স্বপ্ন পূরণ করেই থামতে চান না মোসাদ্দেক

তামিম ইকবাল তরুণ সতীর্থ মোসাদ্দেক হোসেনের ক্রিকেটে দেখেন অসাধারণ পরিপক্কতা। টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা এই তরুণ অফ স্পিন অলরাউন্ডারের চিন্তা-ভাবনাও পরিণত। জানেন, টেস্ট ক্যাপ পেয়ে গেলেই সব অর্জন হয়ে যাবে না। নিজেকে প্রমাণ করেই দলে জায়গা ধরে রাখতে হবে।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2016, 12:17 PM
Updated : 25 Oct 2016, 12:17 PM

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের দলে ডাক পেয়ে ভীষণ খুশি মোসাদ্দেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার চাওযা দেশের হয়ে অনেক লম্বা একটা ক্যারিয়ার।

গত জানুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় মোসাদ্দেকের। ২০ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারের ওয়ানডে অভিষেক হয় গত সেপ্টেম্বরে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে। দেশের হয়ে সব মিলিয়ে ৬ ম্যাচ খেলে জাতীয় দল ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পর্কে খানিকটা ধারণা হয়েছে মোসাদ্দেকের।

“টেস্টে খেললাম আর সব পেয়ে গেলাম, এভাবে ভাবি না আমি। জানি, জাতীয় দলে টিকে থাকতে হলে ভালো খেলতেই হবে। সব ক্রিকেটারের মতো আমারও স্বপ্ন টেস্ট খেলার। তবে এই স্বপ্ন পূরণ করেই আমি থেমে থাকতে চাই না। দেশের হয়ে অনেক লম্বা একটা ক্যারিয়ার চাই আমি।”

“এক সময়ে ভাবতাম, জাতীয় দলে কবে খেলব? এখন বুঝতে পেরেছি জাতীয় দলে খেলার চেয়ে নিজের জায়গা ধরে রাখা অনেক বেশি কঠিন। আমি এক ম্যাচ খেলেই বাদ পড়তে চাই না। আমার দিক থেকে কোনো ত্রুটি থাকবে না।”

মোসাদ্দেক টেস্ট দলের দরজায় কড়া নাড়ছিলেন বেশ কিছুদিন ধরেই। সীমিত ওভারের দুই সংস্করণে এরই মধ্যে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা এই তরুণ নজর কেড়েছেন বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটের পারফরম্যান্স দিয়েই। গত মৌসুমে জাতীয় ক্রিকেট লিগে দুই ম্যাচে দুটি শতক, একটি অর্ধশতকসহ ১৪১ গড়ে ৪২৩ রান করার পর ভেবেছিলেন এবার বুঝি টেস্ট দলে ডাক এল।

“গত বছর যখন জাতীয় ক্রিকেট লিগ শেষ করি, তখন ভেবেছিলাম আমার টেস্ট অভিষেকটাই সবার আগে হবে। তবে অভিষেক হয়েছে টি-টোয়েন্টি দিয়ে, এরপর আমি চাচ্ছিলাম যেন ওয়ানডে অভিষেক হয়, সেটা হয়েছে। এখন টেস্ট অভিষেক হবে কিনা জানি না, তবে স্কোয়াডে আছি। এখন দেখা যাক ম্যানেজমেন্ট কি ভাবছে।”

বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের ভরসা হয়ে উঠার সব উপকরণই আছে মোসাদ্দেকের মধ্যে। প্রথম শ্রেণির রেকর্ডে রয়েছে তাকে নিয়ে বড় কিছু ভাবার ইঙ্গিত।

জাতীয় ক্রিকেট লিগ, বিসিএলে রীতিমত রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন ২০ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। রেকর্ড ৩টি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন, সর্বোচ্চ ২৮২। ১৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৭ সেঞ্চুরিতে রান প্রায় ২ হাজার, গড় ৭০.৮৯! অফ স্পিনে উইকেট আছে ১৬টি।

“ব্যাটসম্যান হিসেবে লংগার ভার্সনে একটু বেশি সময় পাওয়া যায়। সেট হওয়া যায় তারপর রান করা যায়। আমি এ জায়গাটা অনেক বেশি উপভোগ করি। তবে আমি অনুভব করি, ক্রিকেটার হিসেবে সব ফরম্যাটেই খেলার মতো যোগ্য হয়ে উঠতে হয়। সব ফরম্যাট উপভোগ না করলে ভালো খেলা সম্ভব নয়।”

মোসাদ্দেকের ফেভারিট ক্রিকেটার ভারতের বিরাট কোহলি। তিন সংস্করণেই এই ক্রিকেটারের ব্যাটিং অনুসরণ করেন তিনি। টেস্টে হাশিম আমলার ব্যাটিং দেখার সুযোগ হাতছাড়া করেন না। নিজের বাটিংয়ের সঙ্গে মিল খুঁজে পান বাংলাদেশের আরেক প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমানের। চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষেকে তার দারুণ পারফরম্যান্স ভালো করার স্বপ্ন দেখাচ্ছে মোসাদ্দেককেও।  

“আমি মনে করি, ব্যাটিং স্টাইল, স্ট্রাইক রেট চিন্তা করতে গেলে আমরা মোটামুটি এক রকমই। এর আগে জাতীয় লিগে ভালো খেলেছি, চতুর্থ দিনে কিভাবে খেলতে হয় মোটামুটি ধারণা আছে একটা। উনি যদি কম চারদিনের ম্যাচ খেলে এতো ভালো খেলতে পারেন, আমি কেন পারবো না?”

“গত প্রিমিয়ার লিগ খেলার পর আমি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি, জাতীয় দলে খেললে আমাকে নিচে ব্যাটিং করতে হবে। আমি একদম প্রস্তুত। আমি যে কোনো পজিশনে ব্যাটিং করার জন্য প্রস্তুত আছি। সেটা উপরে হোক কী নিচে হোক। আমি এসব নিয়ে ভাবছি না, আমার ব্যাটিংয়ে মনোনিবেশ করছি।”

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের মাটিতে অভিষেক- মোসাদ্দেকের কাছে টেস্টে এরচেয়ে ভালো শুরু আর কিছুতে হতে পারে না। সেই উচ্ছ্বাস-রোমাঞ্চকে ছাপিয়ে নিজের লক্ষ্যটাও ঠিক করে নিয়েছেন তিনি।

“তেমন বড় কোনো লক্ষ্য নেই, লক্ষ্য নিজের খেলাটা খেলা। এটা টেস্ট ম্যাচ, বলতে পারবো না ম্যাচ জিতিয়ে দিব বা এমন কিছু। আমি যেমন ব্যাটিং করি তেমন করা, লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করার চেষ্টা করব। যদি সাথে পার্টনাররা থাকে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করব।”

“প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলার অভিজ্ঞতা আমাকে অনেক সাহায্য করবে। যেভাবে সেশন বাই সেশন খেলেছি সেভাবে খেলার চেষ্টা করবো। চেষ্টা করবো সেট হয়ে নিজের স্বাভাবিক ক্রিকেটটা খেলার।”