এক ওভারে ২৫ নেওয়ার আত্মবিশ্বাস ছিল আসিফের

২ ওভারে প্রয়োজন ২৪ রান। এক ওভারেই চার ছক্কায় খেলা শেষ! সেই কীর্তিমানের নাম এখন ক্রিকেট অনুসারী মাত্রই সবার জানা। স্নায়ুর চাপকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে পাওয়ার হিটিংয়ের দারুণ প্রদর্শনীতে বিশ্বকাপের আলোচিত চরিত্র এখন আসিফ আলি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত ক্যামিওতে ম্যাচ জেতানোর পর পাকিস্তানি এই ব্যাটসম্যান বললেন, এমন কিছুর আত্মবিশ্বাস তার ছিল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2021, 07:28 AM
Updated : 30 Oct 2021, 07:28 AM

আফগানিস্তানের বিপক্ষে শুক্রবার যখন উইকেটে যান আসিফ, পাকিস্তানের জয়ের জন্য তখন প্রয়োজন ৩ ওভারে ২৬ রান। উইকেটে শোয়েব মালিকের সঙ্গে যোগ দেন আসিফ।

তবে ওই ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করেন নাভিন-উল-হক। ওভারের প্রথম দুই বলে সিঙ্গেল আসে। পরের চার বলে একটি রানও দেননি এই আফগান পেসার। এর মধ্যে নাভিন নিজের বলে কঠিন এক ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি মালিকের। দারুণ বোলিংয়ে তবু ঠিকই এক বল পরে আউট করেন মালিককে।

দুই রানের ওই ওভারের পর ম্যাচ হেলে পড়ে আফগানদের দিকে। কিন্তু এক ওভারেই সব সমীকরণ বদলে দেন আসিফ। ১৯তম ওভারে পেসার করিম জানাতের প্রথম বলে ক্রিজের গভীরে গিয়ে ছক্কা মারেন লং অফ দিয়ে। ওই ওভারে তিনি নিজের হাতের জোর দেখান আরও তিনবার। অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বল উড়িয়ে মারেন মিড উইকেট দিয়ে। একটু ফুল লেংথ বল ছক্কা বানান সোজা ব্যাটে। আরেকটিতে অফ স্টাম্পের বাইরের হাফ ভলি আছড়ে ফেলেন এক্সট্রা কাভার দিয়ে গ্যালারিতে।

ম্যাচের পর আসিফ বললেন, এক পাশে নাভিন ভালো বল করছিলেন দেখে আরেক প্রান্ত থেকে এক ওভারেই খেলা শেষ করার পরিকল্পনা ছিল তার।

“ওই ওভারটায় এক পাশের বাউন্ডারি ছোট ছিল। ওই দিকটা টার্গেট করেছিলাম। কিন্তু বোলার অফ স্টাস্পের বাইরে বল করেছে, তাই বড় পাশ দিয়েই ছক্কা মারতে হয়েছে। শোয়েব (মালিক) ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছিলাম যে এই পাশ থেকে এক ওভারেই খেলা শেষ করে দেব। তিনি আউট হয়ে গেলেন। তবে আমার বিশ্বাস ছিল যে, অন্য পাশ থেকেও আমি করতে পারব।”

“শোয়েব ভাইয়ের সঙ্গে আগের ওভারেও কথা বলছিলাম যে, ‘সে (নাভিন) তাদের মূল বোলার। তাকে উইকেট দেওয়া যাবে না। অন্য পাশ থেকে এক ওভারে ২৫ দরকার হলেও করে ফেলব। এটাই লক্ষ্য ছিল, করতে পেরেছি।”

স্রেফ এই ম্যাচেই নয়, আগের ম্যাচেও শেষ সময়ের দাবি দারুণভাবে মেটান আসিফ। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সেদিন ৩ ছক্কায় ১২ বলে ২৭ রান করে অপরাজিত থাকে। এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে ১৯ বল খেলে তার রান ৫২, ছক্কা ৭টি।

শেষ সময়টায় অমন চাপের মধ্যেও নির্ভার থেকে কিভাবে নিজের কাজ সারেন তিনি? আসিফ বললেন, ক্রিকেটীয় ভাবনার সফল প্রয়োগেই তার অমন সাফল্য।

“আগে দেখি পরিস্থিতি, ম্যাচের দাবি কোনটি। এরপর বোলিং দেখি, কার কার ওভার বাকি আছে। তার পর কিছুটা মাথা খাটাতে হয়, ফিল্ডিং দেখে বুঝে নেই যে বোলার কেমন বল করতে পারে। এসবই ভাবি।”

এখন যিনি নায়ক, কদিন আগেও পাকিস্তানের ক্রিকেটে তাকে নিয়ে ছিল সংশয়। ঘরোয়া ক্রিকেট ও পিএসএলে তিনি বরাবরই শেষ দিকে এরকম ছক্কার ঝড় তুলে পরিচিত। কিন্তু জাতীয় দলে তা দেখা গেছে কম সময়ই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার সামর্থ্য, তার চাপ সহ্য করার ক্ষমতা, এসব প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এবার বিশ্বকাপ দলেও তাকে জায়গা দেওয়ায় পাকিস্তানের ক্রিকেট মহলে সমালোচনা হয়েছে তুমুল। সাবেক ক্রিকেটাররা প্রশ্ন তুলেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাচ্ছেতাই ভাবে অপমান করা হয়েছে তাকে।

ব্যাটেই সবকিছুর জবাব দেওয়ার পর আসিফ বললেন, মাঠের বাইরের ওই জগৎ থেকেই তিনি অনেকটা দূরে।

“সমালোচনা আমি দেখিই না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনুসরণই করি না, ওসব থেকে অনেক দূরে। জাতীয় দলে আমার অবস্থা ছিল যে, কখনও দলে এসেছি, কখনও বাদ পড়েছি। এখন পাকিস্তানের আবার প্রয়োজন পড়েছে, দলে ডেকেছে।”

“আমি ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে লিগ খেলেছি এবং ঘরোয়া ক্রিকেটও খেলছিলাম। তাই ছন্দে ছিলাম। আমাকে দলে নেওয়া হয়েছে স্রেফ পারফর্ম করছিলাম বলেই।”