অনন্য সাতের পথে তাহিরের দ্রুততম ‘সেঞ্চুরি’

ইমরান তাহিরের উইকেট উদযাপন মনে করিয়ে দেয় ফুটবলের গোল স্কোরারকে। প্রতিটি উইকেটই তার কাছে উৎসবের উপলক্ষ। দুই হাত দু দিকে উঁচিয়ে খ্যাপাটে দৌড়ে ছুটে বেড়ান মাঠের নানা প্রান্তে। বুধবার তাহিরের স্ট্যামিনার একটা পরীক্ষাও হয়ে গেল সেন্ট কিটসে, এই শারীরিক কসরতে মেতে উঠতে হলো যে বারবার!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2016, 06:03 AM
Updated : 5 Oct 2016, 02:07 PM

প্রথম ৬ ওভারে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। সপ্তম ওভারে তিনটি। পরের দুই ওভারে আরও দুটি। রানের চাপে থাকা ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের স্পিন চাপা দিলেন তাহির। ৯ ওভারে ৪৫ রানে ৭ উইকেট! ৩৪৩ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছে ১৩৯ রানে।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম বোলার হিসেবে তাহির নিয়েছেন ৭ উইকেট, সবচেয়ে কম ম্যাচে ছুঁয়েছেন একশ’ উইকেট।

এই ম্যাচ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ৫৫৬তম ওয়ানডে। কিন্তু ৭ উইকেটের ‘ম্যাজিক’ সংখ্যাটার দেখা এই প্রথম পেলেন তাদের কোনো বোলার।

আগের রেকর্ডটি ছিল কাগিসো রাবাদার। গত জুলাইয়ে অভিষেক ওয়ানডেতেই তরুণ ফাস্ট বোলার ১৬ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলন বাংলাদেশের বিপক্ষে।

ফাস্ট বোলারদের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় স্পিনারদের পরিসংখ্যান খুবই হতশ্রী। তাহিরের আবির্ভাবের পূর্বে ওয়ানডেতে ৫ উইকেটের স্বাদ পেয়েছিলেন কেবল একজন প্রোটিয়া স্পিনারই। ২০০২ সালে কেপ টাউনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২১ রানে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার নিকি বোয়ে।

সেটির এক যুগেরও পর গত ২০১৫ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিডনিতে ৪৫ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তাহির। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই এবার ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকে, ছাড়ালেন দেশের ইতিহাসের সবাইকে।

৭ উইকেট পাওয়ার আগেই অবশ্য এই ম্যাচে আরেকটি জায়গায় ছাড়িয়ে গেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সবাইকে। মারলন স্যামুয়েলসের উইকেটটি ছিল ওয়ানডেতে তাহিরের শততম উইকেট। ৫৮ ম্যাচে মাইলফলক ছুঁয়ে দেশের হয়ে দ্রুততম একশ’ উইকটের রেকর্ড এখন তারই।

ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তাহির জানালেন, রেকর্ডের কথা তার জানাই ছিল না। ম্যাচের আগে দেশ থেকে ফোন করে তার স্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছিলেন রেকর্ডের হাতছানির কথা। রেকর্ডটি একার করে নিতে হলে এই ম্যাচেই দরকার ছিল ২ উইকেট।

৫৯ ম্যাচে একশ ছুঁয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার আগের রেকর্ড ছিল মর্নে মর্কেলের। তাহির এক ম্যাচ আগেই ছুঁলেন মাইলফলক। সব দেশ মিলিয়ে তিনি চতুর্থ দ্রুততম। ৫৩ ম্যাচে একশ’ ছুঁয়ে বিশ্ব রেকর্ড সাকলায়েন মুশতাকের। ৫৪ ম্যাচে ছুঁয়েছিলেন শেন বন্ড, ৫৫ ম্যাচে ব্রেট লি।

তাহির পরে রেকর্ড উদযাপন করেছেন আরও ৫ উইকেট নিয়ে, নতুন কীতি গড়ে। ২০১১ বিশ্বকাপে ৩২ ছুঁই ছুঁই বয়সে শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। অভিষেক ওয়ানডেতে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই নিয়েছিলেন ৪ উইকেট।

হার না মানা, হাল না ছাড়া তাহিরের বয়স এখন পেরিয়ে গেছে ৩৭। এই পথচলায় তিনিও ছাড়িয়ে গেছেন সবাইকে। সংখ্যায় ও মানে সীমিত ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসের সেরা স্পিনার তিনিই। একশ’ উইকেট নেই আর কোনো স্পিনারের। আর মানে তো তার ধারেকাছেও হয়ত ছিল না কেউ!