আবু ধাবিতে বৃহস্পতিবার সুপার টুয়েলভে নিজেদের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার জয় ২০ রানে। প্রাথমিক পর্বের তিনটি ম্যাচই জিতে আসা লঙ্কা এই রাউন্ডে এসে জিতল দুটি।
জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে মিলিত চেষ্টায় ৩ উইকেট ১৮৯ রান করে শ্রীলঙ্কা। আসরে যা তাদের দলীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
দলকে বড় রান এনে দেওয়ার পথে ৪১ বলে ৫১ রান করেন পাথুম নিসানকা। তবে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন ৪১ বলে ৬৮ রান করা চারিথ আসালাঙ্কা।
সতীর্থদের ব্যর্থতার দিনে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান শিমরন হেটমায়ার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা ৫৪ বলে ৮১ রানে অপরাজিত থেকেও দলকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারেননি তিনি। এই সংস্করণে দুইবারের বিশ্বকাপজয়ীরা থামে ৮ উইকেটে ১৬৯ রানে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কাকে ভালো শুরু দেন কুসাল পেরেরা। তার মারমুখী ব্যাটিংয়েই প্রথম ৫ ওভারে ৪২ রান তুলে ফেলে দল। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তাকে হারায় লঙ্কা।
দৃঢ়তার সঙ্গে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন আসালাঙ্কা ও নিসানকা। দারুণ সব শট খেলে দলের রান বাড়াতে থাকেন দুইজন। ১০ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কা পেয়ে যায় ৮২ রানের ভিত।
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে নয়, ফিল্ডারদের পজিশন দেখে, স্কিলের সঠিক ব্যবহার করে বড় সংগ্রহের দিকে এগোতে থাকেন তারা। তাদের জুটিও পঞ্চাশ পেরিয়ে শতরানে চোখ রাখে।
কিন্তু তিন অঙ্ক আর ছোঁয়া হয়নি। ৩৯ বলে ফিফটি করা নিসানকাকে ফিরিয়ে ৬১ বলে ৯১ রানের জুটি ভাঙেন ডোয়াইন ব্রাভো। তার স্লোয়ারে মিডউইকেট সীমানায় ধরা পড়েন ৫ চারে ৫১ করা লঙ্কান ওপেনার। ওই ওভারেই আসরে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন আসালাঙ্কা, ৩৩ বলে।
ব্যাটিং অর্ডারে নিজেকে উপরে তুলে আনা দাসুন শানাকা মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলেই জেসন হোল্ডারকে ছক্কায় ওড়ান ডিপ মিডউইকেট দিয়ে। যদিও বাউন্ডারিতে ক্যাচের সুযোগ ছিল রোস্টন চেইসের সামনে। তার হাতে লেগেই বল সীমানা পার হয়। শেষ বলে শানাকার আরেকটি চারে সপ্তদশ ওভারে দেড়শ পার করে শ্রীলঙ্কা।
ব্রাভোকে একটি করে ছক্কা-চার হাঁকানো আসালাঙ্কা পরের ওভারে রাসেলের বলে স্কয়ার লেগ সীমানায় ধরা পড়েন। এক ছক্কা ও ৮ চারে ৪১ বলে ৬৮ করেন তিনি।
শেষ ওভারে আসেনি কোনো বাউন্ডারি। তারপরও শেষ ৫ ওভারে ৫৭ রান তোলে তারা।
রান তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো। দ্বিতীয় ওভারেই তারা খায় জোড়া ধাক্কা। দলে ফেরা বিনুরা ফার্নান্দোর বলে মিড-অফে ক্রিস গেইলের ক্যাচ মুঠোয় জমান ভানিন্দু হাসারাঙ্গা। আর পরপর দুই বলে চার মেরে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হয়ে যান এভিন লুইস।
তৃতীয় ওভারেও উইকেট পেতে পারত শ্রীলঙ্কা। কিন্তু নিকোলাস পুরানের কঠিন ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি মাহিশ থিকশানা। পরের ওভারে আবারও জীবন পান পুরান, ফিল্ডার থিকশানাই। বিনুরার বলে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ ছেড়ে দেন চার। ওই ওভারে আরেকটি ছক্কা ও চার মারেন পুরান।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ভানুকা রাজাপাকসার দুর্দান্ত ক্যাচে আরেকটি উইকেট তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা। চামিকা করুনারত্নের বলে মিডউইকেটে ধরা পড়েন চেইস। ৩ উইকেট হারিয়ে প্রথম ছয় ওভারে ক্যারিবিয়ানরা তোলে ৫২ রান।
ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পারেননি রাসেল। চামিকার শর্ট বল পুল করে আকাশে তুলে ২ রান করে ফেরেন আগের তিন ইনিংসে দুটিতে শূন্য রানে আউট হওয়া এই অলরাউন্ডার।
পরের ওভারের প্রথম বলেই কাইরন পোলার্ডকে বোল্ড করে গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ দেন হাসারাঙ্গা। এরই সঙ্গে স্পর্শ করেন এই সংস্করণের বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি অজান্তা মেন্ডিসের ১৫ উইকেটের রেকর্ড। পরে ব্রাভোর স্টাম্প এলোমেলো করে দিয়ে রেকর্ডটি নিজের করে নেন আগের দিন টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে বোলারদের শীর্ষে ওঠা এই স্পিনার।
ঝড়ো ব্যাটিংয়ে হেটমায়ার কেবল কমাতে পারেন হারের ব্যবধান। ৪ ছক্কা ও ৮ চারে ৮১ রান করেও হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।
আগামী শনিবার আসরে নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৮৯/৩ (নিসানকা ৫১, পেরেরা ২৯, আসালাঙ্কা ৬৮, শানাকা ২৫*, চামিকা ২*; চেইস ১-০-৬-০, হোল্ডার ৪-০-৩৭-০, রামপল ৪-০-৩৭-০, রাসেল ৪-০-৩৩-২, আকিল ২-০-২২-০, ব্রাভো ৪-০-৪২-১, পোলার্ড ১-০-৮-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৬৯/৮ (গেইল ১, লুইস ৮, পুরান ৪৬, চেইস ৯, হেটমায়ার ৮১*, রাসেল ২, পোলার্ড ০, হোল্ডার ৮, ব্রাভো ২, আকিল ২*; থিকশানা ৪-০-২১-০, বিনুরা ২-০-২৪-২, চামিরা ৪-০-৪১-১, চামিকা ৪-০-৪৩-২, শানাকা ২-০-১৮-১, হাসারাঙ্গা ৪-০-১৯-২)
ফল: শ্রীলঙ্কা ২০ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: চারিথ আসালাঙ্কা