বাংলাদেশের ফিল্ডিং দুর্দশার শেষ কোথায়?

এতো সহজ ক্যাচ হাতছাড়া হলো, দেখেও যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না মাহমুদউল্লাহর। দেশের সেরা ফিল্ডার হিসেবে বিবেচিত আফিফ হোসেনকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, কি হয়েছিল? ফিল্ডারের মাথা নাড়ানো আর বল থ্রো করার ধরন দেখেই বুঝে নিলেন, হাতছাড়া হয়েছে আরেকটা সুযোগ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে নিয়মিত চিত্রের একটি। ম্যাচের পর ম্যাচ ধরে একই ভুল হতে থাকায় ক্যাচিং দলের জন্য উদ্বেগের বলে স্বীকার করে নিলেন মাহমুদউল্লাহ।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতদুবাই থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2021, 03:27 PM
Updated : 30 Oct 2021, 03:27 PM

ব্যাটসম্যান ক্যাচ দিয়েছেন আর পেসার তাসকিন আহমেদ দুই হাত তুলে মোনাজাত করছেন, বাংলাদেশের ক্যাচিং দুর্বলতা সবচেয়ে স্পষ্ট ফুটিয়ে তোলে হয়ত এই ছবিটা। এবার তেমন ছবি হয়নি বটে, কিন্তু অন্য বোলারদের বেলায় পরিস্থিতি ওই একই রকমই আছে। আস্থা রাখা যাচ্ছে না যেন কারও উপর। ক্যাচটা সম্পূর্ণ হলে তবেই ফেলা যাচ্ছে স্বস্তির নিঃশ্বাস।

‘ক্যাচ হাতছাড়া ক্রিকেটের অংশ’, ‘যে কোনো দিন যে কোনো ফিল্ডার ক্যাচ ছাড়তে পারেন’, বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা শোনা যায় নিয়মিত। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো একবার বলেছিলেন, ম্যাচে চাপের মুহূর্তে হয়ত হাত থেকে ছুটে যেতে পারেন ক্যাচ। এর বাইরে ক্যাচ ছাড়ার কোনো ব্যাখ্যা বাংলাদেশ দল থেকে কখনও মেলেনি।

নিউ জিল্যান্ড সফরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশের ভরাডুবির পর দেশে ফিরে একটা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন নাসুম আহমেদ। বলেছিলেন, নিউ জিল্যান্ডের আবহাওয়া ও সেখানকার পরিষ্কার আকাশ ক্যাচিংয়ে তাদের ব্যর্থতার কারণ। মানিয়ে নিতে যথেষ্ট সময় না পাওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি। যদিও তাদের অনেক ম্যাচই ছিল রাতে। যদিও তামিম ইকবাল বারবারই বলছিলেন, যথেষ্ট সময় তারা পেয়েছেন।

প্রবল সমালোচনার পর দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের দুটি সিরিজে বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ে দেখা যায় কিছুটা উন্নতির ছাপ। তবে ওই দুই সিরিজেও ক্যাচ পড়ে তিনটি।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে লং লেগে ক্যাচ ছাড়েন শরিফুল ইসলাম। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরের সিরিজে ক্যাচ ছুটে যায় দুটি। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে শেষ ওভারে মুস্তাফিজের বলে সুযোগ হাতছাড়া করেন সাকিব আল হাসান। পঞ্চম ম্যাচে দ্বিতীয় ওভারে নাসুম আহমেদের বলে জীবন পান রাচিন রবিন্দ্র। 

অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস ছিল উঁচুতে। সেমি-ফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে দল এসেছিল বিশ্বকাপে। কিন্তু বিশ্ব মঞ্চে সেই পুরানো চেহারাতেই বাংলাদেশ। মূল পর্বে তিন ম্যাচ পেরিয়ে গেলেও জয়হীন দল। এতে বড় দায় ফিল্ডিংয়ের। 

প্রাথমিক পর্ব ও সুপার টুয়েলভ মিলিয়ে ছয় ম্যাচে হাত থেকে ছুটেছে নয়টি ক্যাচ। সংখ্যাটি হতে পারত ১০। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ ওভারে তাসকিন আহমেদের বলে জর্জ মানজির কঠিন ক্যাচ ছাড়েন সাকিব। তার হাত ফসকে উল্টো ছক্কা পান স্কটিশ ব্যাটসম্যান। পরে দেখা যায় সেটি ছিল ‘নো’ বল। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ হেরেছিল ছয় রানেই। ক্যাচ ছাড়ায় বেশিরভাগ সময়ই তাদের দিতে হয়েছে চড়া মাশুল।

দলের জন্য সবচেয়ে দুর্ভাবনার ব্যাপার, ক্যাচের জন্য যাদের সবচেয়ে বেশি নিরাপদ ভাবা হয়, তারাই ব্যর্থ হয়েছেন বেশি। লিটন দাস, মেহেদি হাসানের হাত থেকে ছুটেছে দুটি করে ক্যাচ। একটি করে ছেড়েছেন মাহমুদউল্লাহ, নুরুল হাসান সোহান ও আফিফ হোসেন। মুস্তাফিজও ছেড়েছেন দুটি ক্যাচ।

বেশিরভাগই ছিল সহজ ক্যাচ। ক্রিকেটের মৌলিক ধারণা থাকা কারও হাত থেকে এসব ক্যাচ ফসকে যাওয়ার কথা নয়। তবুও ছুটছে। দিনের পর দিন অনুশীলনে অসংখ্য ক্যাচ ধরে পোক্ত হওয়া ক্রিকেটারা ম্যাচে মুঠোয় রাখতে পারছেন না বল।

শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩ রানে হেরে বিশ্বকাপ থেকে প্রায় ছিটকে গেছে বাংলাদেশ। মূল পর্বে ১৪ বছরের খরা কাটানো দূরের কথা, আবারও শূন্য হাতে ফেরার শঙ্কা মাহমুদউল্লাহদের সামনে। শেষটা অন্তত ভালো করতে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক। এর জন্য তিনি দিলেন ফিল্ডিংয়ে উন্নতির তাগিদ।  

“এরকম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে বিশেষ করে দলের সেরা ফিল্ডাররা যদি ক্যাচ মিস করে… কেউ তো আর ইচ্ছে করে মিস করে না। আমরা আশা করি, যে ওই সুযোগগুলো তারা কাজে লাগাবে।”

“যেহেতু আমরা ম্যাচের পর ম্যাচ ধারাবাহিকভাবে ওই ভুলগুলো করছি, অবশ্যই এগুলো চিন্তার একটা ব্যাপার। আমার মনে হয় যে, আমাদের ক্যাচিংয়ে আরও ভালো করতে হবে এবং করা উচিত। না, এগুলো আসলে টেকনিক্যাল কনসার্ন না। সহজ ক্যাচই ছিল, দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিস হয়ে গেছে।”

দীর্ঘদিন ধরেই ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থা প্রায় একইরকম। হাত থেকে ছুটে যায় অসংখ্য সুযোগ। গত জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও তিন ম্যাচে হাতছাড়া হয়েছিল পাঁচটি ক্যাচ।

শুধু ক্যাচিং কেন, গ্রাউন্ড ফিল্ডিং বাজে হওয়ার কিংবা টানা খারাপ হওয়ার কোনো যুক্তিই থাকার কথা নয়। কিন্তু এখানেও বাংলাদেশের বাজে অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে। সবশেষ কবে বাংলাদেশের দুর্দান্ত গ্রাউন্ড ফিল্ডিং হয়েছে, মনে করতে পারবেন না হয়তো অনেকেই।

এত ব্যর্থতার পরও ফিল্ডিং কোচ কীভাবে টিকে আছেন, কদিন আগে প্রশ্ন করেছিলেন দেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পরও কি টনক নড়বে বিসিবির?