ডি ককের তাণ্ডবে উড়ে গেল অস্ট্রেলিয়া

স্কট বোল্যান্ডের বলে সীমানায় দারুণ এক ক্যাচ নিলেন ট্রাভিস হেড, প্যাভিলিয়নের পথ ধরলেন কুইন্টন ডি কক। ক্ষনিকের নীরবতার পর শোর উঠল গ্যালারিতে, উঠে দাঁড়াল গোটা সেঞ্চুরিয়ন। ছুটে এসে অভিনন্দন জানালেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার রান তখন ২৮০, ডি কক একাই ১৭৮!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2016, 07:12 PM
Updated : 30 Sept 2016, 07:12 PM

অস্ট্রেলিয়ার তিনশ ছুঁইছুঁই সংগ্রহটাকে একেবারেই ছেলেখেলা বানিয়ে ছাড়লেন ডি কক। খুনে ব্যাটিংয়ে তুলোধুনো করলেন অস্ট্রেলিয়ার আনকোরা, অনভিজ্ঞ বোলিং আক্রমণকে। ৫ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরিয়নে ২৯৫ রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা জিতল ৬ উইকেটে।

প্রোটিয়াদের রান তাড়ার দাপট বোঝা যাচ্ছে না আসলে জয়ের ব্যবধান দেখে। জয় পেয়েছে তারা ৮২ বল বাকি থাকতে। চার উইকেটের তিনটিই হারিয়েছে জয়ের খুব কাছে গিয়ে।

উদ্বোধনী জুটির টর্নেডো ব্যাটিংয়েই রান তাড়ার পথে অর্ধেক এগিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। রাইলি রুশোকে তবু থামাতে পেরেছিল অস্ট্রেলিয়ানরা; কিন্তু পিষ্ট হয়েছে তারা ডি ককের ব্যাটে। ১৬টি চার ও ১১ ছক্কায় করেছেন ১৭৮!

অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ে নেই মিচেল স্টার্ক, জশ হেইজেলউডরা। তবে দক্ষিণ আফ্রিকাও খেলতে নেমেছিল হাশিম আমলা, এবি ডি ভিলিয়ার্সকে ছাড়া।

ফ্লুতে আক্রান্ত আমলার বদলে ডি ককের সঙ্গে শুরুতে জুটি বাধেন রুশো। ১৪৫ রানের জুটি গড়ে ফেলেন দুজন মাত্র ১৭ ওভারেই! নিজের প্রথম বলেই রুশোকে ফেরান লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা। তবে ততক্ষণে ৪৫ বলে ৬৩ করে ফেলেছেন রুশো।

উইকেট মিললেও অস্ট্রেলিয়ানদের স্বস্তি মেলেনি। ডি কক ছুটতে থাকেন অপ্রতিরোধ্য গতিতে। ড্যানিয়েল ওরালকে পুল করে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন মাত্র ৭৪ বলে। ৬৫ ইনিংসের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে যেটি তার একাদশ সেঞ্চুরি!

সেঞ্চুরির পর যেন ডি কক হয়ে ওঠেন আরও দুর্দমনীয়। টানা তিন ছক্কা মারেন জ্যাম্পাকে, মিচেল মার্শকে টানা দু্ই চার, এক ছক্কা। বল ফেলার জায়গাই পাচ্ছিলেন না অস্ট্রেলিয়ানরা।

দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ফাফ দু প্লেসি ছিলেন কেবল দর্শক। ৮৯ বলে ১২৩ রানের জুটিতে এই ম্যাচের অধিনায়ক দু প্লেসির অবদান ২৬ রান!

এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল ডাবল সেঞ্চুরিও হয়ে যাবে ডি ককের। শেষ পর্যন্ত অবশ্য থেমেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার রেকর্ড গ্যারি কারস্টেনের ১৮৮ রানের ১০ রান আগেই।

ডি কককে ফেরানো বোল্যান্ড তুলে নেন দু প্লেসি, জেপি দুমিনিকেও। কিন্তু ম্যাচে সে সবের প্রভাব পড়েছে সামান্যই।

এর আগে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটাও ছিল ঝড়ো। ৩৬ বলে ৪০ রান করেন ডেভিড ওয়ার্নার। ওপেনিংয়ে তার সঙ্গী অ্যারন ফিঞ্চ ২৮ বলে ৩৩।

৬৪ রানের উদ্বোধনী জুটির পর খেই হারায় ইনিংস। ওয়ার্নারকে ফেরার ওয়েইন পার্নেল। ফিঞ্চ ও অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথকে এক ওভারেই ফেরান তরুণ পেসার আন্দিলে ফেহলুকওয়ায়ো।

এর আগে ছোট মাঠ, দ্রুতগতির আউটফিল্ডে অস্ট্রেলিয়ানরা রান তোলে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। তবে উইকেটও তারা হারিয়েছে নিয়মিত বিরতিতে। ১৯২ রানে হারায় তারা ৬ উইকেট, রান রেট তখনও ছয়ের ওপর!

সপ্তম উইকেটে জন হেস্টিংসকে নিয়ে ইনিংসটাকে থিতু করেন জর্জ বেইলি। ৭৯ রানের জুটি গড়েন দুজন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নেন হেস্টিংস। আক্রমণে ফিরে ফেহলুকওয়ায়ো হেস্টিংসকে (৫১) ফিরিয়ে ভাঙেন এই জুটি। বেইলি ফেরেন ৭৪ রানে।

ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে ২০ বছর বয়সী পেসার ফেহলুকওয়াহো নেন ৪ উইকেট।

২৯৪ রানকে তখন চ্যালেঞ্জিংই মনে হচ্ছিলো। কে জানত, ডি ককের ব্যাটিং তাণ্ডবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা উড়ে যাবে কর্পূরের মতো!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ২৯৪/৯ (ওয়ার্নার ৪০, ফিঞ্চ ৩৩, স্মিথ ৮, বেইলি ৭৪, মার্শ ৩১, হেড ১৮, ওয়েড ৫, হেস্টিংস ৫১, জ্যাম্পা ১২, ওরাল ৬*, বোল্যান্ড ৩*; স্টেইন ২/৬৫, রাবাদা ০/৬৩, পার্নেল ১/৫৬, ফেহলুকওয়াহো ৪/৪৪, তাহির ১/৪৬, বেহারদিন ০/১৫)।

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৬.২ ওভারে ২৯৫/৪ (ডি কক ১৭৮, রুশো ৬৩, দু প্লেসি ২৬, দুমিনি ৯, মিলার ১০*, বেহারদিন ৫*; ওরাল ০/৫০. হেস্টিংস ০/৫২, বোল্যান্ড ৩/৬৭, মার্শ ০/৬৬, হেড ০/১৬, জ্যাম্পা ১/৪৪)।

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কুইন্টন ডি কক