ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথম দিন লাঞ্চের আগ সেঞ্চুরির অসাধারণ কীর্তি প্রায় করেই ফেলেছিলেন মজিদ। লাঞ্চের আগের ওভারে স্ট্রাইক পাননি, ৮৬ বলে ৯২ রানে অপরাজিত থেকে যান লাঞ্চে। ক্র্যাম্প করায় দ্বিতীয় সেশনে ব্যাটিংয়ে নামেননি।
তৃতীয় সেশনে নেমে ৪ বলের মধ্যে সেঞ্চুরিতে পৌঁছান মজিদ। স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৯৫ বলে ১৬ চার ও এক ছক্কায় ১০৬ রান করেন এই ডানহাতি ওপেনার।
প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথম দিন রানের দেখা পেয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মোসাদ্দেক হোসেন।লড়াকু এক ইনিংস খেলেছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান।
আচমকাই এই ম্যাচ খেলতে নামা মুমিনুল হক ফিরেন ১ রান করে। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে নিজেদের প্রথম ইনিংসে অলআউট হওয়ার আগে ২৯৪ রান করে বিসিবি একাদশ।
২০১৪ সালে জাতীয় লিগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর মজিদকে পাঠানো হয়েছিল ‘এ’ দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। কিন্তু বারবাডোজে ক্যারিবিয়ান পেসারদের বিপক্ষে মজিদের নড়বড়ে ব্যাটিং হতাশ করেছিল সফরে থাকা নির্বাচককে।
এখানে উইকেট অবশ্যই বারবাডোজের মত প্রাণবন্ত নয়। তবে ইংলিশ ইংলিশ বোলিংও ওয়েস্ট ইন্ডিজের একাডেমি দলের চেয় ঢের ভালো। মজিদ তাই কৃতিত্ব দাবি করতেই পারেন!
শর্ট বল ও শর্ট অব লেংথে এদিনও খানিকটা অস্বস্তি দেখা গেছে মজিদের। তবে তাতে ম্লান হচ্ছে না বাকি সময়টুকুর দুর্দান্ত ব্যাটিং। ফুল লেংথ বল পেলেই চোখে পলকে গিয়েছেন পজিশনে, খেলেছেন দারুণ সব অফ ড্রাইভ, অন ও কাভার ড্রাইভ। স্পিনে পায়ের কাজও ছিল দেখার মত। খেলেছেন দারুণ কিছু ইনসাইড আউট শট।
আরেকপাশে সৌম্য ছিলেন শান্ত। চেষ্টা করছিলেন ঠাণ্ডা মাথায় থিতু হতে। কিন্তু ওকসের লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বল একটু শক্ত হাতে ডিফেন্ড করতে গিয়ে ধরা পড়লেন শর্ট কাভারে।
সৌম্য যখন ৪ রানে ফিরছেন, মজিদের রান তখন ২৯ বলে ৪২। আনসারি ও স্টিভেন ফিন আক্রমণে আসার পর অবশ্য খানিকটা কমে মজিদের গতি। তার পরও অর্ধশতক স্পর্শ করেন ৩৯ বলে।
গ্যারেথ ব্যাটি ও বেন স্টোক আক্রমণে আসার পর আবার গতিময় হয় মজিদের রানের চাকা। ব্যাটিকে বাউন্ডারি মারার এক বল পরই ওড়ান লং অন দিয়ে। স্টোকসকে টানা দুটি চার অফ ড্রাইভে। পরের ওভারে চার ছিল সোজা ব্যাটে পুল শটে!
প্রথম সেশনে শেষ পর্যন্ত ১৪টি চার ও ১ ছক্কায় ৯২ রান করেন মজিদ। সে সময় ব্রডের ১৯ বলে ৫টি চারে নিয়েছেন ২৫ রান, ওকসের ১০ বলে ১৭, স্টোকসের ১০ বলে ১৫!
তাতে ভড়কে যাননি শান্ত। শক্তিশালী ইংলিশ বোলিংয়ে দারুণ পরিণত ব্যাট করেছেন। খুব একটা অস্বস্তিতে পড়েননি, এগিয়ে যাচ্ছিলেন শতকের দিকে। বাঁহাতি স্পিনার আনসারিকে ডাউন দা উইকেট খেলতে এসে গড়বড়; উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েছেন পয়েন্টে (৭২)।
মুমিনুল ফিরে গেছেন এর বেশ আগেই। স্কোয়াডে না থাকলেও টেস্টের আগে প্রস্তুতির জন্য খেলতে নামেন এই ম্যাচে। মইন আলির সোজা বল কাট করতে গিয়ে বোল্ড ১ রানে।
তরুণ সাদমান ইসলামকে দ্রুত ফেরান আনসারি। লেগ স্পিন অলরাউন্ডার তানভীর হায়দারও বেশিক্ষ টিককে পারেননি, ব্রডের বলে তিনি ক্যাচ দেন বেয়ারস্টোকে।
এরপরই আবার মাঠে নামেন মজিদ। মুখোমুখো হওয়া প্রথম চার বলে একটি চারসহ ৮ রান তুলে নেন তিনি। তিন অঙ্কে যাওয়ার পর ব্রডকে চার হাঁকিয়ে সেই ওভারে ফিরে যান তিনি।
উইকেটে ছিলেন টেস্ট দলে ডাক প্রত্যাশী উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান নুরুল ক্রিজে ছিলেন ১১৭ মিনিট।দ্রুত উইকেট হারানোর মধ্যে গ্যারেথ ব্যাটিকে ফিরতি ক্যাচ দেওয়ার আগে ৬৯ বলে করেন ৩৯ রান।
ব্যাটিকেই ফিরতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তাসকিন আহমেদ। আনসারিকে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে তাকেই উইকেট দেন আল আমিন হোসেন।
প্রথম দিন ৪ ওভারের বেশি ব্যাট করার সুযোগ মেলেনি ইংল্যান্ডের। তাতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ২ রান করে অতিথিরা। তাসকিন আহমেদ ও শুভাশীষ রায়ের সেই ওভারগুলো দেখেশুনে খেলে কাটিয়ে দেন বেন ডাকেট ও হাসিব হামিদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বিসিবি একাদশ: ৭৪.৪ ওভারে ২৯৪ (মজিদ ১০৬, সৌম্য ৪, শান্ত ৭২, মুমিনুল ১, মোসাদ্দেক ৪৭, নুরুল ৩৯, সাদমান ২, তানভির ৫, তাসকিন ৩, শুভাশীষ ০*, আল আমিন ৭; ব্রড ২/৪৩, ওকস ১/৩৫, আনসারি ৪/৬৮, ফিন ০/২৪, ব্যাটি ২/৫৫, স্টোকস ০/২১, মঈন ১/২৭, রুট ০/১৪)
ইংল্যান্ড: ৪ ওভারে ২/০ (হাসিব ০*, ডাকেট ২*; তাসকিন ০/১, শুভাশীষ ০/১)।