শেষ হয়েও হলো না গেইলের শেষ

বিদায়ী আয়োজন তো হলো, কিন্তু বিদায়ের ঘোষণা তো হলো না! অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচের পর ক্রিস গেইলকে নিয়ে এটিই ছিল প্রশ্ন। শেষ পর্যন্ত সেই কৌতূহল মেটালেন ক্যারিবিয়ান মহাতারকা। ঘরের মাঠ জ্যামাইকায় নিজের দর্শকদের সামনে বিদায়ী ম্যাচ খেলে অবসর নিতে চান তিনি। সেই সুযোগ না পেলে, এখানেই সমাপ্তি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2021, 04:57 AM
Updated : 7 Nov 2021, 04:57 AM

এবারের বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিজেদের শেষ ম্যাচটি খেলে শনিবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। এই ম্যাচে ৯ বলে ১৫ করে আউট হয়ে যাওয়ার সময় হাসি মুখে ব্যাট উঁচিয়ে মাঠ থেকে বের হন তিনি। ডাগআউটে সতীর্থরাও তাকে অভিবাদন জানান। তাকে জড়িয়ে ধরেন ডোয়াইন ব্রাভো, আন্দ্রে রাসেল, জেসন হোল্ডাররা।

পরে ফিল্ডিংয়ে নামার সময় ব্রাভো ও গেইলকে ‘গার্ড অব অনায়’ দেয় সতীর্থরা। এই বিশ্বকাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন ব্রাভো। ম্যাচের পর অস্ট্রেলিয়ানরা ‘গার্ড অব অনার’ দেয় গেইল ও ব্রাভোকে।

সবকিছুতেই ফুটে ওঠে বিদায়ের ছাপ। কিন্তু মুখ ফুটেও তো সেটা বলতে হবে! ম্যাচের পর আইসিসি ডিজিটালে আলাপচারিতায় শেষ পর্যন্ত নিজের পরিকল্পনা খোলাসা করলেন গেইল।

“আমি স্রেফ উপভোগ করার চেষ্টা করছিলাম। আমাদের জন্য বিশ্বকাপটি ছিল হতাশার। আমার জন্যও, সম্ভবত সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ। তবে এসব ক্রিকেটে হয়ই। যা হয়েছে, সবকিছু একপাশে রেখে আজকে মজা করার চেষ্টা করেছি। গ্যালারির দর্শকদের সঙ্গে জমিয়ে তোলা বা এসব, যেহেতু এটা বিশ্বকাপে আমার শেষ ম্যাচ।”

“অসাধারণ এক ক্যারিয়ার… আমি সত্যি বলতে, অবসর ঘোষণা করিনি। তারা যদি আমাকে আরেকটি ম্যাচ দেয় জ্যামাইকায় ঘরের দর্শকদের সামনে, তাহলে আমি বলতে পারি, ‘সবাইকে ধন্যবাদ।’ দেখা যাক…আমি তখন ডিজে ব্রাভোর সঙ্গে যোগ দিয়ে সবাইকে ধন্যবাদ জানাব। তবে এখনই তা বলতে পারছি না…”

ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে ১৯৯৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু। পরে ছাপ রাখেন তিনি টেস্ট ক্রিকেটেও। ওয়ানডেতে রান করেছেন প্রায় সাড়ে ১০ হাজার, ২৫টি সেঞ্চুরিতে আছে একটি ডাবল সেঞ্চুরিও। টেস্টে রান করেছেন ৭ হাজারের বেশি। একাধিক ট্রিপল সেঞ্চুরি করা টেস্ট ইতিহাসের মাত্র চার ব্যাটসম্যানের একজন তিনি।

এরপর টি-টোয়েন্টির আবির্ভাবে দিয়ে তিনি নিজেকে তুলে নেন অনন্য উচ্চতায়। এই সংস্করণে তিনি সবসময়ের অবিসংবাদিত সেরা ব্যাটসম্যান। অবিশ্বাস্য সব সংখ্যা আর রেকর্ডের জন্ম হয় তার ব্যাট থেকে। ব্যাটের পাশাপাশি মাঠে তার বিচরণ, মাঠে ভেতরে-বাইরে নানাভাবে বিনোদন দেওয়া তো ছিলই।

১৬ বছর আগে তার হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। সেবার সেরে ওঠার পর জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবেন তিনি। উপভোগই হয়ে ওঠে তার কাছে জীবনের প্রতিশব্দ। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে তিনি ফিরে তাকালেন পেছনে। সবসময় যাকে মনে হয় মজাপ্রিয়, সেই মানুষটি শোনালেন আবেগ-অনুভূতির কথাও।

“অনেক লড়াই করতে হয়েছে আমাকে। হার্টের অবস্থা তো ছিলই, তার পরও দুর্দান্ত ক্যারিয়ার। আজ এখানে থাকতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ, ৪২ বছর বয়সেও দৃঢ়পায়ে এগোচ্ছি। ক্যারিয়ার ছিল অসাধারণ, কিছু হোঁচট খেতে হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের জন্য অনেক ঘাম, শ্রম, রক্ত আর অশ্রু ঝরিয়ে, এক হাতে খেলে, এক পায়ে এগিয়ে এখনও ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ব্যাটিং করছি।”

“ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা ছিল তৃপ্তির। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতি আমার আবেগ তীব্র। ম্যাচ হারলে খুব কষ্ট লাগে। সমর্থকরা আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমি বিনোদনদায়ী। বিনোদন দিতে না পারলে তাই আমার প্রচণ্ড খারাপ লাগে। প্রতিক্রিয়া দেখে হয়তো তো বোঝা যায় না, ওসবের প্রকাশ আমি ততটা করি না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে কষ্ট লাগে, যেমন এই বিশ্বকাপেও লেগেছে।”

গেইল জানালেন, তার ৯১ বছর বয়সী বাবা অসুস্থ জেনেও বিশ্বকাপ খেলছিলেন তিনি। এখন দেশে ছুট দেবেন বাবাকে দেখতে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটকেও এখনই বিদায় বলছেন না। সামনে খেলবেন টি-টেন ক্রিকেটে। এরপর নতুন বছরে অপেক্ষায় থাকবেন নিজ দেশে বিদায়ী ম্যাচটি খেলতে।

তবে কৌতুক-মজা ছাড়া যে তিনি বেশিক্ষণ থাকতে পারেন না, সেটিও বুঝিয়ে দিলেন আরেকবার।

“আমি আরেকটি বিশ্বকাপ খেলতে চাই…হাহাহাহা… তবে মনে হয় না, তারা আমাকে খেলতে দেবে।”