তিনশর ঠিকানায় হেরাথ

একটি উইকেটের অপেক্ষায় কেটে গেছে প্রথম দিন। অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘায়িত হলো দ্বিতীয় দিনেও। অবশেষে দিনের মাঝামাঝি গড়িয়ে এলো কাঙ্ক্ষিত সেই মুহূর্ত। নিজের বলে স্টিভেন ফিনের ক্যাচটি মুঠোবন্দী করলেন রঙ্গনা হেরাথ নিজেই। পৌঁছলেন ৩০০ টেস্ট উইকেটের  মাইলফলকে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2016, 01:58 PM
Updated : 5 Oct 2016, 02:07 PM

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চেষ্টার-লি-স্ট্রিট টেস্ট শুরু করেছিলেন তিনি ২৯৯ উইকেট নিয়ে। শুক্রবার প্রথম দিনে ২৪ ওভার বল করেও ছিলেন উইকেটশূন্য। বল হাতে ঠিক সুবিধা করতে পারছিলেন না দ্বিতীয় দিনেও। শেষ পর্যন্ত তবু ছুঁতে পারলেন তিনশ।

শ্রীলঙ্কার মাত্র তৃতীয় বোলার হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করলেন হেরাথ। ৮০০ উইকেট নিয়ে সবার অনেকটা ওপরে থেকে টেস্ট ইতিহাসের চূড়ায় মুত্তিয়া মুরালিধরন। শ্রীলঙ্কার হয়ে তার উইকেট অবশ্য ৭৯৫টি। বাকি ৫টি পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে আইসিসি সুপার টেস্টে বিশ্ব একাদশের হয়ে। ৩৫৫ উইকেট চামিন্ডা ভাসের।

শ্রীলঙ্কার হয়ে একশ’ উইকেটই আছে আর মাত্র দুজন বোলারের। লাসিথ মালিঙ্গা নিয়েছেন ১০১ উইকেটে, দিলহারা ফার্নান্দো ১০০টি।

৬৯ টেস্টে তিনশ’ ছুঁলেন হেরাথ। মুরালিধরন এই মাইলফলকে পৌঁছে গিয়েছিলেন ৫৮ টেস্টেই। ভাসের লেগেছিল ৯০ টেস্ট। ৫৬ টেস্টে তিনশ’ উইকেট ছোঁয়ার বিশ্বরেকর্ড অস্ট্রেলিয়ান গ্রেট ডেনিস লিলির।

স্পিনারদের মধ্যে ৩০০ উইকেট শিকারি সপ্তম বোলার হেরাথ, তবে দ্বিতীয় বাঁহাতি স্পিনার। হেরাথের আগে এই ক্লাবের একমাত্র বাঁহাতি স্পিনার সদস্য ছিলেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরি (৩৬২)।

নব্বই দশকেও ৩০০ উইকেট ছিল বেশ বিরল। তবে গত এক যুগে এই ক্লাব পেয়েছেন বেশ কজন সদস্য। হেরাথ যেমন তিনশতে তিরিশতম।

তার পরও হেরাথের ক্যারিয়ার বিবেচনা করলে এই অর্জন অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। কোনো কোনো দিক থেকে অবিশ্বাস্যও। এক সময় তো ১০০ উইকেটও হেরাথের জন্য ছিল দূরের বাতিঘর!

১৯৯৯ সালে অভিষেক। গলে সেই টেস্টে স্টিভ ওয়াহর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একমাত্র ইনিংসে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। তবে মুরালিধরনের ক্যারিয়ার তখন মধ্যগগণে প্রায়। ক্যারিয়ার জুড়েই মুরালিধরনের ছায়ায় ঢাকা পড়তে হয়েছে হেরাথকে। সুযোগই পেয়েছেন মাঝেমধ্যে। প্রথম প্রায় ১১ বছরে খেলতে পেরেছিলেন মোটে ২২ টেস্ট!

অবশেষে যখন মুরালিধরনের সময় ফুরোলো, সময় এলো হেরাথের। ২০১০ সালের জুলাইয়ে অবসরে গেলেন মুরালিধরন, হেরাথের বয়স ততদিনে পেরিয়ে গেছে ৩২। অন্য অনেকে হলে হয়ত হালই ছেড়ে দিতেন। হেরাথ নতুন জীবন পাওয়ার মতোই শুরু করেছেন নতুন উদ্যমে।

ক্যারিয়ারের প্রথম ভাগের যত না পাওয়া গত কয়েক বছরে যেন সুদে-আসলে তুলে নিয়েছেন। মুরালির জমানায় ২২ টেস্টে হেরাথের উইকেট ছিল মাত্র ৭১টি। গড় ছিল ৩৭.৮৮, স্ট্রাইক রেট ৭৫.৮০ আর ৫ উইকেট ছিল চারবার।

মুরালিধরনের অবসরের পর বিশ্ব ক্রিকেটেই সফলতম স্পিনার হেরাথ। চলতি টেস্টসহ এই সময়ে ৪৭ টেস্টে নিয়েছেন ২২৯ উইকেট। গড় ২৭.৬১, প্রতি ৬১ বলে নিয়েছেন একটি করে উইকেট। এই সময়ে বিশ্ব ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট (১৯) ও ১০ উইকেট (৫) পেয়েছেন তিনিই।

২৯৭ উইকেট নিয়ে সিরিজ শুরু করেছিলেন হেরাথ। প্রথম টেস্টে হেডিংলিতে একমাত্র ইনিংসে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। দ্বিতীয় টেস্টে হয়ে গেল তিনশও।

বয়স পেরিয়েছে ৩৮। ইংল্যান্ড সফরের আগে বলেছিলেন, ৩০০ উইকেট স্পর্শ করার পর ক্যারিয়ার নিয়ে আর ব্যক্তিগত লক্ষ্য থাকবে না। তবে এখনই স্বস্তি দিতে চান না ব্যাটসম্যানদের। খেলে যেতে চান টেস্ট ক্রিকেটে। এই বছর বেশ কটি টেস্ট খেলবে শ্রীলঙ্কা, অংশ হতে চান সবকটির।