২০০৫ অ্যাশেজের এজবাস্টন যেন ফিরে এলো রোববার লর্ডসে। ইয়াসিরের রূপ ধরে যেন আবির্ভূত হলেন ওয়ার্ন! সেবার এমনই এক জাদুকরী ডেলিভারিতে ইংলিশ ওপেনার অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসকে বোকা বানিয়েছিলেন ওয়ার্ন। এবার গ্যারি ব্যালান্সকে একইভাবে বিভ্রান্ত করলেন ইয়াসির।
ওয়ার্ন অবশ্য বেশ আগে থেকেই মজেছেন ইয়াসিরে। লেগ স্পিনের কিংবদন্তি বারবার জানিয়েছেন সময়ের সেরা লেগ স্পিনারে নিজের মুগ্ধতা। এবারও লর্ডসের ধারাভাষ্যকক্ষে বসে মুগ্ধ হয়ে দেখলেন ওয়ার্ন, জানালেন মুগ্ধতার কথা।
এই ম্যাচের আগে সবশেষ টেস্টে খেলেছিলেন ইয়াসির ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই, গত নভেম্বরে। এরপর তার ক্যারিয়ারে পড়েছিল দু:সময়ের ছায়া। ডোপ টেস্টে পজিটিভি হয়ে নিষিদ্ধ ছিলেন ৩ মাস। অ্যাবোটাবাদে দলের নিবিড় অনুশীলন ক্যাম্পে চোট বাধিয়েছিলেন হাঁটুতে।
তবে দীর্ঘায়িত হতে দেননি দু:সময়ের প্রহরকে। সব পেছনে ফেলে মাঠে নেমেই পাকিস্তানের জয়ের নায়ক। ৩ ক্রিকেটারের কলঙ্কিত কাণ্ডে ৬ বছর আগে যে মাঠে লজ্জিত হয়েছিল পাকিস্তান ক্রিকেট, সেখানেই এবার ৭৫ রানে জিতল পাকিস্তান। ম্যাচে ১৪১ রানে ১০ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ ইয়াসির।
অথচ এশিয়ার বাইরে এটিই ছিল তার প্রথম টেস্ট। বোলিং দেখে কে বলবে সেটি! বিরুদ্ধ কন্ডিশনেও ইয়াসির দেখালেন তার বোলিং জাদু। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পেলেন ম্যাচে ১০ উইকেটের স্বাদ।
এই প্রথম কীর্তিতে ইয়াসির নাম লেখিয়েছেন আরও কয়েকটি প্রথম কীর্তিতে। লর্ডসে ১০ উইকেট পাওয়া প্রথম পাকিস্তানি বোলার তিনিই। ওয়াকার ইউনিসের ১৫৪ রানে ৮ উইকেট ছিল আগের সেরা।
ইয়াসিরের আগে লর্ডসে সবশেষ কোনো স্পিনারের ১০ উইকেট ছিল সেই ১৯৭৪ সালে। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাঁহাতি স্পিনে ৭১ রানে ১৩ উইকেট নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ডেরেক আন্ডারউড।
ইংল্যান্ডের বাইরের স্পিনারদের মধ্যে এর আগে লর্ডসে ১০ উইকেট পাওয়ার একমাত্র কীর্তি ছিল সনি রামাধিনের। ১৯৫০ সালে ১৫২ রানে ১১ উইকেট নিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান অফ স্পিনার।
লর্ডসের ১৩২ বছর আর ১৩২ টেস্টের ইতিহাসে এর আগে ১০ উইকেট পাওয়া লেগ স্পিনার ছিলেন একজনই। সেই ১৯৪৭ সালে পেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ডগ রাইট।
একটা জায়গায় ইয়াসির ছাড়িয়ে গেছেন ক্রিকেট ইতিহাসের সবাইকেই। ১৩ টেস্ট শেষে তার উইকেট ৮৬। প্রথম ১৩ টেস্টে এত উইকেট ছিল না আর কারও। অস্ট্রেলিয়ার চার্লি টার্নারের ৮১ উইকেট ছিল আগের রেকর্ড।
জর্জ লোহম্যানের ১৬ টেস্টে ১০০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড এখন হুমকির সত্যিকার অর্থেই হুমকির মুখে। ১২০ বছর পুরোনো সেই রেকর্ড ইয়াসির ভাঙতে পারবেন না কিনা, উত্তর মিলবে হয়ত এই সিরিজেই।
তবে সেটি না পারলেও, লেগ স্পিনের জাদুতে ইয়াসির যে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাবেন, সেটি নিশ্চিত।