি এই ব্যাটসম্যান। এলবিডব্লিউ হন ইংলিশ অলরাউন্ডার বোপারা। পরের ওভারে সাঙ্গাকারাকে ফিরিয়ে দেন অফ স্পিনার সোহাগ।

১০ বলের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ঢাকাকে পথ দেখান অধিনায়ক সাকিব ও তরুণ মোসাদ্দেক। ৪.৩ ওভারে এই দুই জনে গড়েন ৩৯ রানের জুটি। লিয়াম ডসনের বলে লংঅফে রুবেলকে ক্যাচ দেন সাকিব।

শুরুতে নড়বড়ে ছিলেন মোসাদ্দেক। আফ্রিদির বলে স্লিপের পাশ দিয়ে চার হাঁকিয়ে রানের খাতা খোলা এই তরুণ সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ফিরে পান নিজেকে।

আগের ম্যাচে দুই ওভার চার বলে শূন্য রানে তিন উইকেট পাওয়া আরাফাত সানির বলে পরপর দুটি চার হাঁকান মোসাদ্দেক। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে রুবেলকে ছক্কা হাঁকানোর পর পয়েন্ট দিয়ে চার মারেন তিনি।

সাকিবকে বিদায়ের পর ডসনের সেই ওভারে পরপর দুই বলে ছক্কা-চার হাঁকান মোসাদ্দেক। তরুণের ঝড়ো ব্যাটিং থেকে বাঁচেননি আফ্রিদিও। পাকিস্তানের এই লেগ স্পিনারের বলেও আদায় করে নেন টানা দুই চার।

মোসাদ্দেকের সঙ্গে ২.৪ ওভার স্থায়ী ৩৩ রানের জুটিতে ১৩ রান করে ফিরে যান ডোয়াইন ব্রাভ। সানির সোজা বলে বোল্ড হন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই অলরাউন্ডার।

শেষ দুই বলে রান না নিতে পারা মোসাদ্দেক অপরাজিত থাকেন ৪৮ রানে। তার ২৮ বলের ইনিংসটি ৭টি চার ও দুটি ছক্কা সমৃদ্ধ। আগের ম্যাচে তিনি অপরাজিত ছিলেন ৫৯ রানে। দুই ছক্কায় ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন প্রথমবারের মতো খেলতে নামা সিকুগে প্রসন্ন।

বিশাল সংগ্রহ গড়া ঢাকা শেষ পর্যন্ত পায় অনায়াস জয়। বড় লক্ষ্য তাড়ায় কখনও জেতার মতো পরিস্থিতিই তৈরি করতে পারেনি রংপুর।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০ ওভারে ১৭০/৬ (মারুফ ১০, সাঙ্গাকারা ২৯, নাসির ৩৮, বোপারা ০, সাকিব ১০, মোসাদ্দেক ৪৮*, ব্রাভো ১৩, প্রসন্ন ১৩*; সোহাগ ২/৩১, রুবেল ০/৩১, গ্লিসন ০/৯, সানি ১/৩১, ডসন ১/১৮, আফ্রিদি ২/২২, নাঈম ০/৭, মুক্তার ০/১৬)

রংপুর রাইডার্স: ১৯.২ ওভারে ৯২ (শাহজাদ ১১, সৌম্য ২, মিঠুন ০, ডসন ১৬, নাঈম ২৬, আফ্রিদি ৬, সোহাগ ৮, মুক্তার ১০, সানি ২, রুবেল ২, ব্রাভো ২/২১, নাসির ১/২, সাকিব ২/১৭, সানজামুল ১/১৮, প্রসন্ন ১/১৭, শহীদ ১/৮, বোপারা ০/৩, আলাউদ্দিন ১/২)

ফল: ঢাকা ডায়নামাইটস ৭৮ রানে জয়ী