অপ্রতিরোধ্য পাকিস্তানের সামনে উজ্জীবিত অস্ট্রেলিয়া

ভারতকে হারিয়ে নিজেদের সবচেয়ে কঠিন গেরো কাটানো পাকিস্তানের সামনে এবার অস্ট্রেলিয়া-পরীক্ষা। তাসমান সাগর পাড়ের এই দেশটির বিপক্ষে যে কখনও বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে জেতা হয়নি পাকিস্তানের। ফাইনালে যেতে তাই বাবর আজমদের সামনে আবার গেরো কাটানোর চ্যালেঞ্জ। অন্য দিকে, দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে যেতে আসরের একমাত্র অপরাজিত দলকে পেরিয়ে যাওয়ার কঠিন পরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতদুবাই থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2021, 07:54 AM
Updated : 11 Nov 2021, 07:54 AM

দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান। খেলা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়।

সব ম্যাচ জিতে গ্রুপ সেরা হয়ে শেষ চারে এসেছে পাকিস্তান। রান রেটে দ্বিতীয় হয়ে সেমি-ফাইনালে আসা অ্যারন ফিঞ্চের অস্ট্রেলিয়া হেরেছে কেবল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

বিশ্বকাপের আগে কী কঠিন পরিস্থিতিই না ছিল পাকিস্তানের। দল ঘোষণার দিন সরে দাঁড়ান প্রধান কোচ মিসবাহ-উল-হক ও বোলিং কোচ ওয়াকার ইউনুস। নিরাপত্তা শঙ্কায় সিরিজ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে পাকিস্তান ছেড়ে চলে যায় নিউ জিল্যান্ড। পরে সফর করেনি ইংল্যান্ডও।    

ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচ হয়ে আসেন সাকলায়েন মুশতাক। কোচিং স্টাফে যোগ দেন ম্যাথু হেইডেন ও ভার্নন ফিল্যান্ডার। তারা একটি দল হিসেবে গড়ে তুলেন পাকিস্তানকে। 

প্রথম ঘোষিত দল নিয়ে হয় প্রবল সমালোচনা। সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকেই প্রকাশ্যে ওই দলের বিরোধিতা করেন। পরে তিনটি পরিবর্তন এনে ফেরানো হয় সরফরাজ আহমেদ, হায়দার আলি ও ফখর জামান। সোহেব মাকসুদ সময়মতো সেরে না ওঠায় নাটকীয়ভাবে দলে আসেন শোয়েব মালিক।

এমন পরিস্থিতিতে আগে অনেকবার দিক হারালেও এবার শুরু থেকেই কক্ষপথে আছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপে কোনো সংস্করণে যাদের কখনও হারাতে পারেনি সেই ভারতকে ১০ উইকেটে হারিয়ে শুরু করে অভিযান।

বিশ্বকাপের আগে তিনটি সিরিজ মোটেও ভালো কাটেনি অস্ট্রেলিয়ার। নিউ জিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশ সফরে ব্যর্থতায় অবশ্য নড়ে যায়নি তাদের আত্মবিশ্বাস। চোট থেকে সেরে ওঠতে অস্ত্রোপচার করানোয় মাঠের বাইরে ছিলেন অধিনায়ক ফিঞ্চ। আইপিএল দল জায়গা হারিয়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। চোট শঙ্কায় পড়েছিলেন মার্কাস স্টয়নিস। লকডাউনের জন্য স্থানীয় ক্লাবে অনুশীলন করতে হয়েছিল অ্যাডাম জ্যাম্পাকে।

সে সব পেছনে ফেলে জয় দিয়েই বিশ্বকাপ শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। পরে হারে কেবল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তবে চারটি জয়ের পরও শঙ্কা ছিল সুপার টুয়েলভ থেকে বিদায় নেওয়ার। শেষ পর্যন্ত শ্রেয়তর রান রেটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পেছনে ফেলে শেষ চারে পৌঁছায় দলটি।

তাদের এই অগ্রযাত্রায় সবচেয়ে বড় অবদান বোলারদের। মূল বোলারদের সবাই রান দিয়েছেন ওভার প্রতি আটের নিচে। বোলিংয়ে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অ্যাডাম জ্যাম্পা। ৫ ম্যাচে ১০ এর কম গড়ে নিয়েছেন ১১ উইকেট। ইকোনমি রেট কেবল ৫.৭৩। জশ হেইজেলউড নিয়েছেন আট উইকেট, মিচেল স্টার্ক সাতটি।

বেশিরভাগ ম্যাচে চার বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে খেলছে অস্ট্রেলিয়া। তাদের পঞ্চম বোলার হতে পারেন পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানদের লক্ষ্য। তারা আছেন দারুণ ছন্দে। বিশেষ করে দুই ওপেনার বাবর ও রিজওয়ান।

অসাধারণ ধারাবাহিকতায় টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের র‌্যাঙ্কিংয়ের চূড়ায় ফিরেছেন অধিনায়ক বাবর। ক্রিস গেইলকে ছাড়িয়ে এক পঞ্জিকাবর্ষে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছেন কিপার-ব্যাটসম্যান রিজওয়ান।

এই দুই ব্যাটসম্যান রানে থাকলেও পাকিস্তানকে ভোগাচ্ছিল পরের ব্যাটসম্যানদের ছন্দহীনতা। রান আসছিল না মিডল অর্ডার থেকে। বিশ্বকাপ আসতেই যেন রান ফিরেছে তাদের ব্যাটে।

শোয়েব মালিক, মোহাম্মদ হাফিজ কিংবা আসিফ আলি দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনের সময়। কার্যকর এক ব্যাটিং লাইন আপের সঙ্গে পাকিস্তানের আছে দুর্দান্ত একটি বোলিং আক্রমণ।

হাসান আলি ছাড়া সবাই রান দিয়েছেন আটের নিচে। দুই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার ইমাদ ওয়াসিম ও শাদাব খান রান দিয়েছেন ছয়ের নিচে। সাতের নিচে রান দিয়েছেন পাঁচ ম্যাচেই চার ওভার করে বোলিং করা শাহিন শাহ আফ্রিদি ও হারিস রউফ।

বার দুয়েক ভেন্যু পরিবর্তন করে বুধবার দুপুরে দুবাই আইসিসি ক্রিকেট একাডেমিতে অনুশীলন করে ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ের প্রস্তুতি সেরেছে অস্ট্রেলিয়া। একই জায়গায় পাকিস্তানের অনুশীলন সন্ধ্যায়।

প্রতিপক্ষ বুঝে আগের ম্যাচগুলোতে একাদশে পরিবর্তন এনেছে অস্ট্রেলিয়া। তবে সুপার টুয়েলভে পাঁচ ম্যাচই একাদশ নিয়ে খেলেছে পাকিস্তান। ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে কোনো পরিবর্তন আনবে কী না সেটা সময়ই বলে দিবে। তবে নক আউট পর্বে যে ভাগ্য বদল করতে চাইবে দলটি তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

১৯৮৭ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো নক আউট পর্বে মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান। সেমি-ফাইনালে জিতে সেবার নিজেদের প্রথম শিরোপা জেতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের সফলতম অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯৯ সালে ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে জেতে দ্বিতীয় শিরোপা।

ওয়ানডে বিশ্বকাপ সবশেষ নক আউট পর্বে মুখোমুখি হয় ২০১৫ সালে। সেবার কোয়ার্টার-ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে পরে নিজেদের পঞ্চম শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এমন লড়াই হয়েছে একবারই, ২০১০ সালে। সেমি-ফাইনালে সেবার পাকিস্তানকে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এখন পর্যন্ত সেটাই তাদের একমাত্র ফাইনাল। এবার কি হবে দ্বিতীয়? নাকি পাকিস্তান পারবে আরেকটি গেরো কাটাতে? 

অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে রাজি নন। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে জানালেন, পাকিস্তানের বিপক্ষে নক আউট পর্বের আগের ম্যাচগুলো নিয়ে একদমই ভাবছেন না তারা।

“আমার মনে হয়, পাকিস্তান খুব ভালো ছন্দে আছে। তারা টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলে সবকটিতে জিতেছে। টুর্নামেন্ট জুড়ে খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছে। আমার মনে হয় না, ইতিহাস নিয়ে খুব বেশি কিছু ভাবার আছে। সত্যি বলতে, অতীতে যারা খেলেছে তার থেকে এখনকার দলটা আলাদা। তাই এটা নিয়ে খুব গভীর কিছু ভাবার নেই।”