শাহরিয়ারের ঘোর কাটছেই না

বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিখে গিয়েছিলেন শাহরিয়ার নাফীস। তবে মাঝে মধ্যে অসহায় অনুভব করতেন তখনই, একমাত্র ছেলে শাহওয়ার আলি নাফীস যখন প্রশ্ন করত, “বাবা, তোমাকে জাতীয় দলে নেয় না কেন?”

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2016, 03:59 PM
Updated : 1 July 2016, 02:57 PM

যদিও প্রাথমিক দল, তবু ইংল্যান্ড সিরিজের ৩০ সদস্যের দলে এই ডাক পাওয়াও অপার আনন্দ বয়ে এনেছে শাহরিয়ারের জন্য। ঘরোয়া ক্রিকেটে গত বছর দুয়েকের ধারাবাহিকতার পুরস্কার পেয়েছেন বলেই শুধু নয়, হাসি ফোটাতে পেরেছেন ৯ বছর বয়সী ছেলেটার মুখে!

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে ফোনালাপেও শাহরিয়ারের কণ্ঠে সেই উচ্ছ্বাস স্পষ্ট ধরা পড়ে। ক্যাম্পে ডাক পাওয়ার খবর পেয়েছেন বৃহস্পতিবার দুপুরে, সন্ধ্যায়ও কাটছিল না তার বিস্ময়ের ঘোর।

“দুপুরে খবরটি পেয়ে আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। গত দুই বছরে বেশ কবারই মনে মনে হয়ত আশা ছিল, কিন্তু এবার একটুও প্রস্তুত ছিলাম না এমন কিছুর জন্য। কী যে ভালো লেগেছে, বোঝাতে পারব না। তার চেয়েও বেশি বিস্মিত হয়েছি।”

“আমি অবশ্যই বলছি না যে প্রথম যে বার জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলাম, সেরকম লাগছে। তবে এটাও অসম্ভব ভালো লাগার একটা অনুভূতি। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে আছি, এখনও কাটছে না।”

সদ্য সমাপ্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শাহরিয়ারের পারফরম্যান্স ছিল গড়পড়তা। ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে ১০ ম্যাচে ৩৮.৮৮ গড়ে ৩৫০ রান, শতক ও অর্ধশতক একটি করে। পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট ছিলেন না তিনি নিজেও।

“আমার কাছে মনে হয়েছে, অন্তত ১০০ রান কম হয়েছে। ১০ ম্যাচে সাড়ে চারশ-পাঁচশ রান হলে হয়ত চোখে পড়ার মত কিছু হতো। হয়ত নির্বাচকেরা আমার গত দুই বছরের ধারাবাহিকতা বিবেচনা করেছেন।”

নির্বাচকদের ভাবনায় শাহরিয়ার আছেন মূলত বড় দৈর্ঘ্যের জন্য। সেখানে ঘরোয়া ক্রিকেটে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ধারাবাহিকতা নজর কাড়ার মতোই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে ১২ ম্যাচে ৩টি শতক ও ৭ অর্ধশতকে করেছেন ১ হাজার ১১৭ রান, গড় ৬২.০৫। আগের মৌসুমে ১০ ম্যাচে ২ শতক ও ৭ অর্ধশতকে করেছিলেন ১ হাজার ৯২ রান, গড় ছিল ৬৪.২৩!

শাহরিয়ার অবশ্য আপাতত কোনো সংস্করণ ভাবছেন না। ক্যাম্পে ডাক পাওয়াটাকেই মানছেন বড় প্রেরণা।

“প্রাথমিক দলে ডাক পাওয়া মানে জাতীয় দলের খুব কাছাকাছি থাকা। এটাই আমার জন্য বড় অনুপ্রেরণা। গত বছর দুয়েক যে পরিশ্রম করছি, সেটার পুরস্কার। ক্যাম্পে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করব। মূল দলে জায়গা পেলে ভালো, না পেলেও সমস্যা নেই। এখন তো জানলাম আমি বিবেচনায় আছি, মানে যে কোনো সময়ই সুযোগ আসতে পারে। তখন যেন প্রস্তুত থাকি, সেই চেষ্টা করব।”

বাংলাদেশের বাস্তবতায় দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে থাকাদের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মানের ফিটনেস ধরে রাখা খুব কঠিন। শাহরিয়ার তবু অনেক ঘাম ঝরিয়েছেন নিজেকে ফিট রাখতে। এবার ফিটনেস নিয়ে আরও নিবিড় ভাবে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন ক্যাম্পে।

কোনো সিরিজের আগে বা মাঝ পথে হুট করে ডাক পাওয়ার চেয়ে আগে ক্যাম্পে ডাক পাওয়াতে বেশি খুশি শাহরিয়ার।

“হাথুরুসিংহের সঙ্গে আমার ২-৩ বার কথা হয়েছে। তাকে আমার বেশ সিস্টেমেটিক মনে হয়েছে। হুট করে কাউকে নিতে চান না, আবার নিলে পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে চান।”

“ক্যাম্পে ডাক পাওয়ায় আমি ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে পারব। বুঝতে পারব কোথায় আছি। নিজের ব্যাটিংটা দেখানোর পর্যাপ্ত সুযোগও পাব। আর দলের কালচারটাও তো এখন পাল্টে গেছে অনেক। ক্যাম্পে থাকায় সেটাও বুঝতে পারব।”

৩১ বছর বয়সে পাওয়া সুযোগটাকে হেলায় হারাতে চান না শাহরিয়ার। প্রত্যয় জানালেন ক্যাম্পে নিজেকে উজার করে দেওয়ার। তবে আপাতত উপভোগ করতে চান মুহূর্তটাকে। ঈদ উৎসবের আগে এমন একটা খবর আনন্দে ভাসিয়েছে শাহরিয়ারের গোটা পরিবারকেও।

“সবশেষ যখন জাতীয় দলে খেলেছি, আমার ছেলেটা ছোট ছিল। এত কিছু বুঝত না। এখন বোঝে। প্রায়ই জিজ্ঞেস করে আমাকে কেন জাতীয় দলে নেয় না। ছেলেটাকে এখন অন্তত কিছু বলতে পারব।”

“জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া একজনের জীবন অনেক কঠিন। আপনারা হয়ত ধারণা করতে পারেন, কিন্তু সেই অনুভূতিটা কখনো বুঝবেন না। আমি হতাশাটা চেপে অনুশীলন করে গেছি। কঠিন এই সময়টায় প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছে আমার স্ত্রী। ওর প্রতিও কৃতজ্ঞতা।”

পরিশ্রমের পুরস্কার পাওয়ার দিনটিতে শাহরিয়ার কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করলেন তার দুই শিক্ষকের কথাও।

“গত কয়েক বছরে সবসময় পাশে পেয়েছি ফাহিম স্যারকে (বিসিবির গেম ডেভেলেপমেন্ট ন্যাশনাল ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন)। নেটে একা একা লড়াইয়ের সময়টায় স্যার অনেক সময় দিয়েছেন আমাকে।”

“আরেকজন আছেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের)। ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলোতে স্যার আমার পড়াশোনা ও ক্রিকেট সব ব্যাপারেই অনেক সাহায্য করেছেন। গত ৩ বছরে বাইরে থাকার সময়ও উৎসাহ দিয়েছেন, বিশ্বাস জুগিয়েছেন। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”