ওয়ার্নারের ব্যাটে তছনছ শ্রীলঙ্কা

‘ফর্ম ক্ষণস্থায়ী, ক্লাস চিরস্থায়ী’-ডেভিড ওয়ার্নারের ফর্মহীনতা নিয়ে কদিন আগে বলেছিলেন কিংবদন্তি স্পিনার শেন ওয়ার্ন। পূর্বসূরির কথার প্রমাণ দিতে দেরি করলেন না অস্ট্রেলিয়ার তারকা ওপেনার। দুঃসময় পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়ালেন। দারুণ এক ইনিংসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দলকে এনে দিলেন জয়।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2021, 05:19 PM
Updated : 28 Oct 2021, 06:14 PM

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার লঙ্কানদের বিপক্ষে ৭ উইকেটে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। টুর্নামেন্টের শুরুতে অনেকের চোখেই ফেভারিটের কাতারে ছিল না তারা। সেই দলই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে টানা দুই জয় নিয়ে সেমি-ফাইনালের পথে খানিকটা এগিয়ে গেল।

ওয়ার্নার ব্যাট হাতে দলকে জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও ম্যাচ সেরার পুরস্কার অবশ্য জিতেছেন বোলার অ্যাডাম জ্যাম্পা। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে প্রতিপক্ষকে ১৫৫ রানে আটকে রাখতে তার অবদান অনস্বীকার্য। কিপটে বোলিংয়ে ৪ ওভারে কেবল ১২ দিয়ে ২ উইকেট নেন এই লেগ স্পিনার।

রান তাড়ায় ওয়ার্নারের ৪২ বলে ৬৫ রানের ইনিংসে ১৮ বল আগেই জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। লম্বা সময় ধরে রানের খোঁজে থাকা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান আভাস দিলেন ছন্দে ফেরার।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কা তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারায়। প্যাট কামিন্সকে আকাশে তুলে ৩০ গজের মধ্যে ওয়ার্নারের হাতে ধরা পড়েন পাথুম নিসানকা। এর প্রভাব অবশ্য দলের ওপর পড়তে দেননি চারিথ আসালাঙ্কা। মুখোমুখি হওয়া প্রথম দুই বলেই কামিন্সকে চার মারেন তিনি। আক্রমণে আসা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে তিন বলের মধ্যে হাঁকান একটি করে ছক্কা ও চার।

বাংলাদেশের বিপক্ষে লঙ্কানদের জয়ের নায়ক আসালাঙ্কা ও কুসাল পেরেরার দৃঢ়তায় পাওয়ার প্লেতে ৫৩ রান তোলে দলটি। দারুণ ব্যাটিংয়ে রান বাড়াতে থাকেন দুইজন। ৩৫ বলেই তাদের জুটির রান স্পর্শ করে পঞ্চাশ।

৪৪ বলে ৬৩ রানের এই জুটি ভাঙ্গেন জ্যাম্পা। এই লেগ স্পিনারকে ফ্ল্যাট সুইপ করে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন আসালাঙ্কা। এক ছক্কা ও ৪ চারে করেন ২৭ বলে ৩৫।

দারুণ এক শটে লং-অন দিয়ে স্টার্ককে ছক্কায় ওড়ান পেরেরা। অস্ট্রেলিয়ান পেসার প্রতিশোধ নিতে দেরি করেননি। পরের বলেই দুর্দান্ত ইয়র্কারে পেরেরার (২৫ বলে ৩৫) স্টাম্প এলোমেলো করে দেন।

জ্যাম্পাকে স্লগ সুইপ করে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আভিশকা ফার্নান্দো। পরের ওভারেই স্টার্কের বলে কট বিহাইন্ড ভানিন্দু হাসারাঙ্গা।

১৬ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারানো দলকে টানেন ভানুকা রাজাপাকসা ও দাসুন শানাকা। দুইজনের ৪০ রানের জুটিতে অগ্রণী ছিলেন রাজাপাকসা।

উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শানাকা (১৯ বলে ১২)। পরে চামিকা করুনারত্নেকে নিয়ে দলের রান দেড়শ পার করেন রাজাপাকসা। এক ছক্কা ও ৪ চারে তিনি অপরাজিত ছিলেন ৩৩ রান নিয়ে।

জ্যাম্পার মতো অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুটি করে উইকেট নেন স্টার্ক ও কামিন্স।

লক্ষ্য তাড়ায় অস্ট্রেলিয়া পায় উড়ন্ত সূচনা। অ্যারন ফিঞ্চ ও ওয়ার্নারের ব্যাটে দ্রুত রান আসতে থাকে। দুই ওপেনার চড়াও হন লাহিরু কুমারার ওপর। এই পেসারের এক ওভারে একটি করে ছক্কা-চার মারেন ফিঞ্চ, ওয়ার্নার মারেন দুই চার। ওভার থেকে আসে ২০ রান।

দুশমন্থ চামিরাকে টানা ছক্কা-চার মারেন ফিঞ্চ। ওই ওভারেই সাফল্য পেতে পারত শ্রীলঙ্কা। উইকেটের পেছনে ওয়ার্নারের সহজ ক্যাচ ছাড়েন কিপার পেরেরা। পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া করে ৬৩ রান। আসরে যা সর্বোচ্চ।

উইকেটের খোঁজে থাকা লঙ্কানদের সাফল্য এনে দেন হাসারাঙ্গা। এই লেগ স্পিনারের শর্ট বলে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন ফিঞ্চ। ২ ছক্কা ও ৫ চারে ৩৭ রান করা অস্ট্রেলিয়া অধিনায়কের বিদায়ে ভাঙে ৭০ রানের উদ্বোধনী জুটি।

নিজের পরের ওভারে ম্যাক্সওয়েলকে ফেরান হাসারাঙ্গা। ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় মিড উইকেট সীমানায় ধরা পড়েন বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। তবে ওয়ার্নারের ব্যাটে রান আসতে থাকায় কখনোই জয় নিয়ে ভাবতে হয়নি তাদের।

৩১ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন বাঁ হাতি ওপেনার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে গত এপ্রিলের পর যা তার প্রথম। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন স্টিভেন স্মিথ। অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন লক্ষ্যের দিকে। তাদের ব্যাটে আরেকটি ৫০ রানের জুটি পায় অস্ট্রেলিয়া।

ওয়ার্নারের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। শানাকাকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় লং-অফে ধরা পড়েন তিনি। তার ৪২ বলে ৬৫ রানের ইনিংসটি গড়া ১০ চারে।

শেষ দিকে মার্কাস স্টয়নিসকে নিয়ে দলকে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে দেন স্মিথ। ২৬ বলে ২৮ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। আর স্টয়নিস মাঠ ছাড়েন এক ছক্কা ও ২ চারে ৭ বলে ১৬ রান করে।

আগামী শনিবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে অস্ট্রেলিয়া। একই দিন শ্রীলঙ্কার প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৫৪/৬ (নিসানকা ৭, পেরেরা ৩৫, আসালাঙ্কা ৩৫, আভিশকা ৪, রাজাপাকসা ৩৩*, হাসারাঙ্গা ৪, শানাকা ১২, চামিকা ৯*; স্টার্ক ৪-০-২৭-২, হেইজেলউড ৪-০-২৬-০, কামিন্স ৪-০-৩৪-২, ম্যাক্সওয়েল ১-০-১৬-০, স্টয়নিস ৩-০-৩৫-০, জ্যাম্পা ৪-০-১২-২)।

অস্ট্রেলিয়া: ১৭ ওভারে ১৫৫/৩ (ওয়ার্নার ৬৫, ফিঞ্চ ৩৭, ম্যাক্সওয়েল ৫, স্মিথ ২৮*, স্টয়নিস ১৬*; চামিকা ২-০-১৯-০, থিকশানা ৪-০-২৭-০, চামিরা ৩-০-৩৩-০, কুমারা ৩-০-৪৮-০, হাসারাঙ্গা ৪-০-২২-২, শানাকা ১-০-৬-১)।

ফল: অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: অ্যাডাম জ্যাম্পা