কুক ১৩৪*, মুশফিক ৪৯*

‘ক্যাপ্টেন’… সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রশ্নকর্তার সম্বোধন শুনে হাসলেন মুশফিকর রহিম। “অনেক দিন পর শুনলাম যে কেউ ক্যাপ্টেন বলল। ভালোই লাগল”। আক্ষেপ করে হোক বা মজা, বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কের কথাতেই মিশে থাকল বাস্তবতা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2016, 11:37 AM
Updated : 19 Oct 2016, 02:55 PM

প্রায় সাড়ে ১৪ মাস টেস্ট খেলে না বাংলাদেশ, অধিনায়ক পরিচয়টা হয়ত ভুলে যেতে বসছিলেন মুশফিক। অথচ এই সময়টায় ১৬টি টেস্ট খেলেছেন অ্যালেস্টার কুক, মইন আলি, জনি বেয়ারস্টো, স্টুয়ার্ট ব্রড ও জো রুট! টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে দুই দলের অবস্থান, ভাবনা, সংস্কৃতি ও দর্শন, সবই ফুটে উঠছে ছোট্ট এই তথ্যে।

চট্টগ্রাম টেস্টে যখন টস করতে নামবেন, ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার রেকর্ড এককভাবে হয়ে যাবে কুকের। মুশফিকের হয়নি টেস্ট খেলার হাফসেঞ্চুরিও। অথচ টেস্ট ক্যারিয়ারের বয়স মুশফিকেরই বেশি!

২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যখন লর্ডসে টেস্ট অভিষেক মুশফিকের, কুক তখন লিডসে এসেক্সের হয়ে খেলছেন ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে। কদিন আগেই ইংল্যান্ড ‘এ’ দলের হয়ে ঘুরে এসেছেন শ্রীলঙ্কা। উঠতি প্রতিভা হিসেবে জানান দিচ্ছিলেন নিজেকে। জাতীয় দল তবু মনে হচ্ছিল বেশ দূরের পথ। ইংল্যান্ডের ওপেনিংয়ে তখন থিতু মার্কাস ট্রেসকোথিক ও অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস। 

মাইকেল ভনের হাঁটুর চোট আর ট্রেসকোথিকের বিষন্নতার রোগ মিলিয়ে কুকের সুযোগ এলো পরের বছর। ২০০৬ সালের মার্চে ভারতে টেস্ট অভিষেক হলো কুকের, মুশফিকের অভিষেকের ১০ মাস পর। অথচ সেই কুক বৃহস্পতিবার খেলতে নামবেন ১৩৪তম টেস্ট, মুশফিক মাত্র ৪৯তম!

মুশফিকের অভিষেকের পর থেকে এই সময়টায় একশর বেশি টেস্ট খেলেছেন আরও চার জন, ইয়ান বেল (১১৬), জেমস অ্যান্ডারসন (১০৭), কেভিন পিটারসেন (১০৪) ও মাইকেল ক্লার্ক (১০৩)। সব মিলিয়ে মুশফিকের অভিষেক থেকে তার চেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছেন ৫৬ জন ক্রিকেটার। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি মুশফিকই।

চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক বললেন, “আমার পরে অভিষেক কুকের, তারপরও ১৩৪ টেস্ট খেলতে যাচ্ছে। আমি খেলেছি ৪৮ টেস্ট। এতেই বোঝা যাচ্ছে ওরা কতটা খেলে।”

বাংলাদেশ অধিনায়ক কথাটি বলছিলেন হাসিমুখে, কিন্তু চাইলেই পড়ে নেওয়া যায় তার আক্ষেপটা!

প্রসঙ্গটি উঠতে অ্যালেস্টার কুক মনে করিয়ে দিলেন ক্রিকেট জাতি হিসেবে দুই দেশের ভাবনা আর সংস্কৃতির পার্থক্য।

“ক্রিকেট জাতি হিসেবে ইংল্যান্ড বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি টেস্ট খেলে। সেটা অবশ্যই আমাদের অনেক সাহায্য করে।”

এটিই পার্থক্য। টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে দু'দলের ভাবনা পুরো উল্টোমুখী, অথচ মাঠে নামে একই লক্ষ্য নিয়ে, জয়! এই বাস্তবতা পাশে ঠেলেই জয়ের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন মুশফিকরা। নামছেন আবার!