নিউ জিল্যান্ডের সামনেও উড়ে গেল ভারত

দারুণ বোলিংয়ে সুর বেঁধে দিলেন ট্রেন্ট বোল্ট। অন্য বোলাররাও মেলে ধরলেন নিজেদের। তাতে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ স্রেফ মুখ থুবড়ে পড়ল। চমৎকার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে বড় জয় তুলে নিল নিউ জিল্যান্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Oct 2021, 05:05 PM
Updated : 31 Oct 2021, 06:48 PM

দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রোববার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের জয় ৮ উইকেটে।

আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকে রানের জন্য হাপিত্যেশ করে কোনোমতে ১১০ রান করতে পারে ভারত। বিস্ময়করভাবে, ১২০ বলের ইনিংসে মাঝে ৭০ বলে তারা মারতে পারেনি কোনো বাউন্ডারিই!

ড্যারিল মিচেলের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে কিউইরা জিতে যায় ৩৩ বল বাকি থাকতেই। ইনিংস শুরু করে ৩৫ বলে ৩ ছক্কা ও ৪টি চারে ৪৯ রান করেন তিনি।

ফেভারিটদের একটি হিসেবে আসর শুরু করে প্রথম দুই ম্যাচেই বড় হারের তেতো স্বাদ পেল ভারত। বিরাট কোহলিদের সেমি-ফাইনালে যাওয়ার পথও হয়ে গেল খুব কঠিন। আগের ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে ১০ উইকেটে হেরেছিল তারা।

পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে আসর শুরুর পর নিউ জিল্যান্ড পেল প্রথম জয়। আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে তারা করল জয়ের হ্যাটট্রিক। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ সেমি-ফাইনালে ১৮ রানে ও গত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে ৮ উইকেটে জিতেছিল দলটি। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের এই জয়।

নিউ জিল্যান্ডের জয়ের ভিত গড়ে দেন মূলত বোলাররা। ৪ ওভারে ২০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে তাদের সফলতম বোলার বোল্ট। ১৭ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা যদিও লেগ স্পিনার ইশ সোধি। বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনার উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে দেন স্রেফ ১৫ রান।

ভারতের ইনিংসে ৩০-এ যেতে পারেননি একজনও। ৩০ ছাড়ায়নি কোন জুটিও। সর্বোচ্চ ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন রবীন্দ্র জাদেজা।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। শুরুতে ব্যাটসম্যানদের জন্য শট খেলা ছিল কিছুটা কঠিন। বল ব্যাটে আসছিল ধীরে।

সূর্যকুমার যাদবের চোটে সুযোগ পাওয়া ইশান কিষান ইনিংস শুরু করতে নামেন লোকেশ রাহুলের সঙ্গে। নিখুঁত লাইন-লেংথে প্রথম ওভারে বোল্ট দেন কেবল ১ রান। তার পরের ওভারে একটি চার মেরেই বিদায় নেন কিষান। লেগ সাইডে খেলে ধরা পড়েন তিনি ডিপ স্কয়ার লেগে।

পরের বলে রোহিত শর্মার উইকেটও পেতে পারতেন বোল্ট। কিন্তু সহজ ক্যাচ ফেলেন অ্যাডাম মিল্নে। শূন্য রানে জীবন পান রোহিত, যদিও তা কাজে লাগাতে পারেননি তিনি।

আগের দিন বোল্ট বলেছিলেন, পাকিস্তানের শাহিন শাহ আফ্রিদির মতো ভারতের টপ অর্ডারের পরীক্ষা নিতে চান তিনি। সেটি করেও দেখালেন বাঁহাতি এই পেসার। প্রথম দুই ওভারে ৭ রান দিয়ে তার প্রাপ্তি কিষানের উইকেট, রোহিতের উইকেট তো পেতে পেতেও পেলেন না।

পঞ্চম ওভারে মিল্নেকে চার মারেন রাহুল। ওভারের শেষ দুই বলে চার-ছক্কা হাঁকান রোহিত। পরের ওভারেই রাহুলকে (১৬ বলে ১৮) বিদায় করেন টিম সাউদি। তিনিও ক্যাচ দেন ডিপ স্কয়ার লেগে।

পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ভারতের স্কোর ২ উইকেটে ৩৫।

অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসে রোহিতকে ফেরান সোধি। লেগ স্পিনারের বাজে ডেলিভারিতে লং অনে ক্যাচ দেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান (১৪ বলে ১৪)।

রানের জন্য হাপিত্যেশ করেন কোহলি ও রিশাভ পান্ত। সোধিকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় কোহলি ফেরেন ১৭ বলে ৯ রান করে। প্রথম বোলার হিসেবে এই সংস্করণে কোহলিকে তিনবার আউট করলেন সোধি। ১৯ বলে ১২ রান করা পান্তকে বোল্ড করে দেন মিল্নে।

ভারতের ৭০ বলের বাউন্ডারি খরা কাটে হার্দিক পান্ডিয়ার চারে, ১৭তম ওভারের শেষ বলে। তবে শেষ দিকে প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। ১৯তম ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে পান্ডিয়া ও শার্দুল ঠাকুরের উইকেট তুলে নেন বোল্ট।

শেষ ওভারে জাদেজার ছক্কায় কোনোমতে ১১০ পর্যন্ত যেতে পারে ভারত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মুখোমুখি হওয়া ৯৫তম বলে প্রথম ছক্কা মারতে পারলেন জাদেজা। ১৯ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় গড়া তার ২৬ রানের ইনিংসটি।

ছোট লক্ষ্য তাড়ায় নিউ জিল্যান্ডের জয় নিয়ে সংশয় জাগেনি কখনই। তৃতীয় ওভারে বরুন চক্রবর্তীকে পরপর দুই চার মেরে হাত খোলেন মার্টিন গাপটিল। পরের ওভারে জাসপ্রিত বুমরাহকে একটি চার মারার পর স্লোয়ারে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি (১৭ বলে ২০)।

ষষ্ঠ ওভারে জাদেজার চার বলের মধ্যে দুটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান মিচেল। পাওয়ার প্লেতে নিউ জিল্যান্ডের রান ১ উইকেটে ৪৪।

কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে মিচেলের জুটি দলকে এগিয়ে নেয় জয়ের পথে। ১ রানের জন্য ফিফটি পাননি মিচেল। তাকে ফিরিয়ে ৫৪ বলে ৭২ রানের জুটি ভাঙেন বুমরাহ।

ডেভন কনওয়েকে নিয়ে বাকিটা সারেন উইলিয়ামসন। ৩১ বলে ৩ চারে ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন কিউই অধিনায়ক।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত: ২০ ওভারে ১১০/৭ (রাহুল ১৮, কিষান ৪, রোহিত ১৪, কোহলি ৯, পান্ত ১২, পান্ডিয়া ২৩, জাদেজা ২৬*, শার্দুল ০, শামি ০*; বোল্ট ৪-০-২০-৩, সাউদি ৪-০-২৬-১, স্যান্টনার ৪-০-১৫-০, মিল্নে ৪-০-৩০-১, সোধি ৪-০-১৭-২) 

নিউ জিল্যান্ড: ১৪.৩ ওভারে ১১১/২ (গাপটিল ২০, মিচেল ৪৯, উইলিয়ামসন ৩৩*, কনওয়ে ২*; বরুন ৪-০-২৩-০, বুমরাহ ৪-০-১৯-২, জাদেজা ২-০-২৩-০, শামি ১-০-১১-০, শার্দুল ১.৩-০-১৭-০, পান্ডিয়া ২-০-১৭-০)

ফল: নিউ জিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: ইশ সোধি