আগামী বিশ্বকাপের জন্য প্রাপ্তির হাতছানি আছে এখনও

টানা তিন ম্যাচ হেরে সবচেয়ে বড় লক্ষ্য পূরণের আশা প্রায় শেষ। কিন্তু এখনও প্রাপ্তির অনেক কিছু আছে বাংলাদেশ দলের জন্য। ১৪ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে জয়ের সম্ভাবনা টিকে আছে। সঙ্গে আছে আরও বড় প্রাপ্তির সুযোগ। আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের প্রাথমিক পর্ব এড়ানো যাবে এই বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সেই। সেমি-ফাইনাল স্বপ্ন কার্যত শেষ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের সামনে এখন সেই চ্যালেঞ্জ জয়ের হাতছানি।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতদুবাই থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Nov 2021, 04:25 PM
Updated : 1 Nov 2021, 08:06 PM

হ্যাটট্রিক হারের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিমরা মুখোমুখি হবেন দক্ষিণ আফ্রিকার। আবু ধাবির জায়েদ স্টেডিয়ামে খেলা শুরু মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটায়।

দুই বিশ্বকাপের মধ্যে স্রেফ এক বছরের ব্যবধান বলে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল বাছাইয়ের জন্য কদিন আগে নতুন পদ্ধতি ঠিক করে আইসিসি। চলতি আসরের ফাইনালের দুই দল ও ফাইনালের পরদিনের র‌্যাঙ্কিংয়ে (১৫ নভেম্বর) শীর্ষে থাকা সুপার টুয়েলভের ৬ দল সরাসরি খেলবে সুপার টুয়েলভ পর্বে। এবারের মূল পর্বের বাকি চার দল আগামী আসরে খেলবে প্রথম রাউন্ডে।

র‌্যাঙ্কিংয়ের ৬ নম্বরে থেকে বিশ্বকাপ শুরু করা বাংলাদেশ এর মধ্যেই নেমে এসেছে ৯ নম্বরে। স্কটল্যান্ডের কাছে হারার পর শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনটি হারে শঙ্কায় পড়ে গেছে পরের আসরে মূল পর্বে খেলা। তবে পরের দুই ম্যাচ জিতলে সম্ভাবনা টিকে থাকবে ভালোমতোই।

বাংলাদেশ দলের ভাবনায় অবশ্য এই সমীকরণ আছে কিনা, তা জানা যায়নি। তবে জয়ের তাড়না আছে বলেই দাবি রাসেল ডমিঙ্গোর। আগের ম্যাচে হারের পর অনেকটা দমে গেলেও দল এখন সামনে তাকাচ্ছে, বললেন বাংলাদেশ কোচ।

“সবাই ফুরফুরে আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের পর আমাদের মধ্যে ভালো আলোচনা হয়েছে। শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খুব কাছে গিয়ে হেরেছি আমরা। ওই দুটি হারের পর দল অনেকটাই দমে গিয়েছিল, কারণ বিশ্বকাপে সম্ভাবনা সম্ভবত শেষ হয়ে গিয়েছে।”

“তবে কালকের ম্যাচে আমরা অনেক কিছুর জন্য খেলতে পারি। মানসিকভাবে তাই ছেলেরা এটির জন্য প্রস্তুত থাকবে। তারা জানে, টুর্নামেন্টের খুব গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আছে দল এবং এই দুই ম্যাচে ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে ছেলেরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”

দলের যা অবস্থা, তাতে সামনের দুই লড়াইয়ের জন্য নিজেদের গুছিয়ে নেওয়া সহজ নয়। প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর থেকেই সমালোচনার মধ্যে আছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এর মধ্যে মাঠের ভেতরে-বাইরে কথার যুদ্ধও হয়েছে বেশ। সুপার টুয়েলভের তিন পরাজয়ে সমালোচনার বেগ যেমন আরও তীব্র হয়েছে, দলের আবহও গুমোট হয়েছে।

আত্মবিশ্বাস তলানির দিকে থাকা দলকে উজ্জীবিত করা কঠিন, বলছেন ডমিঙ্গো নিজেই। তবে সব পেছনে ফেলে দল নিজেদের সেরাটা ঢেলে দেবে বলেই বিশ্বাস তার।

“শুধু গত ম্যাচেই নয়, প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও বেশির ভাগ সময় আমরা এগিয়ে ছিলাম।  কিন্তু শেষ দিকে একটি বা দুটি ভুল করেছি, যা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। ছেলেরা অবশ্যই হতাশ। কঠিন দুটি দিন ছিল তাদেরর জন্য (গত ম্যাচের পর)। ওরা জানে, দেশে ওদের নিয়ে প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া, জানে যে গণমাধ্যমের আগ্রহ তুঙ্গে। ওরা জানে, জিততে না পেরে কিছু মানুষকে হতাশ করেছে।”

“এই ধরনের একটি আসরে তাই ছেলেদের চাঙা করার কাজটি সহজ নয়। তবে ওরা কাল নিজেদের দেশের জন্য খেলবে এবং মাঠের সীমানায় পা রাখা মাত্রই আবার নিজেদের শতভাগ উজাড় করে দেবে।”      

শুধু নিজেদের চাঙা করে আবার মাঠে নামাই নয়, ক্রিকেট মাঠে লড়াইটা কৌশলের। প্রতিপক্ষ এখানে বাংলাদেশ কোচের খুবই চেনা। তিনি নিজে দক্ষিণ আফ্রিকান, সেখানকার ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে শুরু করে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন লম্বা সময়। তিনি আভাস দিলেন, স্পিন দিয়ে ঘায়েল করতে চান টেম্বা বাভুমা, কুইন্টন ডি ককদের। 

“দক্ষিণ আফ্রিকা এই মুহূর্তে ভালো খেলছে। দীর্ঘদিন দক্ষিণ আফ্রিকায় কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে জানি, ওরা যেভাবে স্পিন সামলায়, সেটা নিয়ে সব সময় একটা প্রশ্ন থাকেই। আশা করি, আগামীকাল কন্ডিশন আমাদের খানিকটা সহায়তা করবে। কিছু জায়গা তাই আছে, যা আমরা কাজে লাগাতে চাইব ও যেখানে মনোযোগ দেব।”

কি আলোচনা হয়েছে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাননি ডমিঙ্গো। তবে ধারণা দিলেন, প্রক্রিয়া ঠিক রেখে ধাপে ধাপে এগিয়ে গিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে চায় বাংলাদেশ।

“আমরা প্রতিটি ম্যাচই জয়ের জন্য খেলি। আমরা জানি, জয়ের প্রতি একটা নেশা থাকে, না জিতলে আসে হতাশা। আমাদের মনোযোগ প্রক্রিয়ার দিকে এবং আমরা কীভাবে সেই জয় অর্জন করতে চাই, সেদিকে। প্রত্যেকেই প্রতিটি ম্যাচ জিততে চায়। কিন্তু কেউ যখন কেবল এদিকেই মনোযোগী হয়, তখন করণীয়গুলো অনেকে ভুলে যায়।”

“কালকের ম্যাচে বিশেষ করে, আমাদের নিজেদের স্কিল ও প্রক্রিয়ায় মনোযোগ দিতে হবে। গুছিয়ে খেলার চেষ্টা করতে হবে। তা যদি পারি, আশা করি ফল এমনিতেই আসবে।”