আবু ধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে বুধবার সুপার টুয়েলভের ম্যাচে ৮ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। তাদের ১২৪ রান ৩৫ বল বাকি থাকতেই ছাড়িয়ে গেছে ওয়েন মর্গ্যানের দল।
দুঃসময় কাটানোর লড়াইয়ে শুরুটা ইতিবাচক হলেও শেষ পর্যন্ত ব্যাটিংয়ে দেখা গেল সেই পুরান বাংলাদেশকেই। পাওয়ার প্লেতে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে পিছিয়ে পড়া দলটি ইনিংসে কখনোই ছন্দ পায়নি।
বলের দিক থেকে কেবল একটি জুটি ছাড়াতে পেরেছে ২০, রানের দিক থেকে দুটি। শুরু থেকে নিয়মিত উইকেট হারানোয় পুরো ইনিংস জুড়ে দেখা গেছে মেরামতের ব্যর্থ চেষ্টা। কোনো ব্যাটসম্যানই কন্ডিশন-উইকেট-পরিস্থিতি বুঝে দায়িত্ব নিতে না পারায় তা সফলও হয়নি।
বোলিংয়ে ছিল না তেমন ধার। বাউন্ডারি হজম করতে হয়েছে প্রায় প্রতি ওভারেই। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও বিপিএলের এক সময়ের নিয়মিত মুখ জেসন রয় ও দাভিদ মালানকে খুব একটা পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি বোলাররা। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ওপেনার রয় ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন বাংলাদেশকে, দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে ফিরেন মালান।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের উইকেট হারানোর শুরুটা নিজেকে খুঁজে ফেরা লিটন দাসকে দিয়ে। আগের ম্যাচে দুটি ক্যাচ ছেড়ে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা এই ওপেনার প্রথম ওভারে বেরিয়ে এসে মইন আলিকে দুটি চার মেরে আভাস দেন ঘুরে দাঁড়ানোর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাঙতে পারেননি ব্যর্থতার গণ্ডি, যেতে পারেননি দুই অঙ্কেও।
আইসিসি টি-টোয়েন্টি অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠার দিনে ব্যাট হাতে ভালো কাটেনি সাকিব আল হাসানের। ক্রিস ওকসের বলে বিদায় নেন আদিল রশিদের দুর্দান্ত ক্যাচে।
পাওয়ার প্লেতে ২৭ রানে নেই টপ অর্ডারের তিন উইকেট। ইনিংস মেরামতের চিরচেনা কাজে লেগে পড়েন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যানের জুটিতে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু রানের গতিতে দম দেওয়ার কাজটা করতে পারেননি তারা।
লিয়াম লিভিংস্টোনের বলে রিভার্স সুইপ করার চেষ্টায় মুশফিক এলবিডব্লিউ হলে ভাঙে ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ৩২ বল স্থায়ী ৩৭ রানের জুটি। তিন চারে ৩০ বলে ২৯ রান করেন মুশফিক।
আফিফ হোসেনের রান আউটের পর মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে বিপদ বাড়ে বাংলাদেশের। শেষের দিকে নুরুল হাসান, মেহেদি হাসান ও নাসুম আহমেদের ব্যাটে ১২০ ছাড়ায় সংগ্রহ।
১৯তম ওভারে লেগ স্পিনার আদিল রশিদের ওভারে দুই ছক্কা ও এক চার মারেন নাসুম। ৯ নম্বরে নেমে ৯ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তার ইনিংসেই পরিষ্কার, সঠিক বলের জন্য অপেক্ষা করলে রান তোলা অত কঠিন ছিল না।
রয়ের খুনে ব্যাটিং ও মালানের দায়িত্বশীল ইনিংসে এগিয়ে যেতে থাকে ইংল্যান্ড। এই উইকেটে সঠিক লাইন-লেংথ কোনটা সেটাই যেন খুঁজে পাচ্ছিলেন না বোলাররা। কোনো লাইন-লেংথে ধারাবাহিকও ছিলেন না তারা।
নিজের জোনে প্রচুর বল পাওয়া রয় কাজে লাগান সুযোগ। কিছু ঝুঁকিও কাজে লেগে যাওয়ায় তিনি এগিয়ে যান দ্রুত। ৩৩ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের চোটে সুযোগ পাওয়া শরিফুল ইসলাম তাকে ফিরিয়ে ভাঙেন ৭৩ রানের জুটি। নাসুমের চমৎকার ক্যাচে ফেরার আগে তিন ছক্কা ও পাঁচ চারে ৩৮ বলে রয় করেন ৬১ রান।
জনি বেয়ারস্টোকে নিয়ে বাকিটা সারেন মালান। আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকেন তিন চারে ২৮ রানে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভালো অবস্থায় থেকেও নিজেদের ভুলে জয় হাতছাড়া করার পর এই বাজে পারফরম্যান্স। কোণঠাসা বাংলাদেশ পরের ম্যাচ খেলবে আগামী শুক্রবার, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২৪/৯ (লিটন ৯, নাঈম ৫, সাকিব ৪, মুশফিক ২৯, মাহমুদউল্লাহ ১৯, আফিফ ৫, সোহান ১৬, মেহেদি ১১, নাসুম ১৯*, মুস্তাফিজ ০; মইন ৩-০-১৮-২, ওকস ৪-০-১২-১, রশিদ ৪-০-৩৫-০, জর্ডান ২-০-১৫-০, মিলস ৪-০-২৭-৩, লিভিংস্টোন ৩-০-১৫-২)।
ইংল্যান্ড: ১৪.১ ওভারে ১২৬/২ (রয় ৬১, বাটলার ১৮, মালান ২৮*, বেয়ারস্টো ৮*; সাকিব ৩-০-২৪-০, মুস্তাফিজ ৩-০-২৩-০, শরিফুল ৩.১-০-২৬-১, নাসুম ৩-০-২৬-১, মেহেদি ২-০-২১-০)।
ফল: ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: জেসন রয়