নিউ জিল্যান্ডের নায়ক ‘দা অ্যাকসিডেন্টাল ওপেনার’

বিশ্বকাপের আগে নিউ জিল্যান্ড দলে ড্যারিল মিচেলের ভূমিকা ছিল ‘ফিনিশার।’ তা বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে তিনি খেলার ‘ফিনিশ’ করলেন বটে। তবে মাঝে কিংবা শেষ দিকে উইকেটে গিয়ে নয়, শুরুতে নেমে। এই বিশ্বকাপে যে বদলে গেছে তার পরিচয়! নতুন পরিচয়ে নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরে নিউ জিল্যান্ডের ফাইনালে ওঠার নায়ক মিচেল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2021, 03:45 AM
Updated : 11 Nov 2021, 03:45 AM

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে বুধবার ৪৭ বলে ৭২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন মিচেল। ওপেন করতে নেমে মাঠ ছাড়েন তিনি দলের জয় সঙ্গে নিয়ে। অথচ এই বিশ্বকাপের আগে টি-টোয়েন্টি কখনোই ওপেন করেননি ৩০ বছর বয়সী ক্রিকেটার!

এই দলে তিনি ছিলেন মূলত পাঁচ-ছয়-সাত নম্বরের ব্যাটসম্যান। আগ্রাসী ব্যাটিং আর প্রয়োজনের সময় কাজে লাগানোর মতো পেস বোলিং মিলিয়ে কার্যকর অলরাউন্ডার। ঘরোয়া ক্রিকেটে অবশ্য তিন-চারেও ব্যাট করেছেন নানা সময়ে। তবে জাতীয় দলে ফিনিশারের ভূমিকা তার আর জিমি নিশামের। সব বদলে যাওয়ার শুরু বিশ্বকাপের আগে। আইপিএলের জৈব-সুরক্ষা বলয় থেকে টিম সাইফার্ট দেরিতে ফেরায় প্রস্তুতি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওপেন করতে পাঠানো হয় মিচেলকে। সেদিন ২২ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।

ওই ম্যাচেই মিচেলকে নতুনভাবে খুঁজে পান কোচ গ্যারি স্টেড ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। এমনিতে তাকে যথেষ্ট ভালোভাবে জানেন তারা। তবে এই সংস্করণে ওপেনার হওয়ার রসদ যে তার আছে, সেটি বোঝা যায় ওই ম্যাচে। যদিও তখনও দলের পরিকল্পনায় বদলায়নি। দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওপেন করেন সাইফার্ট, মিচেল ফিরে যান ছয় নম্বরে।

কিন্তু এরপর আবার তলপেটের চোটে বাইরে ছিটকে যান সাইফার্ট। ব্যস, কোচ-অধিনায়কের মনে পড়ে মিচেলকে। বিশ্বকাপে দলের প্রথম ম্যাচে মার্টিন গাপটিলের সঙ্গে ওপেন করতে পাঠানো হয় তাকেই। ঘরোয়া-আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ক্যারিয়ারের ১১৬ টি-টোয়েন্টিতে কখনও ওপেন না করা ব্যাটসম্যান ওপেন করতে নেমে যান বিশ্বকাপে।

প্রথম সুযোগেই মিচেল দেখান নতুন দায়িত্বে তার সামর্থ্যের ঝলক। বড় কোনো ইনিংস অবশ্য খেলতে পারেননি। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২ ছক্কায় ২০ বলে ২৭ রানের ইনিংসে তিনি বুঝিয়ে দেন, কাজটা তিনি পারেন। পরের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে দলের দারুণ জয়ে খেলেন ৩৫ বলে ৪৯ রানের ইনিংস।

সেদিন ফিফটি না পেলেও পেয়ে গেলেন আরও বড় মঞ্চে। দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ফাইনালে তুললেন দলকে। ম্যাচের নামা মোড় পেরিয়ে, রোমাঞ্চের ঢেউয়ে ভেসে দলকে জিতিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিয়ে বললেন ভালো লাগার কথা।

“অনেক কিছু হয়ে গেছে…শেষ পর্যন্ত আসল কাজটা করতে পেরে এবং শেষ লড়াইয়ের মঞ্চে নিজেদের নিতে পেরে ভালো লাগছে।”

৪টি করে চার-ছক্কায় সাজানো ১৫৩ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটির বেশির ভাগ সময় অবশ্য মিচেল ছিলেন শান্ত। শুরুতে ছন্দ পেতেই তার সময় লেগেছে। প্রথম চার ওভারে তিনি খেলতে পারেন কেবল চার বল। এরপর বল খেললেও টাইমিং ঠিকমতো করতে পারছিলেন না।

১০ ওভার শেষে তার রান ছিল ২৩ বলে ২২। শেষ ১০ ওভারে নিউ জিল্যান্ডের লাগত ১০৯ রান!

টি-টোয়েন্টি খেলা বদলে যেতে যেমন সময় লাগে না, উইকেটে থাকা ব্যাটসম্যানেরও বদলাতে সময় লাগে না। ডেভন কনওয়ে (৩৮ বলে ৪৬) আর মিচেলের ব্যাটে একটু একটু করে বদলাতে থাকে ম্যাচের চিত্র। জিমি নিশামের ৩ ছক্কায় ১১ বলে ২৭ রানের ক্যামিও নিউ জিল্যান্ডকে জোগায় বিশ্বাস। ৪ ওভারে ৫৭ রানের সমীকরণ চলে আসে কাছাকাছি।

নিশামের ঝড়ে ক্রিস জর্ডানের এক ওভারে আসে ২৩ রান। পরে আদিল রশিদের ওভারে ১৪ রান এলেও আউট হয়ে যান নিশাম। দায়িত্ব তখন মিচেলের। ২ ওভারে প্রয়োজন ২০ রান। ইংল্যান্ড আক্রমণে আনে তাদের পেস আক্রমণের মূল ভরসা ক্রিস ওকসকে। তার ওই ওভারেই দুটি ছক্কা একটি চারে ২০ রান নিয়ে খেলা শেষ করে দেন মিচেল।

এক ওভার আগেই খেলা শেষ, অথচ ১৬ ওভার শেষেও নিউ জিল্যান্ডের জয়ের জন্য লাগত ওভারপ্রতি প্রায় ১৫ রানের মতো! ম্যাচের পর মিচেল বললেন, সমীকরণ কঠিন হলেও বিশ্বাস কখনও হারাননি তারা।

“একটু অদ্ভূত শোনাতে পারে, তবে কখনোই মনে হয়নি, ম্যাচটি আমাদের নাগালের বাইরে। বিশেষ করে, এক পাশের বাউন্ডারি ছিল ছোট। আমাদের মনে হয়েছে, শেষ দিকে পরিস্থিতি আমাদের পক্ষে আনার সুযোগ থাকতে পারে। আর হ্যাঁ, কয়েকটা সময় তো ভাগ্যও পাশে ছিল। গোটা দুই ছক্কা হয়েছে, যা এক-দুই মিটার কম হলেই আমরা আউট হতে পারতাম।”

“তবে আমাদের সবসময়ই মাথায় ছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা জানি যে নির্দিষ্ট সমীকরণ মেলাতে পারব, ততক্ষণ আমাদের সুযোগ থাকবেই। নিশ (নিশাম) উইকেটে গিয়ে যেভাবে এক ওভার দাপট দেখিয়েছে, সেটিই আসলে শেষের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। ওকে কুর্নিশ, অসাধারণ ইনিংস খেলেছে।”

তবে এখনই উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছেন না মিচেল। এই জয় পুরোপুরি উদযাপন করে নিজেদের দ্রুত গুছিয়ে নেমে পড়তে চান ফাইনাল জয়ের চ্যালেঞ্জে।

“দেখুন, আমরা একদল কিউই… মাত্র ৫০ লাখের মতো মানুষ আমাদের, দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমরা গর্বিত। আজকে রাতে আমরা উদযাপন করব, অবশ্যই এই সাফল্য উপভোগ করব যতটা সম্ভব, তার পর দ্রুত সামনে তাকাব।”

“আমরা জানি, রোববার একটি ফাইনাল আছে। যাকেই আমরা সামনে পাই, আশা করি উপভোগ্য হবে। নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দেব আমরা। এরপর কিছু ব্যাপার তো থাকেই, যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। দেখা যাক, কী হয়।”