আফগানিস্তানকে উড়িয়ে টিকে রইল ভারত

প্রথম দুই ম্যাচে বড় হারে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল দেয়ালে। চারদিক থেকে আসছিল সমালোচনার তীর। বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ভারত জেগে উঠল প্রবল বিক্রমে। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে বিরাট কোহলির দল গুঁড়িয়ে দিল আফগানিস্তানকে। বাঁচিয়ে রাখল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে খেলার আশা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2021, 04:00 PM
Updated : 3 Nov 2021, 06:55 PM

সুপার টুয়েলভের ম্যাচে আবু ধাবিতে বুধবার ভারতের জয় ৬৬ রানে। ২০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে তারা করে আসরের দলীয় সর্বোচ্চ ২১০ রান। আফগানরা করতে পারে ৭ উইকেটে ১৪৪।

ফেভারিটদের একটি হিসেবে আসর শুরু করে পাকিস্তানের কাছে ১০ উইকেটে ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটে হেরেছিল ভারত। ওই দুই ম্যাচেই তাদের উদ্বোধনী জুটি ভেঙেছিল শুরুতে, যথাক্রমে ১ ও ১১ রানে। দলের ব্যাটিং পড়েছিল মুখ থুবড়ে।

আফগানদের বিপক্ষে টিকে থাকার ম্যাচে শুরুর জুটিতে আসে বড় রান। দারুণ দুটি ইনিংস উপহার দেন রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। শেষ দিকে ঝড় তোলেন হার্দিক পান্ডিয়া ও রিশাভ পান্ত। তাতে ভারত গড়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। ২০০৭ সালে প্রথম আসরে ডারবানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ উইকেটে ২১৮ রান তাদের সর্বোচ্চ।

৪৭ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৪ রান করেন রোহিত। ৪৮ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৬৯ রাহুল। দুজনের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ১৪০ রান।

তিনে নেমে ১৩ বলে ৩ ছক্কা ও একটি চারে অপরাজিত ২৭ রান করেন কিপার-ব্যাটসম্যান পান্ত। পান্ডিয়া অপরাজিত থাকেন ১৩ বলে ৪টি চার ও ২ ছক্কায় ৩৫ রান করে।

ব্যাটিংয়ে নামেননি অধিনায়ক বিরাট কোহলি। দল আগে ব্যাটিং করেছে এবং তিনি ব্যাটিং করেননি, এমন ঘটনা স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে কোহলির ক্যারিয়ারে এটিই প্রথম।

আফগানিস্তানের কোনো বোলারই পাত্তা পাননি ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সামনে। নাভিন উল হক ৪ ওভারে দেন ৫৯ রান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে যা ইনিংসে কোনো বোলারের পঞ্চম সর্বোচ্চ।

রশিদ খান ৪ ওভারে ৩৬ রানে উইকেটশূন্য ছিলেন। অফ স্পিনার মুজিব উর রহমানকে চোটের কারণে এই ম্যাচেও পায়নি তারা।

ব্যাটিংয়ে আফগানদের দেড়শর আগে থামিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মোহাম্মদ শামি। ৩২ রানে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন এই পেসার। তবে বোলিংয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল নামটি রবিচন্দ্রন অশ্বিন। চার বছর পর দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমে ৪ ওভারে ১৪ রান দিয়ে এই অফ স্পিনারের প্রাপ্তি দুটি। বরুন চক্রবর্তীর চোটে সুযোগ পাওয়া এই স্পিনার ডট বল করেন ১২টি।

এই মাঠে আগের দিন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮৪ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সেদিনের মতো উইকেট সবুজাভ ছিল না এদিন। বরং যথেষ্ট ব্যাটিং সহায়ক।

উদ্বোধনী জুটিতে দলকে ১৪০ রান এনে দেন রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। ছবি: আইসিসি।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে রাহুলের সঙ্গে ওপেনিংয়ে ফেরেন আগের ম্যাচে তিনে নামা রোহিত। বাদ পড়েন নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংস শুরু করা ইশান কিষান।

শুরু থেকে দুই ওপেনারই খেলেন দারুণ সব শট। প্রথম ওভারে রোহিত চার মারেন মোহাম্মদ নবিকে। পরের ওভারে ঝড় বয়ে যায় আসগর আফগানের জায়গায় আফগানিস্তানের মূল দলে আসা শরাফউদ্দিন আশরাফের ওপর দিয়ে। তাকে রোহিত চার মারেন একটি। পরপর ছক্কা-চার মারেন রাহুল।

পঞ্চম ওভারে নাভিন উল হকের শেষ চার বলের মধ্যে রোহিত চার মারেন দুটি, মাঝে লং অফের ওপর দিয়ে ছক্কা একটি। পাঁচ ওভারেই ভারতের রান স্পর্শ করে পঞ্চাশ।

অষ্টম ওভারে প্রথম আক্রমণে এসে রশিদ দেন কেবল ৬ রান। এই লেগ স্পিনার নিজের পরের ওভারে খরচ করেন ১১ রান।

১০ ওভারে ভারতের রান ছিল বিনা উইকেটে ৮৫।

নাভিনকে বাউন্ডারি মেরে রোহিত ফিফটি পূর্ণ করেন ৩৭ বলে। পঞ্চাশে যেতে রাহুলের লাগে ৩৫ বল।

চতুর্দশ ওভারে রশিদকে টানা দুই ছক্কা মারেন রোহিত। প্রথমটা বেরিয়ে এসে ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে। পরেরটি স্লগ সুইপে স্কয়ার লেগ দিয়ে।

রোহিতকে ফিরিয়ে ৮৯ বলে ১৪০ রানের জুটি ভাঙেন করিম জানাত। এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ দেন রোহিত।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যে কোনো উইকেটে ভারতের সর্বোচ্চ জুটি এটি। ২০০৭ সালে ডারবানের ওই ম্যাচে উদ্বোধনী জুটিতেই ১৩৬ রান তুলেছিলেন গৌতম গম্ভীর ও বিরেন্দর শেবাগ।

১৭তম ওভারে গুলবাদিন নাইবকে স্কুপ করার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন রাহুল। ওই ওভারেই পরপর দুই ছক্কা মারেন রিশাভ পান্ত। পরের ওভারে হামিদ হাসানকে তিনটি চার মারেন হার্দিক পান্ডিয়া।

শেষের আগের ওভারে ১৪ রানে জীবন পেয়ে নাভিনকে দুটি ছক্কা মারেন পান্ডিয়া। শেষ ওভারে হামিদকে পান্তের পরপর চার-ছক্কায় দলের রান পার হয় দুইশ। শেষ ৪ ওভারে আসে ৬৫ রান!

বড় রান তাড়ায় আফগানিস্তান জয়ের আশা জাগাতে পারেনি কখনই। শুরু থেকেই তারা নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায়।

৭৪ রানের ইনিংস খেলার পথে রোহিত শর্মার একটি শট। ছবি: আইসিসি।

শামির ওভারে বড় শট খেলার চেষ্টায় বল আকাশে তুলে মোহাম্মদ শাহজাদ ফেরেন শূন্য রানে। একটি করে চার-ছক্কা মেরে একইভাবে জাসপ্রিত বুমরাহর বলে আউট হন আরেক ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই।

বুমরাহর বাউন্সারে হেলমেটে আঘাত পাওয়ার পর শামির টানা তিন বলে দুটি ছক্কা ও একটি চার মারেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। রবীন্দ্র জাদেজার বলে তিনি ধরা পড়েন বাউন্ডারিতে।

অশ্বিন নিজের দ্বিতীয় ওভারে পান উইকেট। এই অফ স্পিনার এলবিডব্লিউ করে দেন গুলবাদিন নাইবকে। অশ্বিনের পরের ওভারে রিভার্স সুইপ করার চেষ্টায় বোল্ড হন নাজিবউল্লাহ জাদরান।

৬৯ রানে ৫ উইকেট হারায় আফগানিস্তান।

এরপর নবি ও জানাতের ব্যাটে কেবল হারের ব্যবধানই কমাতে পারে তারা। ৩২ বলে ৩৫ রান করেন অধিনায়ক নবি। শেষ বলে একটিসহ ২ ছক্কা ও ৩ চারে ২২ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন জানাত, যা ইনিংসের সর্বোচ্চ।

নিজেদের শেষ দুই ম্যাচে আগামী শুক্রবার স্কটল্যান্ড ও সোমবার নামিবিয়ার বিপক্ষে খেলবে ভারত। রোববার নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান।

শেষ দুই ম্যাচে ভারতের শুধু জিতলেই হবে না, তাকিতে থাকতে হবে অন্য ম্যাচগুলোর ফলের দিকেও। প্রথম চার ম্যাচের দুটিতে জেতা আফগানিস্তানও  শেষ চারের লড়াইয়ে টিকে আছে ভালোমতোই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ২০ ওভারে ২১০/২ (রাহুল ৬৯, রোহিত ৭৪, পান্ত ২৭*, পান্ডিয়া ৩৫*; নবি ১-০-৭-০, শরাফউদ্দিন ২-০-২৫-০, নাভিন ৪-০-৫৯-০, হামিদ ৪-০-৩৪-০, গুলবাদিন ৪-০-২৯-১, রশিদ ৪-০-৩৬-০, জানাত ১-০-৭-১)

আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৪৪/৭ (জাজাই ১৩, শাহজাদ ০, গুরবাজ ১৯, গুলবাদিন ১৮, নাজিবউল্লাহ ১১, নবি ২৫, জানাত ৪২*, রশিদ ০, শরাফউদ্দিন ২*; শামি ৪-০-৩২-৩, বুমরাহ ৪-০-২৫-১, পান্ডিয়া ২-০-২৩-০, অশ্বিন ৪-০-১৪-২, শার্দুল ৩-০-৩১-০)

ফল: ভারত ৬৬ রানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: রোহিত শর্মা