অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারাল দ.আফ্রিকা

প্রতিপক্ষ দলে টি-টোয়েন্টির বিধ্বংসী সব ব্যাটসম্যান। কিন্তু ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেলদের ঝড় তোলার সুযোগই দিলেন না দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা। দারুণ বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আটকে রাখলেন দেড়শর নিচে। পরে ব্যাটসম্যানদের নিখুঁত পারফরম্যান্সে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বড় ব্যবধানে হারাল টেম্বা বাভুমার দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2021, 01:44 PM
Updated : 26 Oct 2021, 03:06 PM

দুবাইয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে মঙ্গলবার মাঠে নামার আগেই বড় ধাক্কা খায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে খেলতে আপত্তি জানান কিপার-ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কক। তবে তার অনুপস্থিতিতে দলটির পারফরম্যান্সে কোনো প্রভাব পড়েনি। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ৮ উইকেটে জেতে বাভুমারা।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিধ্বস্ত হওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই ম্যাচে কিছুটা লড়ার মতো পুঁজি পেলেও হার এড়াতে তা যথেষ্ট ছিল না। ২০ ওভারের বিশ্বকাপে এর আগে প্রথম দুই ম্যাচ হেরেছিল তারা ২০০৭ আসরে।

আগে ব্যাটিংয়ে নেমে এভিন লুইসের ৫৬ রানের বিস্ফোরক ইনিংসের সুবাদে দুই বারের শিরোপাজয়ীরা করে ৮ উইকেটে ১৪৪। রান তাড়ায় এইডেন মারক্রামের অপরাজিত ৫১ ও রাসি ফন ডার ডাসেনের ৪৩ রানে ১০ বল আগেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় প্রথম শিরোপার খোঁজে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা।

তাদের ছাড়িয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন আনরিক নরকিয়া। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৪ ওভারে কেবল ১৪ রান দেন এই পেসার। সঙ্গে নেন রাসেলের উইকেট।

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের হালকা ঘাসের ছোঁয়া থাকা উইকেটে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুরুতে ছিল সাবধানী। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৫ রানে গুটিয়ে যাওয়া দল প্রথম তিন ওভারে একটি মেডেন দিয়ে করে কেবল ৬ রান।

এরপর বোলারদের ওপর চড়াও হন লুইস। চতুর্থ ওভারে কাগিসো রাবাদাকে মারেন একটি করে চার-ছক্কা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মেডেন নেওয়া এইডেন মারক্রামকে টানা তিন বলে হাঁকান দুই ছক্কা ও এক চার।

বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ঝড়ে পাওয়ার প্লের পরের তিন ওভারে আসে ৩৭। ছয় ওভার শেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর দাঁড়ায় ৪৩ রান।

পাওয়ার প্লের পরও চলে লুইস তাণ্ডব। কেশভ মহারাজের পর তাবরাইজ শামসিকে ছক্কায় উড়িয়ে ৩২ বলে ফিফটি তুলে নেন তিনি।

ড্রিংস ব্রেকের পরের ওভারেই ফিরে যান লুইস। বাঁহাতি স্পিনার মহারাজকে লং-অন দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠানোর এক বল পরই ধরা পড়েন ডিপ মিডউইকেটে। শেষ হয় তার ৬ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৫ বলে ৫৬ রানের ইনিংস।

৭৩ রানের উদ্বোধনী জুটিতে লুইস যতটা আগ্রাসী ছিলেন, লেন্ডল সিমন্স ছিলেন ততটাই মন্থর। ক্রিজে অস্বস্তিতে থাকা এই ওপেনার জুটিতে ২৮ বলে মাত্র ১৩ রান করেন।

নেমেই দারুণ দুটি শটে চার মারা নিকোলাস পুরানও টিকেননি বেশিক্ষণ। শুরু থেকে ধুঁকতে থাকা সিমন্স শেষ পর্যন্তও খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। ৪ রানে জীবন পেয়ে করেন ৩৫ বলে ১৬! বোল্ড হন রাবাদার স্লোয়ারে।

শামসিকে দুই ছক্কায় উড়িয়ে গেইল ডানা মেলার বার্তা দিয়ে ফিরে যান কট বিহাইন্ড হয়ে। শেষ দিকে প্রয়োজনীয় ঝড় তুলতে পারেননি রাসেল, কাইরন পোলার্ডরা।

ইনিংসের শেষ ২৪ বলে কেবল ৩২ রান তুলতে পারে ক্যারিবিয়ানরা। হারায় ৫ উইকেট।

রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। মিড অন থেকে রাসেলের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে যান টেম্বা বাভুমা।

শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে টানেন ফন ডার ডাসেন ও রিজা হেনড্রিকস। তাদের ব্যাটে পাওয়ার প্লেতে ৪২ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা।

ডি ককের বদলে একাদশে সুযোগ পাওয়া হেনড্রিকস দারুণ ব্যাটিংয়ে বাড়াতে থাকেন রান। ফন ডার ডাসেনের সঙ্গে তার জুটিতে আসে ৫০ বলে ৫৭ রান। যেখানে অগ্রণী ছিলেন হেনড্রিকস।

আকিল হোসেনের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে শিমরন হেটমায়ারের দারুণ ক্যাচে ফেরেন এই ওপেনার। ৪ চার ও এক ছক্কায় করেন ৩৯ রান।

এরপর দারুণ ব্যাটিংয়ে বাকিটা পথ ফন ডার ডাসেনকে নিয়ে পাড়ি দেন মারক্রাম। তৃতীয় উইকেটে দুইজনে গড়েন ৫৪ বলে ৮৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি।

৩ চারে ৫১ বলে ৪৩ রান করে অপরাজিত থাকেন ফন ডার ডাসেন। আর ২৬ বলে ৫১ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে মাঠ ছাড়েন মারক্রাম। ৪টি ছক্কার সঙ্গে মারেন দুটি চার।

আগামী শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলবে বাংলাদেশের বিপক্ষে। পরদিন দক্ষিণ আফ্রিকা মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৪৩/৮ (সিমন্স ১৬, লুইস ৫৬, পুরান ১২, গেইল ১২, পোলার্ড ২৬, রাসেল ৫, হেটমায়ার ১, ব্রাভো ৮*, ওয়ালশ ০, আকিল ০*; মারক্রাম ৩-১-২২-০, রাবাদা ৪-০-২৭-১, নরকিয়া ৪-০-১৪-১, মহারাজ ৪-০-২৪-২, শামসি ৩-০-৩৭-০, প্রিটোরিয়াস ২-০-১৭-৩)।

দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৮.২ ওভারে ১৪৪/২ (বাভুমা ২, হেনড্রিকস ৩৯, ফন ডার ডাসেন ৪৩*, মারক্রাম ৫১*; আকিল ৪-০-২৭-১, রামপল ৩-০-২২-০, রাসেল ৩.২-০-৩৬-০, ওয়ালশ ৩-০-২৬-০, ব্রাভো ৪-০-২৩-০, পোলার্ড ১-০-৯-০)।

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৮ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: আনরিক নরকিয়া।