শ্রীলঙ্কাকেও হারিয়ে সেমি-ফাইনালে এক পা ইংল্যান্ডের

মন্থর উইকেটে ব্যাটে-বলে করতেই লড়াই করতে হচ্ছিল। এমন কঠিন কন্ডিশনে ব্যাট হাতে আলো ছড়ালেন জস বাটলার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডকে এনে দিলেন বড় সংগ্রহ। রান তাড়ায় শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যের ধারেকাছেও যেতে পারল না শ্রীলঙ্কা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালের পথে বড় এক লাফ দিল ওয়েন মর্গ্যানের দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Nov 2021, 05:56 PM
Updated : 1 Nov 2021, 07:07 PM

শারজাহতে সোমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে ইংল্যান্ড জিতেছে ২৬ রানে। এই জয়ে দারুণ এক কীর্তি গড়লেন মর্গ্যান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ৪৩ জয় এখন তার।

বাটলারের ৬৭ বলে ছয়টি করে ছক্কা-চারে ১০১ রানের বিস্ফোরক ইনিংসে ইংল্যান্ড গড়ে ১৬৩ রানের পুঁজি। ২০ ওভারের বৈশ্বিক আসরে ইংলিশ দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। আগেরটি ছিল অ্যালেক্স হেলসের, ২০১৪ আসরে।

রান তাড়ায় লঙ্কানদের নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিয়ে এক ওভার আগেই ১৩৭ রানে গুটিয়ে দেয় ইংলিশ বোলাররা।

দাপুটে ক্রিকেট খেলে এগিয়ে চলা ইংল্যান্ডের আসরে এটি টানা চতুর্থ জয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়ার পর লঙ্কানদের হারিয়ে সেমি-ফাইনাল এক পা দিয়ে রাখল তারা।

ম্যাচের শুরুতে অবশ্য কিছুটা চাপে পড়েছিল টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ড। পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে তারা করে ৩৬ রান। ভানিন্দু হাসারাঙ্গার গুগলি সুইপ করে বোল্ড হয়ে যান জেসন রয়। ছন্দের খোঁজে থাকা দাভিদ মালান ব্যর্থ হন আবারও। দুশমন্থ চামিরার সুইং করে ভেতরে ঢোকা বল এলোমেলো করে দেয় তার স্টাম্প। জনি বেয়ারস্টোকে এলবিডব্লিউ করে ‘গোল্ডেন ডাক’-এর তেতো স্বাদ দেন হাসারাঙ্গা।

মন্থর উইকেটের সঙ্গে লঙ্কান বোলারদের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং ভোগায় বাটলার ও ওয়েন মর্গ্যানকেও। সাবধানী ব্যাটিংয়ে তারা ধরেন দলের হাল। প্রথম ১০ ওভারে ইংলিশরা রান তোলে কেবল ৪৭।

ড্রিঙ্কস ব্রেকের পর রানের গতি বাড়ান বাটলার। চামিকা করুনারত্নেকে টানা মারেন চার ও ছক্কা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খুনে ইনিংস খেলা এই কিপার-ব্যাটসম্যান ফিফটি তুলে নেন ৪৫ বলে।

হাসারাঙ্গাকে চার মারার পর মর্গ্যান এক্সট্রা কাভার দিয়ে ছক্কায় ওড়ান লাহিরু কুমারাকে। ওই ওভারেই আরও দুইটি ছক্কা হাঁকান বাটলার। ওভার থেকে আসে ২২ রান। একশ পার করে ইংল্যান্ড।

অষ্টাদশ ওভারে দাসুন শানাকাকে পরপর তিন বলে দুটি ছক্কা ও একটি চার মারেন বাটলার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে চোখ রেখে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি।

লেগ স্পিনার হাসারাঙ্গাকে ছক্কায় উড়িয়ে পরের বলেই বোল্ড হয়ে যান মর্গ্যান। ৩ ছক্কা ও এক চারে ৩৬ বলে ৪০ রান করেন তিনি। ভাঙে বাটলারের সঙ্গে তার ১১২ রানের জুটি।

দারুণ ছন্দে থাকা বাটলার ৬৭ বলে পা রাখেন কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে। ৮৬ ম্যাচে ৭৮তম ইনিংসে এই স্বাদ পেলেন তিনি। ইংল্যান্ডের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে করলেন সেঞ্চুরি। ফিফটি থেকে শতরানে পৌঁছাতে তার লাগে কেবল ২২ বল।

সেঞ্চুরি করতে শেষ ওভারে ১৩ রান প্রয়োজন ছিল বাটলারের। দুশমন্থ চামিরাকে প্রথম বলেই চার মেরে দেন তিনি। তৃতীয় বলে পান জীবন। একশ থেকে ৫ রান দূরে থাকতে দুই বলে নিতে পারেননি কোনো রান। চামিরা শেষ বলটি যেন উপহার দেন তাকে। ফুলটস বল স্কয়ার লেগ দিয়ে সীমানা ছাড়া করে স্পর্শ করেন তিন অঙ্ক।

ইংল্যান্ডের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। দারুণ সব অর্জনে ভরা ম্যাচে সেরার পুরস্কারটিও ওঠে তারই হাতে।

রান তাড়ায় ইনিংসের তৃতীয় বলেই উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। রান আউটে কাটা পড়েন পাথুম নিসানকা।

ক্রিস ওকসকে ছক্কায় রানের খাতা খোলেন চারিথ আসালাঙ্কা। পরে মইন আলিকে তিন বলের মধ্যে মারেন ২ চার। প্রতিপক্ষকে চাপ ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় থাকা এই ব্যাটসম্যান আদিল রশিদের বলে মিড-অফে ধরা পড়েন। এই লেগ স্পিনারের গুগলিতে স্লগ সুইপ করে আকাশে তুলে দিয়ে ফিরে যান কুসাল পেরেরাও। পাওয়ার প্লেতে লঙ্কানরা ৪০ রান তুলতে হারায় ৩ উইকেট।

বিপর্যয়ে পড়া দলের হাল ধরতে পারেননি আভিশকা ফার্নান্দোও। তাকে এলবিডব্লিউ করে দেন ক্রিস জর্ডান। ওকসকে টানা ছক্কা-চার মেরে ডানা মেলার আভাস দিয়ে ওই ওভারেই লং-অনে ধরা পড়েন ভানুকা রাজাপাকসা।

৭৬ রানে ৫ উইকেট হারানো দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখান হাসারাঙ্গা ও শানাকা। তাদের ব্যাটে এগোতে থাকে শ্রীলঙ্কা। গড়েন ৩৬ বলে ৫৩ রানের জুটি।

রানের চাহিদা মেটাতে গিয়ে বাউন্ডারিতে রয় ও স্যাম বিলিংসের যৌথ প্রচেষ্টার দারুণ এক ক্যাচে ফিরে যান হাসারাঙ্গা। ৩ চার ও এক ছক্কায় ৩৪ রান করেন তিনি। লঙ্কানদের ইনিংসে যা সর্বোচ্চ। আর কেউই ছুঁতে পারেননি ৩০ রানও।

এরপরই গুঁড়িয়ে যায় শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং। পরের ৭ রান তুলেই শেষ ৪ উইকেট হারায় তারা।

আগামী বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই দিন পর দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৬৩/৪ (রয় ৯, বাটলার ১০১*, মালান ৬, বেয়ারস্টো ০, মর্গ্যান ৪০, মইন ১*; চামিরা ৪-০-৪৩-১, হাসারাঙ্গা ৪-০-২১-৩, কুমারা ৪-০-৪৪-০, থিকশানা ৪-০-১৩-০, চামিকা ২-০-১৭-০, শানাকা ২-০-২৪-০)।

শ্রীলঙ্কা: ১৯ ওভারে ১৩৭ (নিসানকা ১, পেরেরা ৭, আসালাঙ্কা ২১, আভিশকা ১৩, রাজাপাকসা ২৬, শানাকা ২৬, হাসারাঙ্গা ৩৪, চামিকা ০, চামিরা ৪, থিকশানা ২, কুমারা ১*; মইন ৩-০-১৫-২, ওকস ২.৩-০-২৫-১, রশিদ ৪-০-১৯-২, জর্ডান ৪-০-২৪-২, লিভিংস্টোন ৪-০-৩৪-১, মিলস ১.৩-০-১৯-০)।

ফল: ইংল্যান্ড ২৬ রানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: জস বাটলার