দুবাইয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬ রানে জিতেছে নিউ জিল্যান্ড। এই সংস্করণে কেবল দ্বিতীয়বার মুখোমুখি হলো দল দুটি। এক যুগ আগের দেখায়ও জয় ছিল তাদের।
ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে গাপটিলের বিধ্বংসী ইনিংসে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭২ রান করে নিউ জিল্যান্ড। ৫৬ বলে ৯৩ রান করে এই ওপেনার জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
এই ইনিংসের পথে একটি মাইলফলকও স্পর্শ করেন তিনি। বিরাট কোহলির পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৩ হাজার রান করা ব্যাটসম্যান এখন তিনি।
লক্ষ্য তাড়ায় লড়াই করেছে স্কটল্যান্ড। শেষ দিকে মাইকেল লিস্কের ঝড়ে শেষ পর্যন্ত তারা থেমেছে ৫ উইকেটে ১৫৬ রানে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা নিউ জিল্যান্ড গাপটিল ও ড্যারিল মিচেলের ব্যাটে প্রথম চার ওভারেই তুলে ফেলে ৩৫ রান। তবে পরের ওভারে সাফিয়ান শারিফ এক ওভারে দেন জোড়া ধাক্কা।
এই পেসারের বলে এলবিডব্লিউ হন মিচেল। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি। রানের খাতা খুলতে পারেননি দলটির ব্যাটিং অর্ডারের সবচেয়ে বড় ভরসা কেন উইলিয়ামসন। কিপার ম্যাথু ক্রস বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে ধরেন দারুণ ক্যাচ।
আরেক প্রান্তে অপরাজিত গাপটিল শুরুর দিকে খুব বেশি আক্রমণাত্মক না হতে পারলেও রান বাড়াতে থাকেন ঠিকই। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে দলে ফেরা অ্যালি ইভান্সকে মারেন তিনি একটি করে ছক্কা ও চার। ২ উইকেট হারিয়ে প্রথম ছয় ওভারে নিউ জিল্যান্ড তোলে ৫২ রান।
হাল ধরতে পারেননি ডেভন কনওয়ে। মার্ক ওয়াটকে রিভার্স সুইপ করে তিনি ধরা পড়েন কিপারের গ্লাভসে। এরপর গ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন গাপটিল। ১০ ওভার শেষে নিউ জিল্যান্ড করে ৭০ রান।
রানের গতিতে দম দিতে মাইকেল লিস্ককে স্লগ সুইপ করে ছক্কায় ওড়ান ফিলিপস। ইভান্সের পর ক্রিস গ্রিভসকে ছক্কা মেরে ৩৫ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন গাপটিল।
এরপর আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন নিউ জিল্যান্ড ওপেনার। ব্র্যাড হুইলকে একটি ও শারিফকে দুই ছক্কায় ওড়ান। ইভান্সকে মিডউইকেট দিয়ে বাউন্ডারি ছাড়া করে নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছে যান গাপটিল।
হুইলকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টাতেই আক্ষেপ নিয়ে শেষ হয় গাপটিলের ইনিংস। লং-অনে ধরা পড়েন সেঞ্চুরি থেকে ৭ রান দূরে থাকতে। তার ৫৬ বলে ৯৩ রানের ইনিংসটি সাজানো ৭ ছক্কা ও ৬ চারে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে গড়লেন ১৫০ ছক্কা মারার কীর্তি। ১০১ ইনিংসে তার ছক্কা এখন ১৫৪টি।
গাপটিলকে ফেরানোর আগের বলেই ফিলিপসকে মিড উইকেটে ক্যাচে পরিণত করে ৭৩ বলে ১০৫ রানের জুটিটি ভাঙেন পেসার হুইল। রান করতে ধুঁকতে থাকা এই ব্যাটসম্যান করেন ৩৭ বলে ৩৩।
স্কটল্যান্ডের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন ওয়াট। কিপটে বোলিংয়ে ৪ ওভারে কেবল ১৩ রান দিয়ে এক উইকেট নেন বাঁহাতি এই স্পিনার।
লক্ষ্য তাড়ায় স্কটিশরা তৃতীয় ওভারেই হারায় চোট কাটিয়ে দলে ফেরা অধিনায়ক কাইল কোয়েটজারকে। দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী এই ব্যাটসম্যান ট্রেন্ট বোল্টের স্লোয়ারে ক্যাচ তুলে দেন মিড অনে।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে অ্যাডাম মিল্নের ওপর ঝড় বইয়ে দেন ক্রস। টানা মারেন পাঁচটি চার। প্রথম ছয় ওভার স্কটল্যান্ড শেষ করে এক উইকেট হারিয়ে ৪৮ রান নিয়ে।
রানের গতি বাড়ান জর্জ মানজি। ইশ সোধিকে পরপর দুই বলে ছক্কায় ওড়ান এই ওপেনার। ওই ওভারেই শেষ হয় তার ২২ রানের পথচলা। লং অনে অসাধারণ ক্যাচ নেন টিম সাউদি। ১০ ওভারে ৭৬ রান তুলে ভালো অবস্থানে ছিল স্কটল্যান্ড।
দুই ওভার পর সাউদির শিকার ক্রস (২৯ বলে ২৭)। লেংথে পড়ে হালকা সুইংয়ে ভেতরে ঢোকা বল বুঝতেই পারেননি তিনি। ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক গলে স্টাম্পে ছোবল দেয় বল।
ক্যালাম ম্যাকলাউডকে বোল্ড করে দেন বোল্ট। বেরিংটন থামেন লেগ স্পিনার সোধির বলে কট বিহাইন্ড হয়ে।
বোল্টকে মিডউইকেট দিয়ে ছক্কায় ওড়ানোর পর মাইকেল লিস্ক চড়াও হন সোধির ওপর। ১৮তম ওভারে দুই চার ও এক ছক্কায় নেন ১৭ রান। এরপর সাউদিকে তিনি কাউ কর্নার দিয়ে পাঠান গ্যালারিতে।
লিস্কের ঝড়ে স্কটল্যান্ড শিবিরে কিছুটা আশা হয়তো জেগেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি দলকে নিয়ে যেতে পারেননি কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়। তিনটি করে ছক্কা-চারে ২০ বলে ৪২ রান করে থাকেন অপরাজিত।
আগামী শুক্রবার নামিবিয়ার বিপক্ষে খেলবে নিউ জিল্যান্ড। ওই দিনের আরেক ম্যাচে স্কটল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৭২/৫ (গাপটিল ৯৩, মিচেল ১৩, উইলিয়ামসন ০, কনওয়ে ১, ফিলিপস ৩৩, নিশাম ১০*, স্যান্টনার ২*; হুইল ৪-০-৪০-২, শারিফ ৪-০-২৮-২, ইভান্স ৪-০-৪৮-০, ওয়াট ৪-০-১৩-১, গ্রিভস ৩-০-২৬-০, লিস্ক ১-০-১২-০)।
স্কটল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৫৬/৫ (মানজি ২২, কোয়েটযার ১৭, ক্রস ২৭, বেরিংটন ২০, ম্যাকলাউড ১২, লিস্ক ৪২*, গ্রিভস ৮*; বোল্ট ৪-০-২৯-২, সাউদি ৪-০-২৪-১, মিল্ন ৪-১-৩৬-০, স্যান্টনার ৪-০-২৩-০, সোধি ৪-০-৪২-২)
ফল: নিউ জিল্যান্ড ১৬ রান জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মার্টিন গাপটিল