শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ১৭১ রান দলটি ছাড়িয়ে গেছে ৭ বল বাকি থাকতে।
শ্রীলঙ্কার জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রাখা চারিথ আসালাঙ্কা ও ভানুকা রাজাপাকসাকে জীবন না দিলে ম্যাচের চিত্র অন্যরকমও হতে পারত। দুই জনেরই ক্যাচ ছাড়েন লিটন দাস। ৬৩ রানে কাভারে ক্যাচ দেওয়া আসালাঙ্কা অপরাজিত ৮০ রানের ইনিংসে ফিরেন দলের জয়কে সঙ্গী করে। ১৪ রানে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়া রাজাপাকসে করেন ৫৩।
টস হেরেও চাওয়া পূরণ হয় বাংলাদেশের, পায় ব্যাটিং। নাঈম ও লিটনের ব্যাটে শুরুটা ছিল সাবধানী। আসরে নিজেদের সেরা উদ্বোধনী জুটির পর প্রথমবার বিনা উইকেটে পাওয়ার প্লে কাটিয়ে দেওয়ার আশা জাগায় বাংলাদেশ।
বেরিয়ে এসে তুলে মারতে চেয়েছিলেন লিটন। মারে ছিল না তেমন জোর। লাফিয়ে মিড অফে ক্যাচ মুঠোয় জমান দাসুন শানাকা।
ফিল্ডার ক্যাচ ধরার পর ব্যাটসম্যানের দিকে এগিয়ে যান কুমারা। জায়গায় দাঁড়িয়ে যান লিটন। নাঈম এগিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন শ্রীলঙ্কান পেসারকে। দুজনের মধ্যে হয় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। ততক্ষণে এসে যান লঙ্কান ক্রিকেটার ও আম্পায়াররা। দুই ক্রিকেটারকে বিচ্ছিন্ন করেন তারা। আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলে মাঠ ছাড়েন লিটন। পরে দুই আম্পায়ার শানাকা ও কুমারার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন।
এই ঘটনা হয়ত তাতিয়ে দেয় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। পাওয়ার প্লের পরপরই আক্রমণে আসা অনিয়মিত স্পিনার আসালাঙ্কাকে তিনটি চার মারেন সাকিব ও নাঈম।
সাকিব টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। চামিকা করুনারত্নকে লেগে ঘুরানোর চেষ্টায় ফিরেন বোল্ড হয়ে।
ভীষণ চাপে থাকা মুশফিক কঠিন সময়ে গিয়ে খেলেন সহজাত ক্রিকেট। স্লগ সুইপে মারেন দুটি ছক্কা। নাঈমের সঙ্গে দ্রুত জমে যায় তার জুটি।
নিজের মতো করেই খেলছিলেন নাঈম। এক-দুই নিচ্ছিলেন, নিজের জোনে পেলে মারছিলেন বাউন্ডারি। তবে বোলার-ফিল্ডারদের খুব ভোগাচ্ছিলেন মুশফিক। ফিল্ডার একটু ডানে সরলে, তিনি মারেন আরেকটু বাঁয়ে। বাঁয়ে সরালে বাউন্ডারি মারেন ডান দিয়ে।
আইসিসি টি-টোয়েন্টি বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বরে থাকা লেগ স্পিনার ভানিন্দু হাসারাঙ্গা যেন ভেবে পাচ্ছিলেন না, মুশফিককে বল করবেন কোথায়।
পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর নাঈম যেতে পারেননি বেশিদূর। বিনুরা ফার্নান্দোকে পুল করতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে থামেন তিনি। ভাঙে ৫১ বল স্থায়ী ৭৩ রানের ইনিংস।
নাঈম ৬ চারে ৫২ বলে করেন ৬২।
থিতু ব্যাটসম্যান ফিরে গেলেও কমেনি রানের গতি। মুশফিকের ব্যাটে ১৭০ ছাড়ায় বাংলাদেশ। দুঃসময় পেছনে ফেলার আভাস দেওয়া এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটিতে অপরাজিত থাকেন ৫৭ রানে। এই সংস্করণে ১১ ইনিংস পর এটাই তার প্রথম ফিফটি, সবশেষ ২৮ ইনিংসে কেবল দ্বিতীয়।
প্রথম ১০ ওভারে ৭২ রান তোলা বাংলাদেশ শেষ ১০ ওভারে যোগ করে ৯৯ রান।
রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি শ্রীলঙ্কার। দলে ফেরা নাসুম চতুর্থ বলেই বোল্ড করে দেন কুসাল পেরেরাকে। তিনে নেমে ঝড় তোলেন আসালাঙ্কা। তার সঙ্গে পাথুম নিসানকার জুটিতে এগিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
পরের ওভারে মেলে আরেকটি উইকেট। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের বলে নাঈমের হাতে ধরা পড়েন হাসারাঙ্গা। দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে তাদের রানের গতিতে ভাটা পড়ে।
আসালাঙ্কা ও ভানুকা রাজাপাকসের জুটিতে এগিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। এই জুটি ভাঙতে পারত ১৯ রানেই। যদি ত্রয়োদশ ওভারে আফিফ হোসেনের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে রাজাপাকসার ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারতেন লিটন।
জীবন পাওয়ার পর শট খেলতে শুরু করেন রাজাপাকসা। মাঝে কিছুটা সময় নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া আসালাঙ্কাও খেলতে শুরু করেন শট। কাজে লাগান এক পাশের ছোট বাউন্ডারি। পঞ্চদশ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তিনি। সহজ ক্যাচ হাতে জমাতে ব্যর্থ হন লিটন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৭১/৪ (নাঈম ৬২, লিটন ১৬, সাকিব ১০, মুশফিক ৫৭*, আফিফ ৭, মাহমুদউল্লাহ ১০*; করুনারত্নে ৩-০-১২-১, বিনুরা ৩-০-২৭-১, চামিরা ৪-০-৪১-০, কুমারা ৪-০-৩১-১, আসালাঙ্কা ১-০-১৪-০, হাসারাঙ্গা ৩-০-২৯-০, শানাকা ২-০-১৪-০)।
শ্রীলঙ্কা: ১৮.৫ ওভারে ১৭২/৫ (পেরেরা ১, নিসানকা ২৪, আসালাঙ্কা ৮০*, আভিশকা ০, হাসারাঙ্গা ৬, রাজাপাকসা ৫৩, শানাকা ১*; নাসুম ২.৫-০-২৯-২, মেহেদি ৪-০-৩০-০, সাইফ ৩-০-৩৮-১, সাকিব ৩-০-১৭-২, মুস্তাফিজ ৩-০-২২-০, মাহমুদউল্লাহ ২-০-২১-০, আফিফ ১-০-১৫-০)।
ফল: শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: চারিথ আসালাঙ্কা