পরিস্থিতি বুঝে ডি ককের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সিএসএ

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হঠাৎ করে আলোচনার ঝড় তুলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কুইন্টন ডি ককের না খেলার বিষয়টি। টসের পর দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা জানান, ব্যক্তিগত কারণে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। তবে ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকার (সিএসএ) বিবৃতিতে জানা গেল আসল কারণ। হাঁটু গেড়ে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে ম্যাচটি খেলেননি ডি কক।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2021, 03:28 PM
Updated : 26 Oct 2021, 03:45 PM

সিএসএ এটিকে খেলোয়াড়ের ‘ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত’ উল্লেখ করে বলেছে, টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনার পর ডি ককের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে তারা।

“ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মঙ্গলবারের ম্যাচের আগে দক্ষিণ আফ্রিকান উইকেটকিপার কুইন্টন ডি ককের ‘হাঁটু গেড়ে না বসার’ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তকে আমলে নিয়েছে সিএসএ। বোর্ড পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে টিম ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করবে।”

“বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলোতে সকল খেলোয়াড় এই নির্দেশনা অনুসরণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যান্য প্রোটিয়া খেলোয়াড়রা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হওয়ায় এবং জনসম্মুখে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিতে সম্মত হওয়ায় সিএসএ ধন্যবাদ জানাচ্ছে।”

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচের টসের পরপরই সিএসএ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই নির্দেশিকার কথা জানায়, বিশ্বকাপের বাকি সব ম্যাচ শুরুর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে বাধ্যতামূলকভাবে হাঁটু গেড়ে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সংহতি জানাতে হবে। সিদ্ধান্তটি হয়েছিল আগের দিন।

“সোমবার সন্ধ্যায় সিএসএর নির্দেশনায় বর্ণবাদের বিপক্ষে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের জন্য সব খেলোয়াড়কেই হাঁটু গেড়ে বসার কথা বলা হয়েছিল।“

গত বছর ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার (বিএলএম)’ আন্দোলন শুরুর পর থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজসহ অনেক দলই নানা সময়ে হাঁটু গেড়ে সংহতি জানিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা দলও বর্ণবাদবিরোধী প্রচারণার অংশ হিসেবে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আগে কখনও আন্তর্জাতিক ম্যাচে হাঁটু গেড়ে প্রতিবাদ জানায়নি তারা।

গত জুলাইয়ে দেশের মাঠে তিন দলের প্রদর্শনী ক্রিকেট ‘সলিডারিটি’ কাপের আগে সব ক্রিকেটার, কর্মকর্তা, কোচরা হাঁটু গেড়ে বসার পথ বেছে নিয়েছিলেন। এর আগে গত ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বক্সিং ডে টেস্টের আগে হাত উঁচিয়ে সংহতি জানায় দক্ষিণ আফ্রিকা দল।

পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচের আগে হাঁটু গেড়ে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। তখন কোমরে হাত দিয়ে নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকেন কুইন্টন ডি কক। ছবি: আইসিসি

তখন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, দলের কে হাঁটু গেড়ে বসবে বা কে হাত তুলবে বা অন্য কিছু করবে, এটা যার যার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সেসময় দলের অনেক ক্রিকেটার হাঁটু গেড়ে বসেন, কেউ হাত উঁচিয়ে ধরেন, কেউ বা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সংহতি জানান। ডি কক তখন কোনোটিই করেননি।

এবারের নির্দেশিকা দেওয়ার আগ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার বোর্ড ব্যক্তিগতভাবে সংহতি জানানোর আগের সিদ্ধান্তেই ছিল। তবে বিশ্বকাপে দলের প্রথম ম্যাচের পর তা বদলে গেল। প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া হাঁটু গেড়ে সংহতি জানালেও দক্ষিণ আফ্রিকা আগের পথেই ছিল।

এবার সেখান থেকে সরে এসে দক্ষিণ আফ্রিকার বোর্ড সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, একতাবদ্ধ অবস্থান নেওয়ার সময় হয়েছে বলে মনে করছে তারা।

“বিএলএমের সমর্থনে দলের সদস্যরা বিভিন্ন পথ বেছে নেওয়ায় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও, এই উদ্যোগে যথেষ্ট সমর্থন না থাকা কিংবা বিভেদের একটি ধারণার জন্ম দিয়েছে। ক্রিকেটারদের অবস্থানসহ প্রাসঙ্গিক সবকিছু বিবেচনা করে, বোর্ডের মনে হয়েছে যে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে দলের একতাবদ্ধ ও ধারাবাহিক অবস্থান নেওয়া জরুরি, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাস বিবেচনা করে। বিশ্বকাপের অন্য অনেক দলই এই ইস্যুতে পরিষ্কার অবস্থান নিয়েছে। বোর্ডের মনে হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকারও একইরকম করা উচিত।”