নামিবিয়াকে হারিয়ে সেমিতে সবার আগে পাকিস্তান

ইনিংস শুরু করতে নেমে শেষ পর্যন্ত খেললেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। তার ও বাবর আজমের দারুণ দুটি ইনিংসে বড় সংগ্রহ পেল পাকিস্তান। পরে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নামিবিয়ার বিপক্ষে সহজ জয় এনে দিলেন বোলাররা। টানা চার জয়ে সবার আগে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করল টি-টোয়েন্টির সাবেক চ্যাম্পিয়নরা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2021, 05:56 PM
Updated : 3 Nov 2021, 10:38 AM

আবু ধাবিতে মঙ্গলবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে নামিবিয়াকে ৪৫ রানে হারায় পাকিস্তান। এই জয়ে ২০ ওভারের ক্রিকেটের ৭টি বৈশ্বিক আসরের ৫টিতে সেমি-ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে দলটি।

ম্যাচের প্রথম ভাগেই পাকিস্তানের জয়ের ভিত অনেকটাই গড়া হয়ে যায়। বাবর ও রিজওয়ানের শতরানের উদ্বোধনী জুটির সৌজন্যে টস জিতে আগে ব্যাটিং করে ১৮৯ রান করে তারা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পাঁচটি সেঞ্চুরি জুটি আছে কেবল এই দুইজনের।

দারুণ ব্যাটিংয়ে ৪৯ বলে ৭০ রান করেন বাবর। ৫০ বলে ৭৯ রানের ইনিংসে রিজওয়ান জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ পারফরম্যান্স করা পাকিস্তানি বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে কখনোই জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি নামিবিয়া। শেষ পর্যন্ত তারা করতে পারে ৫ উইকেটে ১৪৪ রান।

জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ঘাসের ছোঁয়া থাকা উইকেটে শুরুটা অবশ্য ভালোই করে নামিবিয়া। ইনিংসের প্রথম ওভারে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ছন্দে থাকা রিজওয়ানের বিপক্ষে মেডেন নেন রুবেন ট্রাম্পেলমান। বাবর ও রিজওয়ান প্রথম তিন ওভারে মারতে পারেননি কোনো বাউন্ডারি।

পুরো পাওয়ার প্লেতেই নামিবিয়ার বোলাররা দমিয়ে রাখেন দুই ওপেনারকে। মাঝে একবার রিভিউ নিয়ে বাঁচেন রিজওয়ান। প্রথম ছয় ওভারে কেবল ২৯ রান তুলতে পারে পাকিস্তান।

পরে রানের গতিতে দম দিয়ে ফিফটির দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন বাবর। তখনও ছন্দ খুঁজে ফিরছিলেন রিজওয়ান। ১০ ওভার শেষে দলের রান যখন ৫৯, রিজওয়ানের তখন ২৫ বলে ১৬, বাউন্ডারি কেবল একটি।

এরপর তার ব্যাটে আসতে থাকে রান। আসরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা বেন শিকঙ্গোকে চার মারার পর লং-অন দিয়ে ছক্কায় ওড়ান তিনি ট্রাম্পেলমানকে। এই ওভারেই চার মেরে বলের চেয়ে রান বাড়িয়ে নেন রিজওয়ান। পরে আরেকটি ছক্কা হাঁকান লেগ স্পিনার ইয়ান নিকোল লফটি-ইটনকে।

এর মাঝে ৩৯ বলে ফিফটি তুলে নেন বাবর। আসরে চার ম্যাচ খেলে যা তার তৃতীয়। তাকে ৭০ রানে থামান ভিসা। ৭টি চার মারা পাকিস্তান অধিনায়ক ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় মিড উইকেটে ধরা পড়েন। ভাঙে ১১৩ রানের উদ্বোধনী জুটি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম জুটি হিসেবে এক পঞ্জিকাবর্ষে হাজার রান করলেন বাবর ও রিজওয়ান। ১৭ ইনিংসে জুটিতে তাদের রান এখন এক হাজার ৪১।

ফখর জামান টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। কিপার জেন গ্রিনের এক হাতে ধরা দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন তিনি। ওই ওভারেই ইয়ান ফ্রাইলিঙ্ককে চার মেরে রানের খাতা খোলেন মোহাম্মদ হাফিজ। পরের ওভারে অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান জেজে স্মিটকে মারেন টানা দুই চার। ট্রাম্পেলমানকে মারেন আরও দুটি।

ভিসাকে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কায় উড়িয়ে ৪২ বলে ফিফটি তুলে নেন রিজওয়ান। ইনিংসের শেষ ওভারে ঝড় তোলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। স্মিটকে ৪টি চারের সঙ্গে মারেন একটি ছক্কা। ওভার থেকে আসে ২৪ রান। শেষ ৪ ওভারে পাকিস্তান রান তোলে ৬২।

৪ ছক্কা ও ৮ চারে ৭৯ রান করে অপরাজিত থাকেন রিজওয়ান। শেষ দিকে দ্রুত রানের চাহিদা মিটিয়ে হাফিজ করেন ৫ চারে ১৬ বলে ৩২।

রান তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় নামিবিয়া। হাসান আলির লেংথ বল ফ্লিক খেলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান মাইকেল ফন লিনগেন।

শুরুর ধাক্কা সামাল দেন দলে ফেরা স্টিভেন বার্ড ও ক্রেইগ উইলিয়ামস। তাদের ব্যাটে ৩৪ রান নিয়ে পাওয়ার প্লে শেষ করে নামিবিয়া।

এরপর অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি তাদের প্রতিরোধ। একটি করে ছক্কা-চারে ২৯ রান করা বার্ড রান আউটে কাটা পড়লে ভাঙে ৪৭ রানের জুটি। শাদাব খানের পরপর দুই বলে গেরহার্ড এরাসমাসের ছক্কা-চারে ১০ ওভার শেষে দলটি তোলে ৭০ রান।

নামিবিয়া অধিনায়ক এরাসমাসকে দুই ওভার পরই ফিরিয়ে দেন ইমাদ ওয়াসিম। পরের ওভারে শাদাবের শিকার উইলিয়ামস। ৫ চার ও এক ছক্কায় ৪০ করে লং-অফে ক্যাচ দেন তিনি।

টিকতে পারেননি স্মিটও। হারিফ রউফের স্লোয়ারে আকাশে তুলে দিয়ে মিডউইকেটে ধরা পড়েন তিনি। আসরে দারুণ কিছু ইনিংস খেলা ভিসা শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে হারের ব্যবধানই কেবল কমাতে পেরেছেন। ৩১ বলে ২ ছক্কা ও ৩ চারে ৪৩ রান করেন তিনি।

প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে এসে ইতিহাস গড়া নামিবিয়া আগামী শুক্রবার খেলবে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। গ্রুপের সেরা হওয়ার লক্ষ্যে দুই দিন পর স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৮৯/২ (রিজওয়ান ৭৯*, বাবর ৭০, ফখর ৫, হাফিজ ৩২*; ট্রাম্পেলমান ৪-১-৩৬-০, ভিসা ৪-০-৩০-১, স্মিট ৪-০-৫০-০, ফ্রাইলিঙ্ক ৪-০-৩১-১, শিকঙ্গো ২-০-১৯-০, লফটি-ইটন ২-০-২০-০)।

নামিবিয়া: ২০ ওভারে ১৪৪/৫ (বার্ড ২৯, ফন লিনগেন ৪, উইলিয়ামস ৪০, এরাসমাস ১৫, ভিসা ৪৩*, স্মিট ২, লফটি-ইটন ৭*; আফ্রিদি ৪-০-৩৬-০, হাসান ৪-০-২২-১, ইমাদ ৩-০-১৩-১, হারিস ৪-০-২৫-১, শাদাব ৪-০-৩৫-১, হাফিজ ১-০-১১-০)।

ফল: পাকিস্তান ৪৫ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ রিজওয়ান