মাশরাফি বিন মুর্তজার মত একটা হ্যাটট্রিকের হাতছানি ছিল সাকিব আল হাসানের সামনেও। আগের দুই বিপিএলেই শিরোপা জয়ী অধিনায়ক ছিলেন মাশরাফি আর দুইবার টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছিলেন সাকিব।
Published : 16 Dec 2015, 04:01 PM
‘মাশরাফি ভাই সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন’
অভিজ্ঞতার মূল্য জেনেই অলককে নিয়েছিলেন মাশরাফি
ইমরুলের কথা মনে করিয়ে দিলেন মাশরাফি
‘টেকনিক্যালি দুর্দান্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ’
কোচ সালাউদ্দিনকে কৃতিত্ব দিলেন মাশরাফি
মঙ্গলবারের ফাইনাল জিতে টানা তৃতীয় শিরোপা জিতেছেন অধিনায়ক মাশরাফি। তবে হ্যাটট্রিক টুর্নামেন্ট সেরা হতে পারেননি সাকিব। বিপিএলের তৃতীয় আসরের টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অলরাউন্ডার আসহার জাইদি।
অবশ্য সাকিবের হ্যাটট্রিক যে হচ্ছে না, সেটা স্পষ্ট হয়েছিল ফাইনালের আগেই। বল হাতে এবারও যথেষ্টই ভালো করেছেন সাকিব, ১১ ম্যাচে ১৮ উইকেট। তবে ব্যাট হাতে ১১ ইনিংসে ১৭ গড় ও ১০৩.৮১ স্ট্রাইক রেট রান করেছেন মাত্র ১৩৬। অন্য অনেকের জন্যই এই পারফরম্যান্স বেশ ভালো হলেও সাকিব যে নিজের মানদণ্ড বেধে দিয়েছেন অনেক উঁচু তারে! ফাইনালের আগেই তাই টুর্নামেন্ট সেরার লড়াই থেকে অনেকটা ছিটকে গিয়েছিলেন সাকিব।
লড়াইয়ে ছিলেন আবু হায়দার রনি। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বাঁহাতি পেসারকে বলা যায় এবারের বিপিএলের সবচেয়ে বড় চমক। টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন, তার দারুণ কিছু ডেলিভারি লেগে আছে সবার চোখে। ফাইনালের আগে ১১ ম্যাচে ছিল ২১ উইকেট। তবে ফাইনালে পাননি একটিও।
ফাইনালে দুই উইকেট নিয়ে আবু হায়দারকে ছড়িয়ে এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি কেভন কুপার (২২)। আবু হায়দারের চেয়ে তিন ম্যাচ কম খেলেই পেয়েছেন বেশি উইকেট। এছাড়া ব্যাট হাতে ছোট্ট কয়েকটি কার্যকরী ইনিংসও খেলেছিলেন।
ফাইনালে দারুণ কিছু করলে এমনকি টুর্নামন্ট সেরা হতে পারতেন আল আমিন হোসেনও। এবার টুর্নামেন্টের একমাত্র হ্যাটট্রিক তার, ফাইনালের আগে ঝুলিতে ছিল ১৭ উইকেট। তবে ফাইনালে বরিশালের এই বোলার উইকেটশূন্য। ব্যাটে-বলে সময়মত অবদান রাখা আর অসাধারণ অধিনায়কত্ব মিলিয়ে টুর্নামেন্ট সেরা হতে পারতেন মাশরাফি কিংবা মাহমুদউল্লাহও।
তবে তাদের সবাইকে ছাপিয়ে এবারের বিপিএলের ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট হয়েছেন আসহার জাইদি। আর তাতে প্রশ্নের অবকাশ আছে সামান্যই।
টুর্নামেন্টে ১১টি ম্যাচ খেলেছেন, ব্যাটে-বলে একসঙ্গে ব্যর্থ হননি কোনো ম্যাচেই। দারুণ ধারাবাহিকতায় নিয়েছেন ১৭ উইকেট, ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন মাত্র ৪.৭৮। ব্যাট হাতে ৫৩.৭৫ গড়ে ২১৫ রান, স্ট্রাইক রেট ১৩৮.৭০।
এই পরিসংখ্যান ছাপিয়েও ছিল কুমিল্লার পারফরম্যান্সে তার অবদান। বেশ কটি ম্যাচে ছিলেন জয়ের নায়ক কিংবা পার্শ্বনায়ক। প্রাথমিক পর্বে বরিশাল বুলসের বিপক্ষে নিয়েছিলেন ১৬ রানে ৩ উইকেট। ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ২৯ বলে ৪৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসে হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। সিলেট সুপার সুপার স্টার্সের বিপক্ষে দলের বিপর্যয়ে নেমে খেলেছেন ৩৬ বলে ৫৩ রানের ইনিংস। প্রতি ম্যাচেই করেছেন দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং।
তবে সেরাটা জমা রেখেছিলেন কোয়ালিফায়ারের জন্য। ১৫ বলে ৪০ রানের টর্নোডো ইনিংসে ভড়কে দিয়েছিলেন রংপুর রাইডার্সকে। এরপর বল হাতেও ১১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। ফাইনালে ১৬ রানের পাশাপাশি ১টি উইকেট।
অথচ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে একটুও আলোচনায় ছিলেন না ৩৪ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার। করাচিতে জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার এখন থিতু ইংল্যান্ডে। পাকিস্তানে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন বছর দশেক। এরপর ইংল্যান্ডে খেলছিলেন ল্যাঙ্কাশায়ার লিগে। সেই সময়ই ট্রায়াল দিয়েছেন বিভিন্ন কাউন্টি দলে। গত মৌসুমের আগে পেয়ে যান সাসেক্সে কাউন্টি দলের চুক্তি। পেয়ে গেছেন ব্রিটিশ পাসপোর্টও।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে তার পরিচয় অবশ্য নতুন নয়। গত দুই মৌসুমে ঢাকা লিগে খেলেছেন গাজী ট্যাংক ক্রিকেটার্স ও পরে সেই দলের রূপান্তরিত নাম লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জে।
দুই বারই পারফর্ম করেছেন মোটামুটি। ২০১৩-১৪ মৌসুমে ১০ ম্যাচে ছিল ১৬৭ রান ও ১৩ উইকেট। পরের বার ১৪১ রানের একটি ইনিংস খেললেও বাকি ১১ ম্যাচে পঞ্চাশ ছুঁতে পেরেছিলেন মাত্র একবারই। আর ১২ ম্যাচে উইকেট ছিল মাত্র ৮টি।
সেই জাইদি এবার নিজেকে চেনালেন নতুন করে। টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার তার প্রাপ্য স্বীকৃতিই!