‘লারাকে বলেছিলাম, আমি আজ আউট হচ্ছি না’

৫ বলে অপরাজিত শূন্য রান। উইকেটে ১৪ মিনিটের স্থায়ীত্ব; ৯ রানের জুটি। তবে সেই ইনিংসই কিন্তু কোর্টনি ওয়ালশের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আলোচিত ব্যাটিং কীর্তি! ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলা ব্রায়ান লারাকে দিয়েছিলেন সঙ্গ; শেষ জুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এনে দিয়েছিলেন অসাধারণ এক জয়। পেছন ফিরে তাকিয়ে ওয়ালশ বলছেন, তিনি জানতেন, সেদিন আউট হবেন না!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2016, 03:45 PM
Updated : 4 Sept 2016, 03:45 PM

সেটি ১৯৯৯ সালের মার্চ, বারবাডোজের কেনসিংটন ওভাল। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, বোলিং আক্রমণে ম্যাকগ্রা-গিলেস্পি-ওয়ার্ন-ম্যাকগিল। শেষ ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের লক্ষ্য ৩০৯। ১০৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলকে একাই টানছিলেন অধিনায়ক লারা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন নবম উইকেট হারাল, জিততে চাই তখন ৬ রান। শেষ ব্যাটসম্যান ওয়ালশ, ব্যাট হতে বরাবরই বালির দেয়াল। বোলিং কীর্তিতে যেমন ভাস্বর, নামের পাশে তেমনি আছে টেস্টে সবচেয়ে বেশিবার শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ড! উইকেটে লারা আর গ্যালারিতে-টিভি পর্দার সামনে ক্যারিবিয়ান সমর্থকদের শঙ্কার কারণ ছিল যথেষ্টই।

সেদিন উইকেটে যাওয়ার পর ওয়ালশকে কি বলেছিলেন তার অধিনায়ক? এতদিন পর আবার সেই সময়টায় ফিরে তাকালেন ওয়ালশ। বাংলাদেশের বোলিং কোচের দায়িত্ব নিতে শনিবার এসেছেন ঢাকায়। রোববার বিসিবিতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে স্মৃতির ডানায় ভেসে গেলেন সেই মুহূর্তে। সবাইকে চমকে দিয়ে জানালেন, লারা কিছু বলেননি, বরং তিনিই বলেছিলেন লারাকে!

“ব্রায়ান আমাকে কিছুই বলেনি। আমিই ওকে বলছিলাম সব কিছু। ওকে বলেছিলাম, ‘আমি আজ আউট হচ্ছি না। তুমি আউট হয়ে যেও না, তুমি আউট হলে আমরা হারব’। সে আউট হয়নি, আমরাও ম্যাচটা হারিনি।”

অস্ট্রেলিয়ানদের আশা গুঁড়িয়ে ওয়ালশ সেদিন টিকে থাকেন ১৪ মিনিট। ৫ বল খেলে অক্ষত রাখেন নিজের উইকেট। জেসন গিলেস্পির বলে লারার বাউন্ডারিতে ১ উইকেটের দারুণ জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন লারা। ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত উইজডেনের বিচারে (প্রকাশ ২০০১) যেটি ছিল টেস্ট ইতিহাসের সর্বকালের দ্বিতীয় সেরা ইনিংস।

ওয়ালশের বিশ্বাস, দৃঢ়প্রতিজ্ঞাই সেদিন জিতিয়েছিল তাদের।     

“টেস্ট জয়ের দৃঢ়প্রতিজ্ঞাটাই ছিল মূল ব্যাপার। কারণ আমরা ভয়ানক চাপে ছিলাম। আমরা ওই ম্যাচ হারলে সেটা হতো অন্যায্য।”

ওই সিরিজের প্রথম টেস্টে ত্রিনিদাদে ৫১ রানে অলআউট হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এক সময়ের প্রবল প্রতাপশালী দলের ওই পারফরম্যান্সে তুমুল সমালোচনা হয়েছিল ক্যারিবিয়ায় ও ক্রিকেট বিশ্বে। দ্বিতীয় টেস্টে লারার অসাধারণ ডাবল সেঞ্চুরিতে সিরিজে সমতা ফেরায় তারা।

তৃতীয় টেস্টেও লারার সেই অতি মানবীয় ইনিংস, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়। পরে শেষ টেস্ট জিতে সিরিজে সমতা ফেরায় অস্ট্রেলিয়া।

পরের বছর আরও একবার ব্যাটিং দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন ওয়ালশ। অ্যান্টিগায় এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ইনিংসে প্রয়োজন ছিল ২১৬ রান। নবম উইকেট পড়েছিল ১৯৭ রানে। ওয়াসিম আকরাম ছিলেন অগ্নিমূর্তিতে। আরও ছিলেন ওয়াকার-মুশতাক-সাকলায়েন।

‘নড়বড়ে’ ওয়ালশ সেদিনও দাঁড়িয়ে যান দারুণ দৃঢ়তায়। টিকে থাকেন ৭২ মিনিট! ২৪ বলে অপরাজিত থাকেন ৪ রানে। আরেকপাশে জিমি এডামস এগিয়ে নেন দলকে। শেষ উইকেটে ১৩ ওভারে ১৯ রানের জুটিতে আবার ১ উইকেটে জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

সেই লড়াইয়ের গল্পগুলো বলে নিশ্চয়ই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উজ্জীবিত করবেন ওয়ালশ!