‘একশ টেস্টও খেলতে পারে মুশফিক’

সহকারী কোচ রিচার্ড হ্যালসলের সঙ্গে মাঠের মাঝে উইকেটকিপিং অনুশীলন করছিলেন মুশফিকুর রহিম। মাঠের বাইরে থেকে দেখছিলেন হাবিবুল বাশার। মুশফিকের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক, এখনকার নির্বাচক। যখন জানতে পারলেন ৫০ টেস্ট হতে যাচ্ছে মুশফিকের, উচ্ছ্বসিত হলেন হাবিবুল, ‘তাই নাকি, দারুণ ব্যপার!’

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2016, 01:33 PM
Updated : 27 Oct 2016, 10:46 AM

এই ‘দারুণ’ ব্যাপারটির স্বাদ বাংলাদেশে সবার আগে পেয়েছেন হাবিবুল। সাবেক অধিনায়ক পঞ্চাশতম টেস্ট খেলেছেন ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। পরের বছরের জুলাইয়ে টেস্ট খেলার অর্ধশতকের স্বাদ পেয়েছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। এবার তাদের সঙ্গী হওয়ার অপেক্ষায় মুশফিক।

৫০ টেস্ট খেলতে পারা একজন ক্রিকেটারের জন্য কতটা বড় অর্জন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শোনালেন হাবিবুল।

“অনেক বড় মাইলফলক অবশ্যই। যে কোনো ক্রিকেটারের জন্য টেস্ট ম্যাচই সবার আগে। টেস্টের অর্জনগুলোই সবচেয়ে দামি। ক্যারিয়ার শেষে আপনাকে টেস্টের পারফরম্যান্স দিয়েই সবার আগে মূল্যায়ন করা হবে। ৫০টি টেস্ট খেলা কিন্তু অনেক কঠিন। কারণ টেস্ট ক্রিকেট যে কোনো ক্রিকেটারের সত্যিকারের টেস্ট। এখানে টিকে থাকা কঠিন।”

“বাংলাদেশের বাস্তবতায় তো ৫০ টেস্ট আরও বড় ব্যাপার। কারণ আমরা খুব বেশি খেলার সুযোগ পাই না। অনেক সময় লাগে ৫০ টেস্ট খেলতে।”

পঞ্চাশতম টেস্টই হয়ে থেকেছে হাবিবুলের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। আশরাফুলের ক্যারিয়ার থমকে আছে ৬১ টেস্টে। হাবিবুলের বিশ্বাস, বাংলাদেশের হয়ে মুশফিক খেলে ফেলতে পারে একশ টেস্ট ম্যাচও!

“আশা করি, আমরা অনেক বেশি টেস্ট খেলব সামনে। মুশফিক ১০০ টেস্টও খেলতে পারে। ওর ফিটনেস, সামর্থ্য, ওর প্রতিজ্ঞা, নিবেদন…সব কিছুই বলে, যদি আমাদের টেস্ট সংখ্যা একটু বাড়ে, তাহলে ১০০ টেস্ট খেলতে পারে মুশফিক।”

মুশফিকের এই পথচলার শুরুটা খুব কাছ থেকেই দেখেছেন হাবিবুল। তার নেতৃত্বেই ২০০৫ সালে মুশফিকের টেস্ট অভিষেক। ১৭ বছর বয়সে মুশফিকের অভিষেকের সেই সময়টা স্পষ্টই মনে পড়ে হাবিবুলের।

“ছোট্ট একটা ছেলে, খুব লাজুক। ছেলেরা সবাই অনেক মজা করত ওর সঙ্গে। তবে ওর প্রতিভা আর সামর্থ্যকে শ্রদ্ধা-সমীহ করত সবাই।”

“টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করেছিল ব্যাটসম্যান হিসেবে। টেকনিক্যালি মুশি আমাদের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন শুরু থেকেই, সেই ১৭ বছর বয়সেই। টেকনিক্যালি সাউন্ড ছিল বলেই ওই বয়সে ইংল্যান্ডের মত জায়গায় টেস্ট অভিষেক হয়েছিল।”

হাবিবুলসহ অনেকে তখনই বুঝে গিয়েছিলেন, অনেক দূর যাবে ছেলেটি।

“ওকে তখন দেখেই মনে হয়েছে অনেক বছর খেলবে, অনেক রান করবে। টেকনিক্যালি এত সাউন্ড ব্যাটসম্যান তখনও বাংলাদেশ খুব বেশি পায়নি। অনেক সময় কিছু মনে হলেও সেটা ভবিষ্যতে সবসময় সত্যি হয় না। ওর ক্ষেত্রে হয়েছে। তবে আরও ভালো হতে পারত।”

শেষ কথাটায় একটু আক্ষেপের ছোঁয়া। শুধু শুরুর সময় নয়, মুশফিককে পরেও কাছ থেকে দেখেছেন হাবিবুল। ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে মুশফিকের ওয়ানডে ক্যারিয়ার নতুন গতি পায় তার নেতৃত্বেই। সে বছরের জুলাইয়ে মুশফিকের টেস্ট ক্যারিয়ার পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সময়ও দলে ছিলেন হাবিবুল। এখন নির্বাচক হিসেবে দেখছেন মুশফিকের নেতৃত্ব, এগিয়ে চলা।

মুশফিককে খুব ভালো করে চেনেন বলেই জানেন, টেস্ট রেকর্ড হতে পারত আরও উজ্জ্বল।

ব্যাটিং দিয়েই দলে এসেছিল, ওর ব্যাটিংটা নিয়েই বলি। ওর যে সামর্থ্য, যে ওয়ার্ক এথিক্স, আমার মনে হয়, টেস্টে ওর আরও ভালো করা উচিত ছিল। একটা ব্যাপার হলো, আমরা নিয়মিত টেস্ট খেলি না। এটা ওর পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলেছে। আমি নিশ্চিত, এখন যদি আমরা নিয়মিত খেলি সামনে, ওর ক্যারিয়ার আরও ভালো হবে।”

“সত্যি বলতে, টেস্টে ৩২ গড় ওর মতো সামর্থ্যের একজন ব্যাটসম্যানের পাশে মানায় না। তবে এখনও সুযোগ আছে। যদি আমরা নিয়মিত বেশি টেস্ট পাই, আমি বিশ্বাস করি, ওর গড় চল্লিশের ওপরে, এমনকি পঞ্চাশের কাছে থাকতে পারে। সেই সামর্থ্য ওর আছে।”

মুশফিকের নিজের প্রত্যাশা হয়ত এমনটিই। পঞ্চাশতম টেস্ট থেকে নতুন করে শুরু করতে পারেন, পঞ্চাশ গড়কে ধাওয়া।