নিজেকে মেলে ধরতে উন্মুখ মোসাদ্দেক

প্রত্যাশিত ডাক পেয়ে খেলতে উন্মুখ মোসাদ্দেক হোসেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকে টি-টোয়েন্টিতে আলো ছড়াতে পারেননি এই তরুণ অফ স্পিন অলরাউন্ডার; তবে আত্মবিশ্বাসী ওয়ানডেতে নিজেকে মেলে ধরতে।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2016, 12:31 PM
Updated : 22 Sept 2016, 04:52 PM

বয়স মাত্র ২০, এরই মধ্যে পরিণত ব্যাটিংয়ে নজর কেড়েছেন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অফ স্পিনটাও খুব কার্যকর। ফিল্ডার হিসেবেও অসাধারণ। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সম্পদ হতে পারেন মোসাদ্দেক। 

অনেকেই মোসাদ্দেকের মধ্যে আগামীর বড় তারকা হওয়ার সম্ভাবনা। তাদের মধ্যে রয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনও।

“কিছু কিছু ক্রিকেটার আছে যাদের মেধা আগে থেকেই খেয়াল করা যায়। মোসাদ্দেক ঘরোয়া ক্রিকেটে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাটিং করেছে। বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটেও তার ভালো পারফরম্যান্স রয়েছে। গত দুই বছরে সে দারুণ খেলেছে। প্রিমিয়ার লিগেও তার পারফরম্যান্স খুব ভালো। আমরা মনে করি, সে প্রস্তুত হয়ে উঠেছে।”

মোসাদ্দেকের সামর্থ্য নিয়ে সংশয় নেই। তার টেম্পারমেন্টও প্রশ্নাতীত। এরই মধ্যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেছেন দারুণ কিছু ইনিংস। বাংলাদেশের রেকর্ড তিনটি দ্বি-শতক তার অধিকারে। পাঁচটি দেড়শোর্ধ ইনিংস রয়েছে তার।

২০১৩-১৪ মৌসুমে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট অভিষেক হয় মোসাদ্দেকের। সেবার চার ইনিংসে ২৪ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। পরের তিন মৌসুমে নিজের সামর্থ্যটা দেখিয়েছেন তিনি।

২০১৪-১৫ মৌসুমে ১২ ইনিংসে ৮৬.০৮ গড়ে করেন ১ হাজার ৩৩ রান। ২০১৫-১৬ মৌসুমে জিম্বাবুয়ে সফরে দুই আনঅফিসিয়াল টেস্টে ৬৪.৬৬ গড়ে করেন ১৯৪ রান। গত মৌসুমে ১০ ইনিংসে ৮১.৫৫ গড়ে ৭৩৪ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

সব মিলিয়ে ১৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে সাতটি শতকসহ ৭০.৮৯ গড়ে ১ হাজার ৯৮৫ রান করেছেন তিনি। সর্বোচ্চ ২৮২।

এই তরুণের ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ স্থানীয় কোচেরা। বিভিন্ন সময় তাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সরওয়ার ইমরান, খালেদ মাসুদ পাইলট, খালেদ মাহমুদ সুজন, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। বিপিএলে খেলার সময় শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারারও প্রশংসা পেয়েছেন মোসাদ্দেক। 

বিপিএলের ভালো পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে জাতীয় দলে আসেন মোসাদ্দেক। গত জানুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে হয় তার আন্তর্জাতিক অভিষেক। সেই ম্যাচে প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি তিনি। আবার এসেছে সুযোগ, দ্বিতীয় সুযোগে নিজেকে মেলে ধরতে উন্মুখ তিনি।

“আমি ছোটো বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম একদিন জাতীয় দলে খেলব। টি-টোয়েন্টি দলে যখন ডাক পেয়েছিলাম তখন অনুভূতি ছিল এক রকম, এখন ওয়ানডে দলে ডাক পেয়েছি এই অনুভূতিটা আরেক রকম। আমি নিজে থেকে চাচ্ছিলাম আমার অভিষেক ওয়ানডে দিয়ে হোক। এখন একটা স্বস্তি কাজ করছে। এখন মনে হচ্ছে, সুযোগ পেলে ভালো কিছু করব।”

২০১৩ সালে প্রায় একার লড়াইয়ে আবাহনীকে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে শিরোপা লড়াইয়ে রেখেছিলেন মোসাদ্দেক। প্রিমিয়ার লিগে নিজের অভিষেক মৌসুমে ৫৪.৩৭ গড়ে ৪৩৫ রান করেন তিনি, সেবারই পান এই সংস্করণে নিজের একমাত্র শতক।

২০১৫-১৬ মৌসুমে জন্ডিস খুব ভুগিয়েছে মোসাদ্দেককে। সেবার লিগেও খুব একটা ভালো করতে পারেননি তিনি, তার দল আবাহনীও পারেনি সুপার লিগে যেতে। ১০ ম্যাচে ১৩২ রান করেন মোসাদ্দেক, সর্বোচ্চ ছিল ৪৯।

তরুণ ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ওপর আস্থা হারায়নি আবাহনী। তার সুফলও পেয়েছে তারা। গত লিগে ব্যাট-বল-ফিল্ডিংয়ে নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরেন তিনি। ৭৭.৭৫ গড়ে করেন ৬২২ রান। সুপার লিগে অন্তত তিনটি ম্যাচে প্রায় একাই জেতান আবাহনীকে।

সাকিব আল হাসান-তামিম ইকবাল থাকার পরও আবাহনীর শিরোপা জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল মোসাদ্দেকের। সুপার লিগের এক ম্যাচে ৫ উইকেটসহ প্রতিযোগিতায় অফ স্পিনে ১৬ উইকেট নেন তিনি। 

গত অক্টোবরে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে ডাক পাওয়ার পর জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন উজ্জ্বল হতে থাকে মোসাদ্দেকের। জানুয়ারি পূরণ হয়েছে তার প্রথম ধাপ। এবার তিনি তৈরি আরও বড় চ্যালেঞ্জের জন্য।

মোসাদ্দেকের দুই যমজ ছোটো ভাইও ক্রিকেটার। মোসাব্বেক হোসেন খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। মোসাব্বেরও খেলেছেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট।