ডি ককের সিদ্ধান্তে বাভুমার ‘কঠিনতম’ দিন

সংযুক্ত আরব আমিরাত সময় সকাল ৯টার দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড থেকে নির্দেশিকা আসে। বিশ্বকাপের সব ম্যাচের আগেই বাধ্যমূলকভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সবাইকে হাঁটু গেড়ে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে সংহতি জানাতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ শুরু হতে তখন ৫ ঘণ্টা বাকি। টিম বাসে ওঠার সময় সবাইকে সেটি জানানো হয়। আবু ধাবি থেকে দুবাইয়ে ঘণ্টা দেড়েকের বাস যাত্রায় কুইন্টন ডি কক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, তিনি এই প্রক্রিয়া আর এই ম্যাচে থাকবেন না।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2021, 06:39 AM
Updated : 27 Oct 2021, 06:39 AM

অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ড্রেসিং রুমে গিয়ে জানতে পারেন ডি ককের সিদ্ধান্তের কথা। তখন যে একটু কথা বলে ব্যাপারটির গভীরে যাবেন, সেই সময়ও নেই। টসের সময় তিনি বললেন, ব্যক্তিগত কারণে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন ডি কক। ক্রিকেট দুনিয়ায় যেন বিস্ফোরণ হলো।

ঝড় দিয়ে শুরু ম্যাচটিতে শেষ পর্যন্ত দারুণ খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ উইকেটে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচের পর দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক জানালেন, তার জন্য পরিস্থিতি সামলানো কতটা কঠিন ছিল।

“অধিনায়ক হিসেবে আমি এটি জানতে পারি ড্রেসিং রুমে যাওয়ার পর। বিস্তারিত আলোচনার সময় তখন খুব একটা ছিল না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ব্যাপারটি তখন ছিল, আমাদের যা বলা হয়েছে, তা হজম করা ও সামনে এগোনোর পথ বের করা।”

“সম্ভবত অধিনায়ক হিসেবে আমার কঠিনতম দিনগুলির একটি, মাঠের বাইরে ব্যাপার সামলাতে হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, নিজেদের কাজটা করে যেতে হতো আমাদের। দেশের হয়ে একটি ম্যাচ খেলার ব্যাপার ছিল। চারপাশে যতকিছুই ঘটে যাক, এটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে সঠিক মানসিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ বের করা এবং দেশের হয়ে কাজটি শেষ করা।”

এই ম্যাচের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের জন্য হাঁটু গেড়ে সংহতি জানানো বাধ্যতামূলক ছিল না। ক্রিকেট বোর্ড থেকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল, যার যার ইচ্ছামতো হাঁটু গেড়ে বা হাত তুলে কিংবা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তারা প্রতিবাদে সামিল হতে পারে। ডি কক তিনটির কোনোটিই করেননি আগে। বাধ্যতামূলক করার পর তিনি ম্যাচ থেকেই সরে দাঁড়ালেন।

বাভুমার নিজের জন্য তো বটেই, দলের সবার জন্যই পরিস্থিতিটি ছিল কঠিন। ডি ককের খবরে চমকে গিয়েছিল সবাই।

“জানার পর দল হিসেবে আমরা বিস্মিত ও হতচকিত হয়ে পড়েছিলাম। কুইন্টন দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন। শুধু ব্যাট হাতেই নয়, সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবেও। এমন একজনকে না পাওয়া, অধিনায়ক হিসেবে এমন কিছুর অপেক্ষায় আমি ছিলাম না।”

“তবে কুইন্টন যথেষ্ট পরিণত, তার নিজস্ব ভাবনা আছে। আমরা তার সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। তার বিশ্বাসকে সম্মান করি এবং জানি যে, সে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকবে।”

এই সিদ্ধান্তের পর ডি ককের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলের শঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে হয়তো আর কখনোই দেখা যাবে না ২৮ বছর বয়সী এই কিপার-ব্যাটসম্যানকে। এমন কিছুর শঙ্কা থাকা লোকের অভাব নেই ক্রিকেট বিশ্বে।

বাভুমাও জানেন না, সামনে কী অপেক্ষায়। তবে ডি ককের প্রতি দলের যে সমর্থন থাকবে, তা স্পষ্ট করে দিলেন তিনি।

“জানি না, এটা কতদূর গড়াবে। সে আজকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি তাই আজকের কথাই কেবল বলতে পারি। কুইন্টনের বদলি হিসেবে কাউকে দলে যোগ করার ব্যাপারটি আমার সিদ্ধান্ত নয়। কোচ আর নির্বাচকরা হয়তো তা ভাববেন।”

“কুইন্টন এখনও ক্রিকেটারদের একজন, আমাদের ছেলেদের একজন। যতটা সমর্থন তার লাগে, সতীর্থদের কাছ থেকে যতটা ভরসা তার প্রয়োজন, আমরা সবটুকুই দেব। যদি আরও আলোচনার প্রয়োজন পড়ে, অবশ্যই তা হবে।”