ব্যাটিং ধসের পর বোলারদের লড়াই

দুপুর তিনটাতেই জ্বলে উঠেছে ফ্লাড লাইট। লাঞ্চের আগের রোদ ঝলমলে আবহাওয়া বদলে তখন কালো মেঘে ঢাকা আকাশ। গুমোট প্রকৃতি। তার চেয়েও বেশি গুমোট বাংলাদেশের ড্রেসিং রুম। প্রকৃতির চেয়ে বেশি বদলে গেল বাংলাদেশের ইনিংসের রঙ!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2016, 10:27 AM
Updated : 23 Sept 2018, 08:41 PM

তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হকের জুটির সময় ছিল বাংলাদেশের প্রবল দাপট। রান উঠছিল ওয়ানডের গতিতে। বল ফেলার জায়গা পাচ্ছিলেন না ইংলিশ স্পিনাররা। দারুণ এক সেঞ্চুরির পর তামিমের বিদায় থেকেই ভেল্কিবাজির মত পাল্টে গেল সব।

লাঞ্চের ঘণ্টাখানেক পরও বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৭১। সেখান থেকে চা বিরতির একটু পর স্বাগতিকরা গুটিয়ে গেল ২২০ রানে। ৪৯ রানেই নেই ৯ উইকেট!

হতচকিত দলের আরও বিবর্ণ হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক ছিল না। তবে সেটি হয়নি। চট্টগ্রাম টেস্টের মত বোলিংয়ে এবারও লড়াই করছে বোলাররা। বৃষ্টির জন্য যখন দিনের খেলা শেষ হয়েছে ১১.৩ ওভার আগেই, ইংল্যান্ডের রান তখন ৩ উইকেটে ৫০।

ব্যাটিংয়ের আক্ষেপ তবু যাবার নয়। সেঞ্চুরির পর ড্রেসিং রুমে বসে সতীর্থদের আসা যাওয়ার মিছিল দেখা অবশ্য নতুন অভিজ্ঞতা নয় তামিমের জন্য। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তামিমের সবশেষ সেঞ্চুরির পরও ছিল একই দৃশ্যায়ন। ২০১০ সালে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে দারুণ এক সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম। এক পর্যায়ে বাংলাদেশের রান ছিল ২ উইকেটে ১৬৯। ১০৮ করে তামিমের বিদায়ের পরই ধস। শেষ ৮ উইকেট পড়েছিল ৪৬ রানে!

মিরপুরের এই উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো থাকার কথা প্রথম দুদিন। বাংলাদেশ হারাল তাই বড় একটা সুযোগ।

অথচ বাংলাদেশের সকাল ছিল অসাধারণ। এক পেসার ও চার স্পিনার নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশ জিতে কাঙ্ক্ষিত টস। ব্যাটিংয়ে নেমে বাজে এক বলে উইকেট উপহার দিয়ে ইমরুল কায়েস (১) ফিরেছেন দ্রুতই। তবে তামিম ও মুমিনুলের ব্যাটে ছিল দারুণ প্রতাপ।

শুরুতে তামিম খেলেছেন দেখেশুনে। রানের খাতা খুলতে লেগেছে ২০ বল। সময়ের সঙ্গে থিতু হয়েছেন উইকেটে, খেলেছেন দারুণ সব শট। আরেক পাশে মুমিনুলও শুরু থেকেই ছিলেন স্বচ্ছন্দ।

লাঞ্চের আগেই দুজনের জুটিতে আসে শতরান। লাঞ্চের পরও দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলেন দুজন। মইন আলিকে টানা দুই বলে ইনসাইড আউটে চার মেরে তামিম সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১৩৯ বলে। টেস্ট ক্রিকেটে এটি তামিমের অষ্টম সেঞ্চুরি, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয়।

মুমিনুল অর্ধশতক ছুঁয়ে ফেলেছেন এর আগেই। দুজনের জুটিতে দল এগিয়ে যাচ্ছিল বড় সংগ্রহের দিকে। ইংলিশ স্পিনারদের দারুণ খেলেছেন দুজন। থিতুই হতে দেননি তাদের।

সব বদলে গেল তামিমের বিদায়ে। মইন আলির বলে শট না খেলে এলবিডব্লিউ হলেন ১০৪ রানে। ভাঙল ১৭০ রানের জুটি।

বড় জুটির ক্ষেত্রে প্রায়ই যেটা হয়, সঙ্গীকে হারিয়ে বিদায় নিলেন আরেকজনও। সেই মইনেরই ভেতরে ঢোকা বলে আলতো খেলতে গিয়ে বোল্ড মুমিনুল (৬৬)।

উইকেট পতনের স্রোত এরপর প্রবল হয়েছে আরও। এক প্রান্তে মইনের স্পিন, আরেক প্রান্তে আবারও বেন স্টোকসের রিভার্স সুইং। বাংলাদেশের ইনিংস দিকহারা।

চা বিরতির আগে মইনের স্পেল ছিল ১০-৩-২৪-৩, স্টোকসের ৬-২-৭-২!

সেই ধারা চললো চা বিরতির পরও। এক প্রান্ত আগলে ছিলেন সাকিব আল হাসান। লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে রান কিছুটা বাড়াতে ব্যর্থ তিনিও। সম্ভাব্য অট্টালিকা হঠাৎ ধ্বংসস্তূপ হয়ে যাওয়ায় ইংলিশদের দারুণ বোলিংয়ের চেয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দায়টাই বেশি।

শেষ উইকেটটি নিয়ে মইন আলি পূর্ণ করেছেন ৫ উইকেটে। ৩২ টেস্টে মাত্র দ্বিতীয়বার। আগের টেস্টে উইকেটশূন্য ক্রিস ওকস পেয়েছেন তিনটি।

ঘন্টা দেড়েক আগের তামিম-মুমিনুল জুটিকে তখন মনে হচ্ছিল কোন সুদূরের ব্যাপার!

বল হাতেও বাংলাদেশের সাফল্য মিলেছে দ্রতই। যথারীতি দুপাশে স্পিন দিয়ে শুরু করেছে বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাকিব ফিরিয়েছেন বেন ডাকেটকে।

প্রথম ওপেনার হিসেবে ১০ হাজার টেস্ট রানের মাইফলক ছুঁয়েই বিদায় নিয়েছেন কুক। আবার ইংলিশ অধিনায়ককে ফিরিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তরুণ অফ স্পিনার পরে তুলে নিয়েছেন গ্যারি ব্যালান্সকেও।

দিনের শেষটা তাতে হয়েছে একটু স্বস্তিতে। তবে ব্যাটিং ধসের যন্ত্রণার জ্বালা তাতে খুব একটা কমার কথা না!

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৬৩.৫ ওভারে ২২০ (তামিম ১০৪, ইমরুল ১, মুমিনুল ৬৬, মাহমুদউল্লাহ ১৩, সাকিব ১০, মুশফিক ৪, সাব্বির ০, শুভাগত ৬, মিরাজ ১, তাইজুল ৫*, কামরুল ০; ওকস ৩/৩০, ফিন ০/৩০, মইন ৫/৫৭, আনসারি ০/৩৬, স্টোকস ২/১৩, রশিদ ০/৪৪)।

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১২.৩ ওভারে ৫০/৩ (কুক ১৪, ডাকেট ৭, রুট ১৫*, ব্যালান্স ৯, মইন ২*; মিরাজ ২/২৬, সাকিব ১/২১)।