স্কুল বয় ক্রিকেটার থেকে টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান কুসল

গড়নে ছোটখাটো; চেহারায় এখনও কৈশরের ছাপ। দেখলে মনে হবে মাত্রই বুঝি স্কুল থেকে বেরিয়ে এসেছেন। আদতেও কুসল মেন্ডিস স্কুল ছেড়েছেন খুব বেশি দিন হয়নি। টেস্টের শীর্ষ দলের বিপক্ষে বীরোচিত ইনিংসে এই তরুণই ক্রিকেটবিশ্বে তুলেছেন আলোড়ন। লঙ্কানদের নতুন ক্রিকেট নায়ক!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2016, 03:08 PM
Updated : 5 Oct 2016, 02:06 PM

পাল্লেকেলে টেস্টের তৃতীয় দিনে যখন মাঠে নামলেন মেন্ডিস তখন ৬ রানে শ্রীলঙ্কা হারিয়েছে ২ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে পিছিয়ে তখনও ৮০ রানে। গতি আর সুইংয়ে নাকাল করে ছাড়ছেন মিচেল স্ট্যার্ক। ব্যাটসম্যানকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে উইকেটও। সব মিলিয়ে মাথায় চাপের পাহাড়। তরুণ মেন্ডিস জয় করলেন সব প্রতিবন্ধকতা।

শুরুতে প্রতি আক্রমণে ভড়কে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়াকে; এরপর আস্তে আস্তে গড়েছেন ইনিংস। দলকে বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করেছেন, এরপর নিয়ে গেছেন শক্ত অবস্থানে। বৃষ্টির বাধায় আগেই যখন শেষ হলো দিনের খেলা, মেন্ডিসের নামের পাশে অপরাজিত ১৬৯। দলের রান ৬ উইকেটে ২৮২। মেন্ডিস একাই করেছেন দলের প্রায় ৬০ শতাংশ রান।

সোজা ব্যাটে খেলা বরাবরই মেন্ডিসের বড় শক্তি। এদিনও খেলেছেন; পাশাপাশি খেলেছেন দারুণ সব পুল, দৃষ্টিসুখকর সব ফ্লিক ও কাট। স্পিনে সুইপ করেছেন যেন ইচ্ছেমতো। মেলে ধরেছিলেন যেন ভাণ্ডারের সব শট।

পরিণত ব্যাটিং ভুল বোঝাতে পারে, সত্যি বলবে তার চেহারাই। বয়স তো মোটে ২১। এখনও তিনি আসলেই ‘কাঁচা।’

শ্রীলঙ্কার আরও অনেক গ্রেটের মতো মেন্ডিসও স্কুল ক্রিকেটের ফসল। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বার্তা বারবার দিয়েছেন স্কুল ক্রিকেটে। প্রিন্স অব ওয়েলস স্কুলের হয়ে খেলে ২০১৩ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন স্কুল ক্রিকেটের জন্য বিখ্যাত দেশটির ‘স্কুল ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার”। পরের বছর দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে।

মেন্ডিস এগিয়ে যাচ্ছিলেন যেন চলন্ত সিঁড়িতে চেপে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক গত বছরের জানুয়ারিতে। গত অক্টোবরেই টেস্ট দলে ডাক! প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আহামরি কোনো পারফরম্যান্স ছিল না। ১৬ ম্যাচে তখন ছিল মোটে একটি সেঞ্চুরি ও ফিফটি। নির্বাচকেরা তবু তাকে দলে নিয়েছিলেন প্রতিভায় বাজি রেখে। জয়াবর্ধনে-সাঙ্গাকারা উত্তর যুগে ব্যাটিংয়ের ভবিষ্যত সেনানীর সন্ধানে।

গত অক্টোবরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকও হয়ে যায়। এরপর বছরের শেষে ও এ বছরের শুরু মিলিয়ে খেলে এসেছেন নিউ জিল্যান্ডে, মে-জুনে খেলে এলেন ইংল্যান্ডে। প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন বারবার, কিন্ত বড় ইনিংস আসছিল না। আগের ৬ টেস্টে ৮ বার ২৫ স্পর্শ করে পঞ্চাশ পর্যন্ত যেতে পেরেছেন মাত্র একবার। চটকদার শুরু, চোখধাঁধানো সব শট খেলে হুট করেই আউট হয়ে ফিরছিলেন।

অবশেষে প্রতিভা, সামর্থ্য, সম্ভাবনা সব এসে মিলল এক বিন্দুতে। দলের ভীষণ প্রয়োজনের সময় মেন্ডিস খেললেন অসাধারণ এক ইনিংস। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আগের একমাত্র সেঞ্চুরিতে আউট হয়েছিলেন ১০৮ রানে। টেস্টে দেড়শ’ ছাড়িয়েই থামেননি, ছুটে চলেছেন আরও বড় কিছুর দিকে।

টেস্টের পথচলার ফাঁকে ওয়ানডেও খেলে ফেলেছেন। সেখানেও রেখেছেন প্রতিভার ছাপ।

শুরু থেকেই শ্রীলঙ্কা তাকে ব্যাটিং অর্ডারে জায়গা দিয়েছে কুমার সাঙ্গাকারার শূন্য করে যাওয়া তিন নম্বরে। নিউ জিল্যান্ডে তো ইনিংস ওপেনও করেছেন। তরুণ একজন ব্যাটসম্যানকে এত বড় দায়িত্ব দেওয়াই প্রমাণ করে, তার সামর্থ্যে কতটা আস্থা দলের।

সাঙ্গাকারার মতো তিনিও উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। যদিও এখন কিপিং করতে হচ্ছে না। তবে বৃহস্পতিবার ব্যাটিং দিয়েই মনে করিয়ে দিয়েছেন সাঙ্গাকারাকে। প্রমাণ করেছেন নির্বাচকদের চোখ আর অধিনায়কের আস্থা ভুল ছিল না। শ্রীলঙ্কার সাবেকরা তাকে দেখছেন ভবিষ্যত গ্রেট হিসেবে। কোচ গ্রাহাম ফোর্ড ভবিষ্যতের ছক আঁকছেন মেন্ডিসকে কেন্দ্র করেই।

ভবিষ্যত তাকে কোথায় নিয়ে যাবে, সেটা নির্ধারণ করবে সময়। আপাতত বলা যায়, আরেক রত্ম পেয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা!