ওয়ার্নার-মার্শের ব্যাটে সেমির খুব কাছে অস্ট্রেলিয়া

ক্যারিবিয়ান বিধ্বংসী ব্যাটিং লাইনআপকে সেভাবে জ্বলে উঠতে দিলেন না বোলাররা। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে লক্ষ্যটা থাকল নাগালে। ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শের বিস্ফোরক ইনিংসে তা সহজেই তাড়া করে ফেলল অস্ট্রেলিয়া। দুর্দান্ত জয়ে সেমি-ফাইনালের পথে আরেকটু এগিয়ে গেল অ্যারন ফিঞ্চের দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2021, 01:42 PM
Updated : 6 Nov 2021, 02:49 PM

আবু ধাবিতে শনিবার সুপার টুয়েলভে নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জয় ৮ উইকেটে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের দেওয়া ১৫৮ রানের লক্ষ্যে তারা পৌঁছে যায় ২২ বল আগে।

অস্ট্রেলিয়ার এমন দাপুটে জয় দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য মোটেও ভালো খবর নয়। গ্রুপ-১ থেকে সেমি-ফাইনালের দুটি টিকেটই এখনও উন্মুক্ত; তবে টেম্বা বাভুমার দলের জন্য কাজটা এখন খুব কঠিন।

৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা ইংল্যান্ড রান রেটে অনেক এগিয়ে, তাদের রান রেট +৩.১৮৩। তাই পরের ধাপে ওঠার একটি টিকেটের জন্য লড়াইটা মূলত দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে। সেক্ষেত্রে বাভুমাদের জিততে হবে অনেক বড় ব্যবধানে; যেমন ইংল্যান্ড যদি প্রথমে ব্যাট করে ১৬০ রান করে তাহলে ১২.৫ ওভারে জিততে হবে দক্ষিণ আফ্রিকার। আর তারা যদি আগে ব্যাট করে ১৬০ করে তাহলে ইংল্যান্ডকে অলআউট করতে হবে ১০০ রানের মধ্যে!

অস্ট্রেলিয়ার এই জয় অবশ্য সুখবর হয়ে এসেছে বাংলাদেশের জন্য। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরের আসরের সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশ খেলতে পারবে সরাসরি। আর দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবারের মতো খেলতে হবে প্রাথমিক পর্বে।

অস্ট্রেলিয়ার জয়ের মূল নায়ক ওয়ার্নার খেলেন ৫৬ বলে ৮৯ রানের ইনিংস। জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। তার সঙ্গে ১২৪ রানের জুটি গড়ার পথে মার্শ করেন ৩২ বলে ৫৩।

টুর্নামেন্ট থেকে আগেই বিদায় নিশ্চিত করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ কিছুর আভাস দেয়। দ্বিতীয় ওভারে জশ হেইজেলউডকে টানা তিন চার মারেন এভিন লুইস। ওভারের পঞ্চম বলে এই পেসারকে ছক্কায় ওড়ান ক্রিস গেইল।

পরের ওভারের প্রথম বলেই ক্যারিবিয়ান বিস্ফোরক ওপেনার লং-অন দিয়ে সীমানা ছাড়া করেন প্যাট কামিন্সকে। দ্বিতীয় বলেই নেন বিদায়। অস্ট্রেলিয়ান পেসারের ফুল লেংথ বল ব্যাটের কানায় লেগে এলোমেলো হয়ে যায় গেইলের স্টাম্প। কেবল ১৫ রানের ইনিংস খেললেও ব্যাট ও হেলমেট উঁচিয়ে ধরে মাঠ ছাড়েন ক্যারিবিয়ান মহাতারকা। সতীর্থরাও জানান অভিবাদন।

ম্যাচ শেষে তাকে ও আগে থেকেই অবসরের ঘোষণা দেওয়া ডোয়াইন ব্রাভোকে গার্ড অব অনার দেয় তাদের সতীর্থ। সবকিছু মিলেই, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সিতে গেইলের এটাই শেষ ম্যাচ হওয়ার ইঙ্গিত।

কামিন্সকে দুর্দান্ত একটি শটে চার মেরে রানের খাতা খোলেন নিকোলাস পুরান। তবে তার পথচলা শেষ ওখানেই। হেইজেলউডের বলে ক্যাচ দেন কাভারে। এক বল পরই রোস্টন চেইসকে বোল্ড করে দেন আগের ওভারে ১৯ রান দেওয়া অস্ট্রেলিয়ান এই পেসার। ৩ উইকেট হারালেও পাওয়ার প্লেতে দলটি তুলে ফেলে ৫০ রান।

৫ চারে ২৯ রান করা এভিন লুইসকে দশম ওভারে থামান অ্যাডাম জ্যাম্পা। আগের ম্যাচে বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দেওয়া এই লেগ স্পিনারের গুগলিতে লং-অনে ধরা পড়েন ওপেনার লুইস।

নিজের পরের ওভারেই জ্যাম্পা পেতে পারতেন আরেকটি। কিন্তু কাইরন পোলার্ডের ফিরতি ক্যাচ জমাতে পারেননি মুঠোয়। শিমরন হেটমায়ারকে ফিরিয়ে দলের সেই আক্ষেপ অবশ্য পরের ওভারেই কিছুটা মিটিয়ে দেন হেইজেলউড। শরীর তাক করা বাউন্সারে কট বিহাইন্ড হন ২ চারে ২৭ করা হেটমায়ার।

মিচেল স্টার্ককে এক্সট্রা কাভার দিয়ে ছক্কায় ডানা মেলার আভাস দেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষ ম্যাচ খেলতে নামা ব্রাভো। কিন্তু রাঙাতে পারলেন না শেষটা। তাকে ১০ রানে থামিয়ে দেন হেইজেলউড।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের গতি বাড়ান পোলার্ড। কামিন্সকে চার ও ছক্কা মারার পর হেইজেলউডকে হাঁকান দুই চার। শেষ ওভারে স্টার্কের বলে ফেরার আগে ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক করেন ৩১ বলে ৪ চার ও এক ছক্কায় ৪৪ রান।

ইনিংসের শেষ দুই বলে স্টার্ককে ছক্কায় উড়িয়ে দলের রান দেড়শ পার করেন আন্দ্রে রাসেল। প্রথমটি মারেন ডিপ মিডউইকেট দিয়ে, যার দূরত্ব ছিল ১১১ মিটার! পরেরটি লং-অন দিয়ে।

খরুচে বোলিংয়ে স্পেল শুরু করা হেইজেলউডই অস্ট্রেলিয়ার সফল বোলার। ৩৯ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট।

রান তাড়ায় ওয়ার্নারের ব্যাটে দারুণ শুরু পায় অস্ট্রেলিয়া। রোস্টন চেইসকে চার মেরে প্রথম বাউন্ডারির দেখা পাওয়া এই ওপেনার চড়াও হন জেসন হোল্ডারের ওপর। এই পেসারকে দুই চার মারার পর ডিপ মিডউইকেট দিয়ে ওড়ান ছক্কায়।

ওয়ার্নারকে সঙ্গ দিতে পারেননি ফিঞ্চ (১১ বলে ৯)। আকিল হোসেনের বাঁহাতি স্পিনে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। তবে ওয়ার্নারের মারমুখী ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ৫৩ রান তুলে ফেলে অস্ট্রেলিয়া।

হেইডেন ওয়ালশকে ছক্কায় ওড়ানোর পরের বলেই ডাবল নিয়ে ২৯ বলে ফিফটি তুলে নেন ওয়ার্নার। আসরে যা তার দ্বিতীয়।

মিচেল মার্শও তার সঙ্গে যোগ দেন রানের চাকা দ্রুত ঘোরাতে। আকিলকে মিডউইকেট দিয়ে উড়িয়ে সীমানা পার করার পর রাসেলকে মারেন আরেকটি। এই পেসারের পরের দুই বলে হাঁকান দুই চার। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে তিনি ফিফটি স্পর্শ করেন ২৮ বলে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যা তার প্রথম।

ব্রাভোকে পরপর দুই বলে ছক্কা-চার মেরে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যান ওয়ার্নার। জয় থেকে এক রান দূরে থাকতে মার্শকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। ২ ছক্কা ও ৫ চারে ৫৩ রান করে গেইলের বলে মিড-অফে ধরা পড়েন তিনি।

চেইসকে চার মেরে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন ওয়ার্নার। তিনি অপরাজিত থাকেন ৪ ছক্কা ও ৯ চারে ৮৯ করে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৫৭/৭ (গেইল ১৫, লুইস ২৯, পুরান ৪, চেইস ০, হেটমায়ার ২৭, পোলার্ড ৪৪, ব্রাভো ১০, রাসেল ১৮*, হোল্ডার ১*; স্টার্ক ৪-০-৩৩-১, হেইজেলউড ৪-০-৩৯-৪, কামিন্স ৪-০-৩৭-১, ম্যাক্সওয়েল ১-০-৬-০, মার্শ ৩-০-১৬-০, জ্যাম্পা ৪-০-২০-১)

অস্ট্রেলিয়া: ১৬.২ ওভারে ১৬১/২ (ওয়ার্নার ৮৯*, ফিঞ্চ ৯, মার্শ ৫৩, ম্যাক্সওয়েল ০*; আকিল ৪-০-২৯-১, চেইস ১.২-০-১৭-০, হোল্ডার ২-০-২৬-০, ব্রাভো ৪-০-৩৬-০, ওয়ালশ ২-০-১৮-০, রাসেল ২-০-২৫-০, গেইল ১-০-৭-১)

ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: ডেভিড ওয়ার্নার