স্বপ্নের সারথি হয়ে টিকে সাব্বির

প্রতিদিনের মতোই পুর্ব দিকে সূর্য উঠবে সোমবার ভোরে, সকালটি তবু হবে একটু আলাদা। ক্রিকেটের প্রতিটি দিনই শুরু হয় আশা নিয়ে, এই আশা তবু একটু অন্যরকম; ইংল্যান্ডের মত পরাশক্তিকে হারানোর বাস্তব সম্ভাবনা। এমন হাতছানি নিয়ে কটা দিন শুরু হয়েছে টেস্ট ক্রিকেটের বাংলাদেশের!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2016, 12:13 PM
Updated : 23 Oct 2016, 03:32 PM

কাজটা এখনও কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। নয় খুব দূরও। শেষ দিনে চাই ৩৩ রান, হাতে ২ উইকেট। তবে ভরসা হয়ে আছেন একজন।

সাব্বিরের সঙ্গে মুশফিকুর রহিমের অসাধারণ এক জুটিতেই জয়ের কাছে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। গ্যারেথ ব্যাটির অসাধারণ এক বলে অধিনায়কের বিদায়ে ফিকে হয়েছিল স্বপ্ন। দিন শেষে সেই স্বপ্ন টিকে রইল সাব্বিরের ব্যাটে।

সেই সাব্বির, যার এটি অভিষেক টেস্ট। সেই সাব্বির, এক সময় যার পরিচয় ছিল টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট। টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্নের মধ্যেই যিনি মাথায় তুলেছেন টেস্ট ক্যাপ।

সেই সাব্বিরই অসাধারণ ব্যাট করে টিকে আছেন আশা হয়ে। লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে চেষ্টা করছেন দলে জয়ের তরী তীরে ভেড়ানোর। টানটান উত্তেজনার টেস্ট চতুর্থ দিন শেষে দাঁড়িয়ে রোমাঞ্চকর মোড়ে।

সকালে ইংল্যান্ডের শেষ দুই উইকেট দ্রুতই তুলে নেয় বাংলাদেশ। লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮৬। চতুর্থ ইনিংসে এই রান তাড়া যে কোনো উইকেটেই কঠিন। এ রকম ব্যাটিং দুরূহ উইকেটে সেটি ছিল প্রায় অসম্ভবের কাছাকাছি। বাংলাদেশ সম্ভাবনা জাগিয়েছে সেটিকেই সম্ভব করে তোলার।

হারার আগে হার না মানার ইঙ্গিত ছিল প্রথম জুটিতেই। যদিও মাত্র ৩৫ রানের জুটি, এই উইকেটে ওই শুরুটাই গড়ে দেয় বিশ্বাসের ভিত।

প্রথম ইনিংসের মতোই তামিম ছিলেন সতর্ক, ইমরুল সাবলীল। কঠিন উইকেটে চাপের মধ্যে ইমরুলের দুর্দান্ত ব্যাটিং বুঝিয়ে দিয়েছে, কেন তিনি এখন দেশের অন্যতম সেরা। পেস-স্পিন সামলেছেন স্বচ্ছন্দে। সুইপ খেলেছেন, রিভার্স সুইপ করেছেন।

আউটও হলেন সুইপ করতে গিয়েই। আদিল রশিদের বল তার গ্লাভস ছুঁয়ে জমা পড়ল জো রুটের হাতে (৪৩)। দারুণ টার্ন ও বাউন্সে এর আগেই মইন আলি ফিরিয়েছেন তামিম ইকবালকে (৯)।

মুমিনুল হক ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাট আশা জাগিয়েছে। দুজনই ফিরেছেন থিতু হয়ে, গ্যারেথ ব্যাটির বলে এলবিডব্লিউ দুজনই। সাকিব খেলছিলেন স্বচ্ছন্দে, কিন্তু পারেননি প্রথম ইনিংসের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে (২৪)।

বাংলাদেশ তখন ৫ উইকেটে ১৪০। জয় তখন দূরের বাতিঘর! মুশফিক ও সাব্বিরের ব্যাটে ধীরে ধীর কাছে আসছিল সেই আলোর রেখা।

বেন স্টোকস আর জনি বেয়ারস্টোর জুটি যেভাবে এগিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডকে, মুশফিক আর সাব্বিরের ব্যাটেও বাংলাদেশ পাচ্ছিল একই ভরসা। সাব্বিরের শুরুটা ছিল সহজাত আক্রমণাত্মক, মুশফিকের ব্যাটে ছিল নির্ভরতা।

জুটি জমে যাওয়ার পর খেলার ধরনে আসে পরিবর্তন। চা-বিরতির পর দুজনই খেলেছেন দেখেশুনে। প্রথম ২০ বলে সাব্বির করেছিলেন ২৩ রান, পরের ৪৫ বলে ১৫। জুটির রান এগিয়ে যাচ্ছিল শতরানের দিকে। তখনই মুশফিকের বিদায়।

রাউন্ড দা উইকেটে করা ব্যাটির বলটি লেংথ থেকে লাফ দিল আচমকা। মুশফিকের গ্লাভসে ছোবল দিয়ে বল আশ্রয় নিল শর্ট লেগের হাতে। গ্যালারির পিনপতন নিরবতা ভেদ করে শোনা গেল ইংলিশদের আনন্দ চিৎকার। ড্রেসিং রুমের মুশফিকের হাঁটা যেন অসার শরীরটাকে কোনো রকমে টেনে নেওয়া।

৮৭ রানের সেই জুটি ভাঙার পর দ্রুতই নেই আরও দুই উইকেট। অভিষেক ম্যাচেই এমন উইকেটে প্রচণ্ড চপের মাঝে মেহেদী হাসান মিরাজের কাছে বড় কিছুর দাবিটাও হয়ত কঠিন। অভাবনীয় কিছু করতে পারেননি তিনি। পারেননি আরেক অভিষিক্ত কামরুল ইসলাম রাব্বিও।

তবে দারুণভাবে পারলেন তাইজুল। সাব্বিরকে শুধু সঙ্গই দেননি, শেষ বিকেলে করেছেন কিছু মহামূল্যবান রানও।

সাব্বিরের ব্যাটিং ছিল মুগ্ধতা জাগানিয়া। মুশফিকের বিদায়ের পর খেলেছেন দায়িত্ব নিয়ে। প্রথম ইনিংসের মতো এদিনও বল একবার লেগেছে তার হেলমেটে। শরীরটাও সু্স্থ ছিল না পুরোপুরি। ব্যাটিংয়ে সে সবের প্রভাব পড়েছে সামান্যই। অপরাজিত আছেন ৯৩ বলে ৫৯ রানে।

অসাধারণ ইনিংসটি অমরত্ব পেতে পারে দলকে জেতালে। তাইজুল তো ব্যাট হাতেই একবার দলকে জিতিয়েছেন শেষ দিকে রান করে, দুই বছর আগের অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

হারের শঙ্কা আছে, স্বপ্নটাও আছে সমানতালে। পঞ্চম দিনের আগে এই বাস্তবতাও তো এই টেস্টে বাংলাদেশের বড় প্রাপ্তি!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৯৩

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৪৮

ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ২৪০

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৮৬) ৭৮ ওভারে ২৫৩/৮ (তামিম ৯, ইমরুল ৪৩, মুমিনুল ২৭, মাহমুদউল্লাহ ১৭, সাকিব ২৪, মুশফিক ৩৯, সাব্বির ৫৯*, মিরাজ ১, রাব্বি ০, তাইজুল ১১* ; ব্যাটি ৩/৬৫, মইন ২/৬০, ওকস ০/১০, রশিদ ১/৫৫, ব্রড ২/২৬, স্টোকস ০/১৫)।