বেন ডাকেট ও স্যাম বিলিংসের দুই অর্ধশতকের ওপর ভর করে শেষ ওয়ানডে ৪ উইকেটে জিতেছে ইংল্যান্ড। টানা ছয় সিরিজ জেতার পর হারল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
লম্বা সময় ঢাকা থাকায় শুরুতে উইকেট ছিল মন্থর। বাংলাদেশের ইনিংসে বল এসেছে অনেকটা থেমে। দুই স্পিনার বেশ টার্ন পেয়েছেন। ইংল্যান্ডের ইনিংসের সময় বল স্কিড করেছে। বল দ্রুত ব্যাটে আসায় স্পিনারদের খুব সহজে খেলেছে অতিথি ব্যাটসম্যানরা।
উইকেটে থিতু হয়ে ফিরেছেন তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস ও সাব্বির রহমান। দুই অঙ্কেই যেতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ, সাকিব আল হাসান ও নাসির হোসেন। অনেক বড় স্কোরের সম্ভাবনা জাগানো বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত পৌনে তিনশ’ রানে যায় সাত ইনিংস পর অর্ধশতক পাওয়া মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে।
বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ২৭৭ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৪৭ ওভার ৫ বলে ৬ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড।
এই স্টেডিয়ামে এটি সর্বোচ্চ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। এর আগে সর্বোচ্চ ২২৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করার কৃতিত্ব বাংলাদেশেরই। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই স্বাগতিকরা ২ উইকেটে জেতে ১ ওভার বাকি থাকতে।
লক্ষ্য তাড়ায় ৬৩ রানের জুটিতে ইংল্যান্ডকে ভালো সূচনা এনে দেন জেমস ভিন্স ও স্যাম বিলিংস। ৫টি চারে ৩২ রান করা ভিন্সকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন নাসির হোসেন।
তৃতীয় উইকেটে জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে ৪৫ রানের জুটি গড়েন ডাকেট। পরপর দুই ওভারে তাদের ফিরিয়ে বাংলাদেশের আশা বাঁচিয়ে রাখেন শফিউল ইসলাম। ৬৮ বলে চারটি চার ও একটি ছক্কায় ৬৩ রান করেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ডাকেট।
দ্রুত দুই উইকেট হারানো ইংল্যান্ড প্রতিরোধ গড়ে বেন স্টোকস ও জস বাটলারের ৪৮ রানের জুটিতে। বাটলারকে বোল্ড করে বিপজ্জনক জুটি ভাঙার পর মইন আলিকেও বিদায় করেন মাশরাফি।
দ্রুত দুই উইকেট নেওয়ার সুবিধা কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। ক্রিস ওকসকে নিয়ে বাকি কাজটুকু সারেন স্টোকস। ৪৮ বলে ৪৭ রানে অপরাজিত ছিলেন এই অলরাউন্ডার। ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে দেওয়া ওকস ১৮ বলে করেন ২৭ রান।
বাংলাদেশের মাশরাফি ও শফিউল নেন দুটি করে উইকেট।
শুরুতে শট খেলছিলেন ইমরুল। রানের গতি বাড়ানোর দিকে ছিল তার মনোযোগ। শান্ত ছিলেন তামিম; সংযত ব্যাটিংয়ে গড়ে তুলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা উদ্বোধনী জুটি। ২০১০ সালে ৬৩ রানের আগের সেরা জুটিও ছিল তামিম-ইমরুলের।
বিপজ্জনক হয়ে উঠা ৮০ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙতে স্টোকস ফেরান ইমরুলকে। ৫৮ বলে ৪৬ রান করেন এই বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।
বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা তামিম আর শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করা সাব্বিরের ব্যাটে একশ’ পার হয় বাংলাদেশের সংগ্রহ। এরপরই আদিল রশিদের শর্ট বলে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তামিমের ৪৫ রানের ইনিংস।
রশিদকে ছক্কা হাঁকিয়ে পরের বলেই শর্ট কাভারে ক্যাচ দেন মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ।
দ্রুত তামিম-মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের কোনো প্রভাব দলের ওপর পড়তে দেননি সাব্বির ও মুশফিক। পাল্টা আক্রমণে চতুর্থ উইকেটে ৮ ওভারে ৫৪ রানের জুটি উপহার দেন এই দুই জনে।
দলকে ভালো ভিত দেওয়া সাব্বির এক রানের জন্য অর্ধশতক পাননি। রশিদের বলে বাটলারের গ্লাভসবন্দি হয়ে শেষ হয় তার ৪৯ রানের ইনিংস।
দ্রুত সাব্বিরকে অনুসরণ করেন সাকিব ও নাসির। অফ স্পিনার মইনের বলে স্টাম্পড হন সাকিব। উইকেটরক্ষক বাটলার গ্লাভসে জমাতে পারেনি, বল ছিটকে আঘাত হানে স্টাম্পে। রশিদের ফুলটসে মিডউইকেটে ক্যাচ দেন নাসির।
মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৬৭ রানে। তার ৬২ বলের ইনিংসটি গড়া ৪টি চার ও একটি ছক্কায়। তরুণ মোসাদ্দেক চারটি চারে ৩৯ বলে করেন অপরাজিত ৩৮ রান।
ক্যারিয়ার সেরা ৪৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের সফলতম বোলার রশিদ। ওয়ানডেতে তার আগের সেরা ছিল ৪/৪৯।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৭/৬ (তামিম ৪৫, ইমরুল ৪৬, সাব্বির ৪৯, মাহমুদউল্লাহ ৬, মুশফিক ৬৭*, সাকিব ৪, নাসির ৪, মোসাদ্দেক ৩৮*; রশিদ ৪/৪৩, স্টোকস ১/২৪, মইন ১/৪২)
ইংল্যান্ড: ৪৭.৫ ওভারে ২৭৮/৬ (ভিন্স ৩২, বিলিংস ৬২, ডাকেট ৬৩, বেয়ারস্টো ১৫, স্টোকস ৪৭*, বাটলার ২৫, মইন ১, ওকস ২৭*; মাশরাফি ২/৫১, শফিউল ২/৬১, মোসাদ্দেক ১/২২, নাসির ১/৫৩)
ফল: ইংল্যান্ড ৬ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ইংল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যাচ সেরা: আদিল রশিদ
সিরিজ সেরা: বেন স্টোকস