আসিফের শেষের ঝড়ে আফগানিস্তানকে হারাল পাকিস্তান

৭৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে একশর আগে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় দল। সেখান থেকে মোহাম্মদ নবি ও গুলবাদিন নাইবের দারুণ জুটি আফগানিস্তানকে এনে দিল লড়াইয়ের পুঁজি। পরে দুর্দান্ত বোলিংয়ে আশা জাগালেন মুজিব উর রহমান ও রশিদ খান। কিন্তু আসিফ আলির শেষের তাণ্ডবে তাদের মুঠো থেকে জয় ছিনিয়ে নিল পাকিস্তান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2021, 05:51 PM
Updated : 29 Oct 2021, 07:02 PM

দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শুক্রবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে পাকিস্তানের জয় ৫ উইকেটে।

আগে ব্যাটিংয়ে নেমে আফগানিস্তান করে ৬ উইকেটে ১৪৭ রান। পাকিস্তান সেটি পেরিয়ে যায় এক ওভার বাকি থাকতে।

অথচ পাকিস্তানের ইনিংসের ১৮ ওভার শেষেও জয়ের পাল্লা ভারী ছিল আফগানিস্তানের। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ছিল ২৪। ১৯তম ওভারে করিম জানাতকে চারটি ছক্কা হাঁকিয়ে সব উত্তেজনার ইতি টেনে দেন আসিফ।

মাত্র ৭ বলে ৪ ছক্কায় তিনি খেলেন ২৫ রানের ক্যামিও ইনিংস। আগের ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেও আসিফের শেষের ঝড়ে জিতেছিল পাকিস্তান।

আসরে টানা তিন জয়ে সেমি-ফাইনালের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল বাবর আজমের দল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অধিনায়কের ৪৭ বলে ৫১ রানের ইনিংসটি দলের জয়ে রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। 

যে কোনো সংস্করণে পাকিস্তানকে প্রথমবার হারানোর আশা জাগিয়েও পারল না আফগানিস্তান। স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর পর প্রথম হারের স্বাদ পেল তারা।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে আফগানিস্তানের শুরুটা ভালো হয়নি। প্রথম তিন ওভারের মধ্যেই হারায় দুই ওপেনারকে। বাঁহাতি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিমকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় বল আকাশে তুলে হজরতউল্লাহ জাজাই ফেরেন শূন্য রানে। শাহিন শাহ আফ্রিদিকে একটি চার মারার পর মিড অনে সহজ ক্যাচ তুলে দেন মোহাম্মদ শাহজাদ।

চতুর্থ ওভারে ইমাদকে ছক্কায় ওড়ান রহমানউল্লাহ গুরবাজ। শেষ দুই বলে ছক্কা-চার মারেন আসগর আফগান। পরের ওভারেই তিনি ফেরেন হারিস রউফকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে। আক্রমণে এসেই গুরবাজকে বিদায় করেন হাসান আলি।

পাওয়ার প্লেতে ৪৯ রান তুলতে আফগানরা হারায় ৪ উইকেট।

একটি করে চার-ছক্কা মেরে ইমাদের বলে বাউন্ডারিতে ক্যাচ তুলে দেন করিম জানাত। প্রথম ম্যাচে ঝড়ো ফিফটি করা নাজিবউল্লাহ জাদরান ভালো শুরুর পর টেনে নিতে পারেননি ইনিংস। লেগ স্পিনার শাদাব খানের গুগলিতে তিনি ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে (২১ বলে ২২)।

ছবি: পিসিবি

১৩তম ওভারে ৭৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছিল আফগানিস্তান। সেখান থেকে নবি ও গুলবাদিনের ৪৫ বলে ৭১ রানের ওই জুটি। শুরুতে কিছুটা সময় নেন দুজন। পরে বাড়ান রানের গতি। শেষ ৩ ওভারে আফগানরা তোলে ৪৩ রান।

৩২ বলে ৫টি চারে ৩৫ রান করেন নবি। গুলবাদিনের ব্যাট থেকেও আসে ৩৫ রান। ২৫ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো তার ইনিংস।

২৫ রানে ২ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সফলতম বোলার ইমাদ। আফ্রিদি, শাদাবরাও করেন নিয়ন্ত্রিত বোলিং। 

আফগানিস্তান বোলিং শুরু করে দুই প্রান্ত থেকে স্পিন দিয়ে। তৃতীয় ওভারে সাফল্য আসে প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়া মুজিবের হাত ধরে। অফ স্পিনারকে ছক্কায় ওড়াতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন মোহাম্মদ রিজওয়ান। প্রথম দুই ম্যাচে অপরাজিত ৭৯ ও ৩৩ রানের পর কিপার-ব্যাটসম্যান এবার করেন ১০ বলে ৮।

তিনে নেমে আগ্রাসী শুরু করেন ফখর জামান। নবির পরপর দুই বলে মারেন চার-ছক্কা। ইনিংসের প্রথম সাত ওভারের মধ্যেই টানা চার ওভারের স্পেলে মুজিব দেন কেবল ১৪ রান।

বাবর শুরুতে খেলেন দেখেশুনে। এর মাঝেই ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হিসেবে দ্রুততম এক হাজার রানের রেকর্ড গড়েন তিনি। ভেঙে দেন বিরাট কোহলির আগের রেকর্ড। 

এরপর নবম ওভারে নাভিনের চার বলের মধ্যে দুই বাউন্ডারি মেরে পাকিস্তান অধিনায়ক বাড়ান রান। ফখরের সঙ্গে তার জুটির রান পঞ্চাশ স্পর্শ করে ৩৯ বলে।

ছবি: আইসিসি

একাদশ ওভারে আক্রমণে এসেই উল্লাসে মাতেন রশিদ। তার আবেদনে বাবরকে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার। পাকিস্তান অধিনায়ক নেন রিভিউ। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল স্টাম্প মিস করে যেত।

পরের ওভারে ফখরকে এলবিডব্লিউ করে ৬৩ রানের জুটি ভাঙেন নবি। নিজের তৃতীয় ওভারে মোহাম্মদ হাফিজকে ফিরিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম ১০০ উইকেটের রেকর্ড গড়েন রশিদ।

৪৫ বলে ফিফটি পূর্ণ করে এক প্রান্ত আগলে রাখেন বাবর। শেষ ৪ ওভারে তাদের প্রয়োজন পড়ে ৩৮ রান।

রশিদের শেষ ওভারে ছক্কায় ওড়ান শোয়েব মালিক। চতুর্থ বলে বাবরের ক্যাচ ফেলেন নাভিন। চড়া মূল্য অবশ্য দিতে হয়নি। ওভারের শেষ বলে বাবরকে বোল্ড করে দেন রশিদ।  

১৮তম ওভারে মাত্র ২ রান দিয়ে নাভিন ফিরিয়ে দেন মালিককে। আফগানরা তখন প্রহর গুনছিল জয়ের আশায়। কে জানত, পরের ওভারেই তাদের সব আশা গুঁড়িয়ে যাবে আসিফের ব্যাটে!

ওভারের প্রথম আর মুখোমুখি দ্বিতীয় বলেই আসিফ মারেন ছক্কা। এরপর তৃতীয়, পঞ্চম ও শেষ বল সীমানার ওপাড়ে আছড়ে ফেলে নায়ক তিনিই। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও ওঠে তার হাতে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৪৭/৬ (জাজাই ০, শাহজাদ ৮, গুরবাজ ১০, আসগর ১০, জানাত ১৫, নাজিবউল্লাহ ২২, নবি ৩৫*, গুলবদিন ৩৫*; আফ্রিদি ৪-০-২২-১, ইমাদ ৪-০-২৫-২, রউফ ৪-০-৩৭-১, হাসান ৪-১-৩৮-১, শাদাব ৪-০-২২-১)  

পাকিস্তান: ১৯ ওভারে ১৪৮/৫ (রিজওয়ান ৮, বাবর ৫১, ফখর ৩০, হাফিজ ১০, মালিক ১৯, আসিফ ২৫* শাদাব ০*; মুজিব ৪-০-১৪-১, নবি ৪-০-৩৬-১, নাভিন ৩-০-২২-১, জানাত ৪-০-৪৮-০, রশিদ ৪-০-২৬-২) 

ফল: পাকিস্তান ৫ উইকেট জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: আসিফ আলি