নামিবিয়ার স্বপ্নের জয়রথ থামাল আফগানিস্তান

প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে এসে যেন উড়ছিল নামিবিয়া। অসাধারণ পারফরম্যান্সে গড়ছিল নতুন নতুন ইতিহাস। তাদের অবিশ্বাস্য জয়রথ এবার থমকে গেল। ব্যাটসম্যানদের পর বোলারদের নৈপুণ্যে আসরে নিজেদের দ্বিতীয় জয় তুলে নিল আফগানিস্তান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Oct 2021, 01:37 PM
Updated : 31 Oct 2021, 02:31 PM

আবু ধাবিতে রোববার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে আফগানদের জয় ৬২ রানে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই প্রথম মুখোমুখি হলো দল দুটি।

মোহাম্মদ শাহজাদের ৪৫ ও মোহাম্মদ নবির ৩২ রানের ক্যামিও ইনিংসে ১৬০ রান তোলে আফগানিস্তান। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিয়ে নামিবিয়াকে ৯৮ রানে থামিয়ে দেয় তারা।

প্রথম রাউন্ডে নেদারল্যান্ডস ও আয়ারল্যান্ড এবং সুপার টুয়েলভে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জেতা নামিবিয়াকে থামানোর নায়কদের একজন নাভিন-উল-হক। দারুণ বোলিংয়ে ২৩ রানে টপঅর্ডারের দুটিসহ মোট ৩ উইকেট নিয়ে তিনিই ম্যাচ সেরা। ৯ রান দিয়ে তিনটি নিয়েছেন হামিদ হাসানও।  

জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট কিছুটা মন্থর থাকলেও ব্যাটিংয়ের জন্য খুব কঠিন ছিল না। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানিস্তান পায় উড়ন্ত সূচনা। প্রথম ওভারেই রুবেন ট্রাম্পেলমানকে একটি করে ছক্কা-চার মারেন হজরতউল্লাহ জাজাই। পরের দুই ওভারে আসেনি বাউন্ডারি। চতুর্থ ওভারে এই পেসারকে পেয়ে দুটি চার হাঁকান জাজাই।

বাঁহাতি এই ওপেনার ইয়ান ফ্রাইলিঙ্ককে মারেন টানা চার ও ছক্কা। জাজাইয়ের সঙ্গে দ্রুত রান বাড়ানোয় মনোযোগ দেন শাহজাদও। ডেভিড ভিসার বলে তার হাঁকানো একটি করে ছক্কা ও চারে ৫০ রান নিয়ে পাওয়ার প্লে শেষ করে আফগানিস্তান।

পরের ওভারেই ভাঙে তাদের ৫৩ রানের উদ্বোধনী জুটি। ৩৩ রান করে জেজে স্মিটের বলে স্কয়ার লেগ সীমানায় ধরা পড়েন জাজাই। টিকতে পারেননি রহমানউল্লাহ গুরবাজও।

এক প্রান্ত আগলে রেখে রান বাড়াতে থাকেন শাহজাদ। ফিফটির আগে তাকে থামিয়ে দেন ট্রাম্পেলমান। ২ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৩ বলে ৪৫ রান করেন এই ওপেনার।

এই ম্যাচ খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলার ঘোষণা দেওয়া আসগর আফগান ব্যাটিংয়ে নামার সময় দুই পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সংবর্ধনা দেন নামিবিয়ার ক্রিকেটাররা। নিজের শেষ ম্যাচে ব্যাট হাতে ভূমিকা রাখেন আসগর। ৩১ রান করে ফেরার সময়ে তাকে গার্ড অব অনার দেন সতীর্থরা। ২৩ বলের ইনিংসে একটি ছক্কার সঙ্গে মারেন ৩ চার।

শেষ দিকে ঝড় তোলেন নবি। এক ছক্কা ও ৫ চারে ১৭ বলে ৩২ রান করে থাকেন অপরাজিত। দল পায় দেড়শ ছাড়ানো পুঁজি।

রান তাড়ায় নামিবিয়ার শুরুটা হয় বেশ বাজে। নাভিনের করা ইনিংসের চতুর্থ বলেই আকাশে তুলে দিয়ে মিড-অনে ধরা পড়েন ক্রেইগ উইলিয়ামস।

নবিকে ছক্কা মেরে ডানা মেলার আভাস দেন মাইকেল ফন লিনগেন। কিন্তু নাভিনের স্লোয়ারে ক্যাচ দেন তিনি স্কয়ার লেগে।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আরেকটি উইকেট হারায় নামিবিয়া। গুলবাদিন নাইবের স্লোয়ারে বোল্ড হয়ে যান ইয়ান নিকোল লফটি-ইটন। প্রথম ছয় ওভারে রান আসে ২৯।

রশিদ খানকে প্যাডল সুইপ করতে গিয়ে স্টাম্প এলোমেলো হয়ে যায় ইয়ান গ্রিনের। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে গেরহার্ড এরাসমাসকে বোল্ড করে দেন হামিদ। এই পেসারের বাউন্সারে কট বিহাইন্ড হন স্মিট।

৫৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে হার অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় নামিবিয়ার। দলকে পথে ফেরাতে পারেননি ভিসাও। গত কয়েকটি ম্যাচে তিনি ছিলেন দলের জয়ের নায়কদের একজন। তাকে ইয়র্কারে বোল্ড করেন হামিদ।

৩০ বলে ২ চারে ২৬ রান করেন ভিসা। নামিবিয়ার ইনিংসে যা সর্বোচ্চ। ২০ রানও পার করতে পারেননি আর কেউ।

এরপর আর বেশিদূর যাওয়া হয়নি দলটির। শেষ উইকেটে কোনোমতে নিজেদের সর্বনিম্ন ৯৬ রান এড়ায় তারা।

আগামী মঙ্গলবার পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে নামিবিয়া। পরদিন আফগানিস্তান খেলবে ভারতের বিপক্ষে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৬০/৫ (হজরতউল্লাহ ৩৩, শাহজাদ ৪৫, রহমানউল্লাহ ৪, আসগর ৩১, নাজিবউল্লাহ ৭, নবি ৩২*, নাইব ১*; ট্রাম্পেলমান ৪-০-৩৪-২, স্মিট ৩-০-২২-১, ভিসা ৪-০-৩৩-০, ফ্রাইলিঙ্ক ৩-০-৩৪-০, লফি-ইটন ৪-০-২১-২, শুলজ ১-০-৮-০, এরাসমাস ১-০-৭-০)।

নামিবিয়া: ২০ ওভারে ৯৮/৯ (উইলিয়ামস ১, ফন লিনগেন ১১, লফটি-ইটন ১৪, এরাসমাস ১২, গ্রিন ১, ভিসা ২৬, স্মিট ০, ফ্রাইলিঙ্ক ৬, ফ্রান্স ৩, ট্রাম্পেলমান ১২*, শুলজ ৬*; নাভিন ৪-০-২৬-৩, নবি ২-০-১৭-০, হামিদ ৪-০-৯-৩, নাইব ৪-১-১৯-২, জানাত ২-০-১১-০, রশিদ ৪-০-১৪-১)।

ফল: আফগানিস্তান ৬২ রানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: নাভিন-উল-হক