তিনশ’ রানের লিডের পথে ইংল্যান্ড

৫ উইকেট নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা দেখিয়েছেন সাকিব আল হাসান। তবে প্রথম ইনিংসে ৪৫ রানে এগিয়ে থাকা আর বেন স্টোকস-জনি বেয়ারস্টোর শতরানের জুটির ওপর ভর করে চট্টগ্রাম টেস্টে তিনশ’ রানের লিডের পথে রয়েছে ইংল্যান্ড।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2016, 04:12 AM
Updated : 22 Oct 2016, 02:38 PM

তৃতীয় দিনের খেলা শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ২২৮ রান। অতিথিরা এগিয়ে ২৭৩ রানে। ক্রিস ওকস ১১ ও স্টুয়ার্ট ব্রড ১০ রানে চতুর্থ দিন ব্যাট করতে নামবেন। ৭৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব।

লক্ষ্য তাড়া করে এ পর্যন্ত দুটি টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় সর্বোচ্চ। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জেতে ১০১ রানের লক্ষ্য তাড়া করে।

টেস্টে প্রথম কোনো আম্পায়ার হিসেবে কুমার ধর্মসেনার ছয়টি সিদ্ধান্ত রিভিউয়ে পাল্টাল। এই প্রথম কোনো ম্যাচে সব মিলিয়ে নয়টি সিদ্ধান্ত রিভিউয়ে বদল হল।

রিভিউ নিয়ে আদিল রশিদকে ফেরায় বাংলাদেশ। বল প্যাডে আঘাত হানলে আউট দেননি আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা। রিভিউয়ে পাল্টায় সিদ্ধান্ত। ইংলিশ অলরাউন্ডারকে ফিরিয়ে নিজের পঞ্চম উইকেট নেন সাকিব আল হাসান। ১৮ বলে ৯ রান করে রশিদ ফিরে যাওয়ার সময় ইংল্যান্ডের রান ২১৩/৮। লিড ২৫৮ রান।

এর আগে কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে ক্রিস ওকসের চারে আড়াইশ’ স্পর্শ করে ইংল্যান্ডের লিড।

সাকিব আল হাসানের বলে আদিল রশিদের চারে দ্বিতীয় ইনিংসে দুইশ’ পার হয় ইংল্যান্ডের সংগ্রহ। ৬৫ ওভারে অতিথিদের স্কোর ২০১/৭।

দারুণ এক ইনিংস খেলা বেন স্টোকসকে ফেরান সাকিব আল হাসান। সোজা বলে সুইপ করতে গিয়ে পারেননি ইংলিশ অলরাউন্ডার। কিছুটা সময় নিয়ে আউটের সিদ্ধান্ত দেন কুমার ধর্মসেনা। ক্রিস ওকসের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলোচনা করে রিভিউ নেন স্টোকস। তবে তার আগেই রিভিউ নেওয়ার নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাওয়ার ইশারা দেন ধর্মসেনা। ১৫১ বলে ৮৫ রান করা স্টোকসের বিদায়ের সময় ইংল্যান্ডের স্কোর ১৯৭/৭। 

জনি বেয়ারস্টোকে বোল্ড করে নিজের প্রথম টেস্ট উইকেট নেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। ৯৫ বলে ৪৭ রান করে বেয়ারস্টো ফিরে যাওয়ার সময় ইংল্যান্ডের স্কোর ১৮৯/৬।

বেন স্টোকস ও জনি বেয়ারস্টোর দারুণ ব্যাটিংয়ে দুইশ’ ছাড়ায় ইংল্যান্ডের লিড। ষষ্ঠ উইকেটে শতরানের জুটি গড়েন এই দুই জনে। ম্যাচে এটাই শতরানের জুটি।

তাইজুল ইসলামের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে অর্ধশতকে পৌঁছান বেন স্টোকস। তার দৃঢ়তাভরা ব্যাটিংয়ে দুইশ’ রানের লিড নেওয়ার পথে ইংল্যান্ড।

চা বিরতিতে যাওয়ার সময় ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১০৮ রান। দ্বিতীয় সেশনে ৩১.৪ ওভারে ৮০ রান যোগ করে অতিথিরা। প্রথম ইনিংসে ৪৫ রানের লিড নেওয়ায় অ্যালেস্টার কুকের দল এগিয়ে ১৫৩ রানে।

দ্রুত পাঁচ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডের সংগ্রহ একশ’ পার হয় বেন স্টোকস ও জনি বেয়ারস্টোর ব্যাটে। ৪২তম ওভারে কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে চার হাকিয়ে দলের রান তিন অঙ্কে দিয়ে যান স্টোকস।

সহজ ক্যাচ দিয়ে একবার বেঁচে যাওয়া মইন আলি ফিরেন সাকিব আল হাসানের বলেই। সুইপ করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেলেন মইন। তার গ্লাভস ছুঁয়ে আসা বল ঝাঁপিয়ে গ্লাভসে জমান মুশফিকুর রহিম। ৫০ বলে ১৪ রান করে মইন ফিরে যাওয়ার সময় ইংল্যান্ডের স্কোর ৬২/৫।

বোলিংয়ে এসেই আঘাত হানেন তাইজুল ইসলাম। লেগ স্লিপে এই বাঁহাতি স্পিনারের বলে গ্যারি ব্যালান্সের (২৫ বলে ৯) ক্যাচ তালুবন্দি করেন ইমরুল কায়েস। ব্যালান্স ফিরে যাওয়ার সময় ১৯তম ওভারে ইংল্যান্ডের স্কোর ৪৬/৪।

সাকিব আল হাসানের বলে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান মইন আলি। শর্ট লেগে থাকা মুমিনুল হক শুরুতে হাতে জমাতে পারেননি, বল তার হেলমেটের গ্রিল স্পর্শ করে।এরপর তালুবন্দি করলেও তখন আর সেটি ক্যাচ হিসেবে গণ্য নয়। নিয়মানুযায়ী ফিল্ডারের সুরক্ষার জন্য থাকা কোনো কিছুতে স্পর্শ করার পর বল ‘ডেড’ হয় যায়। সে সময় ৬ রানে ব্যাট করছিলেন মইন।     

লাঞ্চে যাওয়ার সময় ইংল্যান্ডের স্কোর ২৮/৩। এক সময়ে দলটির সংগ্রহ ছিল বিনা উইকেটে ২৬ রান। ২ রান তুলতে টপ অর্ডারের ৩ ব্যাটসম্যানকে হারায় অতিথিরা।  

তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৫৫ রান তুলতে পড়েছে ৮ উইকেট। 

লাঞ্চের আগে শেষ ওভারে বেন ডাকেটকে বিদায় করেন সাকিব আল হাসান। ইংলিশ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের গ্লাভস ছুয়ে আসা সহজ ক্যাচ শর্ট লেগে গ্লাভসবন্দি করেন মুমিনুল হক। ডাকেট ফেরার আগে ৩৪ বলে করেন ১৫ রান।

এর আগে টানা দুই ওভারে উইকেট পায় বাংলাদেশ। সোজা বলে জো রুটকে এলবিব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সাকিব আল হাসান। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি ইংলিশ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের। ৪ বলে ১ রান করা রুট টেস্টে সাকিবের দেড়শতম উইকেট।

ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে অ্যালেস্টার কুককে ফিরিয়ে প্রথম আঘাত হানেন মেহেদী হাসান মিরাজ। স্লিপে মাহমুদউল্লাহর হাতে ধরা পড়েন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক (২৩ বলে ১২)। নবম ওভারে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ফেরার সময় অতিথিদের স্কোর ২৬/১।

দুই ইনিংস মিলিয়ে ৪৯ বল খেলেন কুক, এশিয়ায় খেলা ২২ টেস্টের মধ্যে যা তার তৃতীয় সর্বনিম্ন।  

তৃতীয় দিন এক ঘণ্টার একটু বেশি সময়ে ১২ ওভারে ২৭ রান যোগ করতে শেষ ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। লিডে চোখ রাখা স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৪৫ রানে পিছিয়ে থেকে। দুই দিন মিলিয়ে ১০ ওভারের দারুণ এক স্পেলে ১০ রানে ৪ উইকেট নেন অলরাউন্ডার বেন স্টোকস।

এক ওভারে সাব্বির রহমান ও কামরুল ইসলাম রাব্বিকে ফিরিয়ে ২৪৮ রানে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দেন বেন স্টোকস। স্লিপে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় সাব্বিরের প্রথম টেস্ট ইনিংস। ৩২ বলে ১৯ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। সেই ওভারেই শূন্য রানে বোল্ড হন আরেক অভিষিক্ত ক্রিকেটার রাব্বি।

অভিষিক্ত মেহেদী হাসান মিরাজও ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারেননি। বেন স্টোকসের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে করেন ৪ বলে ১ রান। তরুণ এই অলরাউন্ডারের ফেরার সময় ২৩৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ।

এর আগে বোলিংয়ে এসেই আঘাত হানেন লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। চড়াও হতে গিয়ে স্টুয়ার্ট ব্রডকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন নাইটওয়াচম্যান শফিউল ইসলাম (২৯ বলে ২)। তিনি ফেরার সময় ৮১তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ২৩৮/৭।

লিড নেওয়ার জন্য যার দিকে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ, সেই সাকিব আল হাসান দলকে হতাশায় ডোবান তৃতীয় দিনের শুরুতেই! মইন আলির করা দিনের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই এগিয়ে এসে চড়াও হতে চেয়েছিলেন, বল ফাঁকি দেয় তাকে। স্টাম্পিংয়ের সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেননি জনি বেয়ারস্টো। ৬২ বলে ৩১ রান করে সাকিব ফিরে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের স্কোর ২২১/৬।

অনভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল সাকিব আল হাসানের কাঁধে। পরিস্থিতির দাবি মেটাতে পারেননি, পাগলামি করে নিজের উইকেট বিলিয়ে আসেন দেশের অন্যতম সেরা এই ক্রিকেটার। উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর অফ স্পিনার মইন আলির স্পিন করে বেরিয়ে যাওয়া বলের কাছাকাছি যেতে পারেননি তিনি। শুরুতেই এমন সুযোগ আসবে হয়তো ভাবতেও পারেননি জনি বেয়ারস্টো।

নিজের ইনিংসে নয়বার এগিয়ে এসে খেলেন সাকিব আল হাসান। তাতে পান সাত রান আর বিলিয়ে দিলে আসেন উইকেট।

বাংলাদেশের নজর ছিল শতরানের লিডের দিকে। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে সহ-অধিনায়ক তামিম ইকবাল জানিয়েছিলেন, যতটা সম্ভব বড় লিড নিতে চান তারা।

শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ৫ উইকেটে ২২১ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। তখন স্বাগতিকরা পিছিয়ে ৭২ রানে। এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৯৩ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড।