টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে দুই দলের প্রথম ম্যাচে পাত্তাই পায়নি ভারত। দুবাইয়ে রোববার আগে ব্যাটিংয়ে নেমে তারা করতে পারে ১৫১। বাবর ও রিজওয়ানের উদ্বোধনী জুটিতেই তা পেরিয়ে যায় পাকিস্তান, জয় ১০ উইকেটে! বল বাকি ছিল ১৩টি।
ওয়ানডে হোক বা টি-টোয়েন্টি, বিশ্বকাপে ১৩ বারের চেষ্টায় অবশেষে ভারতকে হারাতে পারল পাকিস্তান।
আরেকটি প্রথমের স্বাদও পেয়েছে তারা, টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ১০ উইকেটে জয়। ৩১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে নায়ক যেখানে আফ্রিদি।
তার হাত ধরেই পাকিস্তান ম্যাচের শুরুটা করে অসাধারণ। বাঁহাতি পেসার দারুণ দুটি ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দেন ভারতের দুই ওপেনারকে। ৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ভারত দেড়শ ছাড়ানো পুঁজি পায় কোহলির ফিফটি ও রিশাভ পান্তের ঝড়ো ইনিংসে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে দেড়শ ছাড়ানো রান তাড়ায় এতদিন পাকিস্তানের জয় ছিল একটিই। ২০১৮ সালে ১৫৩ রান তাড়ায় হারিয়েছিল নিউ জিল্যান্ডকে।
ভারতের বিপক্ষে লড়াইটা বিশ্ব মঞ্চে হওয়ায় চাপে ভেঙে পড়ার শঙ্কা ছিলই। এসব যেন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন বাবর ও রিজওয়ান।
৫৫ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৯ রানের ইনিংস খেলেন কিপার ব্যাটসম্যান রিজওয়ান। ৫২ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৬৮ রান করেন পাকিস্তান অধিনায়ক।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের শুরুটা হয় বিবর্ণ। ইনিংসের চতুর্থ বলেই প্রায় ইয়র্কার ডেলিভারিতে রোহিত শর্মাকে এলবিডব্লিউ করে দেন আফ্রিদি। ভারত ওপেনার পান গোল্ডেন ডাক-এর তেতো স্বাদ। পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার নিজের পরের ওভারে আরেকটি দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড করেন লোকেশ রাহুলকে।
তৃতীয় ওভারে ৬ রানেই ভারত হারায় দুই ওপেনারকে। ওই ওভারে আফ্রিদিকে পুল করে ছক্কায় ওড়ানোর পর বেশিক্ষণ টেকেননি সূর্যকুমার যাদব। উইকেটের পেছনে মোহাম্মদ রিজওয়ানের দারুণ ক্যাচে বিদায় নেন তিনি ১১ রানে।
পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে ভারত তুলতে পারে কেবল ৩৬ রান। চাপে পড়া দলের হাল ধরেন কোহলি ও পান্ত। কোহলি শুরু থেকে ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। আফ্রিদিকে ছক্কায় ওড়ান তিনি মিড অনের ওপর দিয়ে।
দারুণ কিছু শট খেলেন পান্ত। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান পরপর দুই বলে ছক্কা মারেন হাসান আলিকে। পরের ওভারে শাদাব খানকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ৩৯ রানের ইনিংস। ভাঙে ৪০ বলে ৫৩ রানের জুটি। ২টি করে ছক্কা-চারে সাজানো পান্তের ইনিংস।
পঞ্চদশ ওভারে ভারতের রান স্পর্শ করে একশ। কোহলি ফিফটি পূর্ণ করেন ৪৫ বলে। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও পাকিস্তানের বিপক্ষে রান তাড়ায় চাপের মুখে নেমে ফিফটি করেছিলেন তিনি।
আফ্রিদির স্লোয়ারে আগেই ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে কোহলির ইনিংস শেষ হয় ১৯তম ওভারে। ৫ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো তার ৫৭ রানের ইনিংসটি।
শেষ দিকে রবীন্দ জাদেজা ও হার্দিক পান্ডিয়া তুলতে পারেননি প্রত্যাশিত ঝড়। পাকিস্তানের এলোমেলো ফিল্ডিংয়ে তবু শেষ পাঁচ ওভারে ৫১ রান তোলে ভারত।
রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই ভুবনেশ্বরকে পরপর চার-ছক্কা মারেন রিজওয়ান। মোহাম্মদ শামিকে চোখ ধাঁধানো কাভার ড্রাইভে চার মারেন বাবর।
পাওয়ার প্লেতে পাকিস্তান তোলে ৪৩ রান। অষ্টম ওভারে দলের রান স্পর্শ করে পঞ্চাশ। পেসার-স্পিনারদের দারুণভাবে সামলে পাকিস্তানকে এগিয়ে নেন দুই ওপেনার।
বরুণ চক্রবর্তীকে ছক্কায় উড়িয়ে বাবর ফিফটি পূর্ণ করেন ৪০ বলে। রিজওয়ানের লাগে ৪১ বল। ১৮তম ওভারে শামির টানা তিন বলে দুই চার ও এক ছক্কায় দলকে জয়ের কাছে পৌঁছে দেন তিনিই। বাবরের ডাবলে উৎসবে মাতে পাকিস্তান।
বিশ্বকাপে দুই দলের ব্যবধানটা তাই এখন; ভারত ১২-১ পাকিস্তান!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৫১/৭ (রাহুল ৩, রোহিত ০, কোহলি ৫৭, সূর্যকুমার ১১, পান্ত ৩৯, জাদেজা ১৩, হার্দিক ১১, ভুবনেশ্বর ৫*, শামি ০*; আফ্রিদি ৪-০-৩১-৩, ওয়াসিম ২-০-১০-০, হাসান ৪-০-৪৪-২, শাদাব ৪-০-২২-১, হাফিজ ২-০-১২-০, রউফ ৪-০-২৫-১)
পাকিস্তান: ১৭.৫ ওভারে ১৫২/০ (রিজওয়ান ৭৯*, বাবর ৬৮*; ভুবনেশ্বর ৩-০-২৫-০, শামি ৩.৫-০-৪৩-০, বুমরাহ ৩-০-২২-০, বরুণ ৪-০-৩৩-০, জাদেজা ৪-০-২৮-০)
ফল: পাকিস্তান ১০ উইকেট জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: শাহিন শাহ আফ্রিদি