যদিও প্রাথমিক দল, তবু ইংল্যান্ড সিরিজের ৩০ সদস্যের দলে এই ডাক পাওয়াও অপার আনন্দ বয়ে এনেছে শাহরিয়ারের জন্য। ঘরোয়া ক্রিকেটে গত বছর দুয়েকের ধারাবাহিকতার পুরস্কার পেয়েছেন বলেই শুধু নয়, হাসি ফোটাতে পেরেছেন ৯ বছর বয়সী ছেলেটার মুখে!
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে ফোনালাপেও শাহরিয়ারের কণ্ঠে সেই উচ্ছ্বাস স্পষ্ট ধরা পড়ে। ক্যাম্পে ডাক পাওয়ার খবর পেয়েছেন বৃহস্পতিবার দুপুরে, সন্ধ্যায়ও কাটছিল না তার বিস্ময়ের ঘোর।
“আমি অবশ্যই বলছি না যে প্রথম যে বার জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলাম, সেরকম লাগছে। তবে এটাও অসম্ভব ভালো লাগার একটা অনুভূতি। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে আছি, এখনও কাটছে না।”
সদ্য সমাপ্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শাহরিয়ারের পারফরম্যান্স ছিল গড়পড়তা। ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে ১০ ম্যাচে ৩৮.৮৮ গড়ে ৩৫০ রান, শতক ও অর্ধশতক একটি করে। পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট ছিলেন না তিনি নিজেও।
“আমার কাছে মনে হয়েছে, অন্তত ১০০ রান কম হয়েছে। ১০ ম্যাচে সাড়ে চারশ-পাঁচশ রান হলে হয়ত চোখে পড়ার মত কিছু হতো। হয়ত নির্বাচকেরা আমার গত দুই বছরের ধারাবাহিকতা বিবেচনা করেছেন।”
শাহরিয়ার অবশ্য আপাতত কোনো সংস্করণ ভাবছেন না। ক্যাম্পে ডাক পাওয়াটাকেই মানছেন বড় প্রেরণা।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে থাকাদের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মানের ফিটনেস ধরে রাখা খুব কঠিন। শাহরিয়ার তবু অনেক ঘাম ঝরিয়েছেন নিজেকে ফিট রাখতে। এবার ফিটনেস নিয়ে আরও নিবিড় ভাবে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন ক্যাম্পে।
কোনো সিরিজের আগে বা মাঝ পথে হুট করে ডাক পাওয়ার চেয়ে আগে ক্যাম্পে ডাক পাওয়াতে বেশি খুশি শাহরিয়ার।
“হাথুরুসিংহের সঙ্গে আমার ২-৩ বার কথা হয়েছে। তাকে আমার বেশ সিস্টেমেটিক মনে হয়েছে। হুট করে কাউকে নিতে চান না, আবার নিলে পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে চান।”
৩১ বছর বয়সে পাওয়া সুযোগটাকে হেলায় হারাতে চান না শাহরিয়ার। প্রত্যয় জানালেন ক্যাম্পে নিজেকে উজার করে দেওয়ার। তবে আপাতত উপভোগ করতে চান মুহূর্তটাকে। ঈদ উৎসবের আগে এমন একটা খবর আনন্দে ভাসিয়েছে শাহরিয়ারের গোটা পরিবারকেও।
“সবশেষ যখন জাতীয় দলে খেলেছি, আমার ছেলেটা ছোট ছিল। এত কিছু বুঝত না। এখন বোঝে। প্রায়ই জিজ্ঞেস করে আমাকে কেন জাতীয় দলে নেয় না। ছেলেটাকে এখন অন্তত কিছু বলতে পারব।”
“জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া একজনের জীবন অনেক কঠিন। আপনারা হয়ত ধারণা করতে পারেন, কিন্তু সেই অনুভূতিটা কখনো বুঝবেন না। আমি হতাশাটা চেপে অনুশীলন করে গেছি। কঠিন এই সময়টায় প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছে আমার স্ত্রী। ওর প্রতিও কৃতজ্ঞতা।”
“গত কয়েক বছরে সবসময় পাশে পেয়েছি ফাহিম স্যারকে (বিসিবির গেম ডেভেলেপমেন্ট ন্যাশনাল ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন)। নেটে একা একা লড়াইয়ের সময়টায় স্যার অনেক সময় দিয়েছেন আমাকে।”
“আরেকজন আছেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের)। ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলোতে স্যার আমার পড়াশোনা ও ক্রিকেট সব ব্যাপারেই অনেক সাহায্য করেছেন। গত ৩ বছরে বাইরে থাকার সময়ও উৎসাহ দিয়েছেন, বিশ্বাস জুগিয়েছেন। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”