অস্ট্রেলিয়ার পূর্ণতা নাকি নিউ জিল্যান্ডের প্রথম?

ওয়ানডে বিশ্বকাপের সফলতম দল অস্ট্রেলিয়া। তবে সীমিত ওভার ক্রিকেটের আরেক সংস্করণে তাদের ভাণ্ডার শূন্য। এক দশকের বেশি সময় পর আবার সেই অপূর্ণতা ঘোচানোর সুযোগ তাদের সামনে। প্রতিবেশী নিউ জিল্যান্ডের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ দিনের। শূন্যতা আরও বেশি। সবচেয়ে ধারাবাহিক দলগুলোর একটি হলেও জেতা হয়নি সীমিত ওভারে কোনো সংস্করণের বিশ্ব শিরোপা। তাসমান সাগর পাড়ের দুই দেশের লড়াইয়ে এবার টি-টোয়েন্টি পাবে নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতদুবাই থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2021, 04:44 AM
Updated : 14 Nov 2021, 10:20 AM

দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে রোববার ফুরোবে এক দলের অপেক্ষা, দীর্ঘায়িত হবে আরেক দলের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ড। খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়।

দ্বিতীয়বারের মতো কোনো বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ড। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুই দলের প্রথম আগের লড়াইয়ে সেই সময়ের উড়ন্ত প্রতিবেশীদের মাটিতে নামিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ানরা। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে পাঁচটি বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়া ২০ ওভারের বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠতে পেরেছে আগে কেবল একবার। ২০১০ আসরে তাদেরকে হারিয়ে প্রথম বৈশ্বিক শিরোপা পায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড।

চলতি আসরের আগে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে বাজি ধরার লোক খুব একটা ছিল না। বিশ্বকাপের আগে টানা পাঁচটি সিরিজ হারে ভারত, ইংল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশের বিপক্ষে। তবে বড় টুর্নামেন্টের দল অস্ট্রেলিয়া ঠিকই ছন্দ ফিরে পায় ঠিক সময়ে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শুরু করে বিশ্বকাপ। পরে অবশ্য হেরে যায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

ওই হারের পর আর পিছনে তাকাতে হয়নি অ্যারন ফিঞ্চের দলকে। ফাইনালের লড়াইয়ে নামার আগে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক জানালেন, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিদের বিপক্ষে ওই হার বদলে দিয়েছিল তাদের।

“ওই হার অবশ্যই খুব হতাশাজনক ছিল। আমরা নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স সেদিন করতে পারিনি। তবে এখানে এসে কোয়ারেন্টিন ও পরে কঠিন কিছু অনুশীলন সেশনের পর টুর্নামেন্টের প্রথম সপ্তাহ ছিল খুব ক্লান্তিকর। এরপর দুটি দিনের বিশ্রাম ও গুছিয়ে নেওয়া জরুরি ছিল।”

“শারীরিক ও মানিসকভাবে সতেজ হয়ে ওঠা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আগ্রাসী ক্রিকেটের প্রতি অটল থাকা নিয়ে আমরা এই সময়ে কথা বলেছি। আমরা অনুভব করছিলাম, ওই ম্যাচে আমরা হয়তো কিছুটা ভীতি নিয়ে খেলেছিলাম এবং বিশেষ করে ক্রিস ওকস পাওয়ার প্লেতে আমাদের ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। সে ইংল্যান্ডকে ভালো একটা শুরু এনে দেয়। আমরা আগ্রাসী থাকা নিয়ে কথা বলছিলাম।”     

সেভাবেই খেলে পরের ম্যাচে বাংলাদেশকে স্রেফ উড়িয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত রান রেটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পেছনে ফেলে পরে জায়গা করে নেয় সেমি-ফাইনালে। এরপর টুর্নামেন্টে অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটতে থাকা পাকিস্তানকে শেষ চারে থামিয়ে পৌঁছায় তারা ফাইনালে।

ফিঞ্চ জানালেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম শিরোপা জেতার জন্য কতটা উন্মুখ তারা।

“সবাই আমাদের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের নিজেদের মধ্যে বিশ্বাস ছিল। আমরা যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি, যেভাবে আমাদের কৌশলগুলো এক সঙ্গে কাজে লাগছে তাতে আমার খুবই আত্মবিশ্বাসী।”   

“আমার মনে হয় না, এটা (ট্রফি জয়) প্রত্যাশার বাইরে কিছু। আমরা টুর্নামেন্ট জিততে পরিষ্কার একটি পরিকল্পনা নিয়ে এসেছি। বিশ্বাস করি, তা করার মতো একটি স্কোয়াড আমাদের রয়েছে।”

অস্ট্রেলিয়ার মতো অতটা কঠিন ছিল পথ পেরিয়ে আসতে হয়নি নিউ জিল্যান্ডের। ভারত, পাকিস্তানের গ্রুপ থেকে শেষ চারে জায়গা করে নিয়েই সামর্থ্যের বড় একটা প্রমাণ দিয়েছে দলটি। শুধু এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই নয়, তিন সংস্করণেই তাদের পারফরম্যান্স দারুণ। টানা তিন বছরে খেলছে তিন সংস্করণে আইসিসির তিন ইভেন্টের ফাইনালে। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালের পর সুপার ওভারও টাই হওয়ায় তারা হেরে যায় কেবল বাউন্ডারি কম মারায়। গত জুনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরের ফাইনালে ভারতকে হারায় ৮ উইকেটে। এবার তাদের সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের হাতছানি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আগে দুইবার সেমি-ফাইনালে খেললেও এবারই প্রথম ফাইনালে খেলছে নিউ জিল্যান্ড। ওয়ানডেতে আটবার সেমি-ফাইনালে খেলা দলটি সবশেষ দুই আসরে হয় রানার্সআপ। ২০১৫ আসরে প্রথমবার ফাইনালে ওঠে দলটির স্বপ্ন ভেঙেছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই হেরে।

এরপর থেকে অনেক এগিয়েছে নিউ জিল্যান্ডের ক্রিকেট। লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে পা রেখেছে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের কাছে ফাইনালটি আরেকটি সুযোগ।

“আগামীকাল আবার ভিন্ন কিছু হতে হতে যাচ্ছে। আমরা সেদিক তাকিয়ে আছি। নিজেদের ক্রিকেটর দিকেই আমাদের মনোযোগ। আমরা জানি, অস্ট্রেলিয়া দল কতটা শক্তিশালী। আগামী কাল আমরা সুযোগ কাজে লাগানোর দিকে তাকিয়ে আছি।”

“(শিরোপা জিততে পারলে) এটা হবে দারুণ এক অর্জন। আমাদের সামনে একটি ম্যাচ বাকি। নিজেদের ক্রিকেটে মনযোগ দেওয়া ও (পরিকল্পনা) বাস্তবায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য।”

প্রতিবেশী দুই দেশ প্রায়ই পরস্পরের মুখোমুখি হয়। তাই কারো অন্দর-বাহির জানতে কোনো দলের বাকি থাকে না। এ কারণে, কোনো দল বাড়তি সুবিধা পাবে বলে মনে করেন না উইলিয়ামসন।

“সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বেশ কিছু ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছি এবং এর কয়েকটিতে দারুণ লড়াই হয়েছে। বিশ্বের অন্য প্রান্তে আমরা দুই প্রতিবেশী দেশ একটি বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছি, এটা দারুণ ব্যাপার। দুই দলের জন্যই এটা খুব রোমাঞ্চকর ব্যাপার।”

বিশ্বকাপে এর আগে কেবল একটি ম্যাচেই মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। সেই ম্যাচে ৮ রানে জিতেছিল নিউ জিল্যান্ড। গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে দুই দলের সবশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজেও জয়ের হাসি হেসেছিল তারা। সেবার সিরিজ জিতেছিল ৩-২ ব্যবধানে।

এবার আরও বড় মঞ্চে মুখোমুখি দুই দল। সেখানে হাসি দেখা যাবে কাদের মুখে? তাসমান সাগর পাড়ের দুই দেশের লড়াইয়ে ঘুচবে অস্ট্রেলিয়ার অপূর্ণতা? নাকি প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে মেতে ওঠবে নিউ জিল্যান্ড?