ক্যাচ ছাড়ার খেসারত দিল বাংলাদেশ

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে লড়ছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2021, 09:19 AM
Updated : 24 Oct 2021, 03:15 PM

ক্যাচ ছাড়ার খেসারত দিল বাংলাদেশ

মাত্র ১৪ রানে জীবন পান রাজাপাকসা। তিনি থেলেন ৩১ বলে ৫৩ রানের ইনিংস। ১৫তম ওভারে আসালাঙ্কা জীবন পান ৬৩ রানে। তিনি ম্যাচ শেষ করে ফেরেন ৮০ রানে অপরাজিত থেকে।

দুটি ক্যাচই ছিল সহজ। দুটিই ছাড়েন লিটন দাস। এই দুজনের ব্যাটিংয়েই হেরে যায় বাংলাদেশ।

ম্যাচের আগে যদিও স্পিন মহড়ার প্রস্তুতি ছিল সবার, কিন্তু ম্যাচের উইকেট দেখা গেল ব্যাটিংয়ের জন্য দারুণ। সেখানে ১৭১ রান তুলেও পারল না বাংলাদেশ।

২ ওভারে ৬ রানে ২ উইকেট নেওয়ার পর বিস্ময়করভাবে সাকিবকে অনেকটা সময় দেখা গেল না বোলিংয়ে। মুস্তাফিজুর রহমানও ১ ওভারে ১৩ রান দেওয়ার পর লম্বা সময় থাকলেন বোলিংয়ের বাইরে। এর সঙ্গে যোগ হলো ক্যাচ ছেড়ে দেওয়া। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশর হার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৭১/৪ (নাঈম ৬২, লিটন ১৬, সাকিব ১০, মুশফিক ৫৭*, আফিফ ৭, মাহমুদউল্লাহ ১০*; করুনারত্নে ৩-০-১২-১, বিনুরা ৩-০-২৭-১, চামিরা ৪-০-৪১-০, কুমারা ৪-০-৩১-১, আসালাঙ্কা ১-০-১৪-০, হাসারাঙ্গা ৩-০-২৯-০, শানাকা ২-০-১৪-০)।

শ্রীলঙ্কা : ১৮.৫ ওভারে ১৭২/৫ (পেরেরা ১, নিসানকা ২৪, আসালাঙ্কা ৮০*, আভিশকা ০, হাসারাঙ্গা ৬, রাজাপাকসা ৫৩, শানাকা ১*; নাসুম ২.৫-০-২৯-২, মেহেদি ৪-০-৩০-০, সাইফ ৩-০-৩৮-১, সাকিব ৩-০-১৭-২, মুস্তাফিজ ৩-০-২২-০, মাহমুদউল্লাহ ২-০-২১-০, আফিফ ১-০-১৫-০)।

শ্রীলঙ্কার দারুণ জয়

জয়ের কাছে গিয়ে রাজাপাকসাকে হারালেও জিততে কোনো সমস্যা হলো না শ্রীলঙ্কার। ৫ উইকেটের জয়ে তারা শুরু করল সুপার টুয়েলভের পথচলা। সম্ভাবনা জাগিয়েও হেরে গেল বাংলাদেশ।

দশম ওভারে লঙ্কানদের রান ছিল ৪ উইকেটে ৭৯। দ্রুত তিন উইকেট নিয়ে তখন দারুণ উজ্জীবিত বাংলাদেশ। সেখান থেকেই অসাধারণ এক জুটিতে শ্রীলঙ্কাকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন চারিথ আসালাঙ্কা ও ভানুকা রাজাপাকসা। দুর্দান্ত সব শটের প্রদর্শনীতে দুজনের জুটিতে আসে ৫২ বলে ৮৬ রান।

রাজাপাকসার বিদায়ের পর কাজ শেষ করে ফেরেন আসালাঙ্কা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিতে ৫টি করে চার ও ছক্কায় ৪৯ বলে ৮০ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।

অবশেষে উইকেট

ম্যাচ হারার দুয়ারে দাঁড়িয়ে অবশেষে জুটি ভাঙতে পারল বাংলাদেশ। ভানুকা রাজাপাকসাকে বোল্ড করে দিলেন নাসুম আহমেদ।

জায়গা বানিয়ে নাসুমকে অফ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন রাজাপাকসা। নাসুম সেটি দেখেই বল দেন ঝুলিয়ে। স্টাম্প সোজা বলটি কাট করতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে ব্যর্থ হয়ে বোল্ড রাজাপাকসা।

আউট হওয়ার আগে অবশ্য নিজের জন্মদিনে ৩১ বলে ৫৩ রানের অসাধারণ এক ইনিংস তিনি খেলেন।

আগ্রাসী জুটির ফিফটি

চারিথ আসালাঙ্কা ও ভানুকা রাজাপাকসার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দারুণভাবে ম্যাচে ফিরল শ্রীলঙ্কা। দুজনই একবার করে জীবন পেয়ে আগ্রাসী সব শটে দুজনের জুটির ফিফটি এলো ৩৩ বলেই।

জুটিতে বেশি আক্রমণাত্মক রাজাপাকসা, তার রান জুটিতে ৩০। আসালাঙ্কার রান ১৯।

লিটন ক্যাচ ছাড়লেন আবার

বাধা হয়ে থাকা চারিথ আসালাঙ্কাকে ফেরানোর বড় সুযোগ হারাল বাংলাদেশ। আবারও ক্যাচ ছাড়লেন লিটন দাস।

দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা মুস্তাফিজুর রহমানের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বল উড়িয়ে মারেন আসালাঙ্কা। লিটন ডিপ কাভার থেকে ছুটে বলের নিচে চলে আসেন। কিন্তু বল হাতে জমাতে ব্যর্থ হন। সহজ ক্যাচ দিয়েও আসালাঙ্কা বেঁচে যান ৬৩ রানে।

আসালাঙ্কার দারুণ ফিফটি

দ্রুত একের পর এক উইকেট হারানোয় একটু আড়াল চারিথ আসালাঙ্কা। শুরুর ঝড় থামিয়ে তার ব্যাটেও এখন সতর্কতার সুর। তবে কাঙ্ক্ষিত একটি মাইলফলকের দেখা পেয়ে গেলেন ২৪ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পঞ্চম ম্যাচে পেলেন প্রথম ফিফটির দেখা।

৪টি চার ও ২ ছক্কায় ৩২ বলে এলো তার পঞ্চাশ।

শ্রীলঙ্কার একশ

রাজাপাকসার জীবন পাওয়ার বাউন্ডারিতেই শ্রীলঙ্কার রান একশ পেরিয়ে গেল ১২.৩ ওভারে।

জীবন পেলেন রাজাপাকসা

দুই বাঁহাতির জুটি ভাঙতে আফিফ হোসেনের অফ স্পিন আক্রমণে আনেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। কাজ হচ্ছিল প্রায়। অফ স্টাম্পের বাইরের বল উড়িয়ে সুইপ করেন ভানুকা রাজাপাকসা। কিন্তু স্কয়ার লেগে ক্যাচটি নিতে পারেননি লিটন দাস। তার দুই হাতের ফাঁক গলে বল এক ড্রপে গেল বাউন্ডারিতে।

১৪ রানে জীবন পেলেন রাজাপাকসা।

রিভিউ হারাল বাংলাদেশ

শেখ মেহেদি হাসানের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল পুল আর আর সুইপ শটের মাঝামাঝি কিছু খেলতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি চারিথ আসালাঙ্কা। দারুণ ক্ষীপ্রতায় বল গ্লাভসে জমিয়ে কট বিহাইন্ডের আবেদন করেন কিপার নুরুল হাসান সোহান।

আম্পায়ার আউট দেননি, রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু দেখা যায়, ব্যাটে লাগেনি বল। একটি রিভিউ হারায় বাংলাদেশ।

মাঝবিরতিতে প্রায় কাছাকাছি

ইনিংসের ১০ ওভার শেষে দুই দলকে আলাদা করা কঠিন। বাংলাদেশের রান ছিল ২ উইকেটে ৭২। শ্রীলঙ্কা ১০ ওভারে রান করেছে ৮ বেশি, তবে উইকেটও হারিয়েছে দুটি বেশি।

হাসারাঙ্গার বিদায়

সাকিব আল হাসানের জোড়া শিকারের পর দৃশ্যপটে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। দারুণ এক স্লোয়ারে তিনি ফিরিয়ে দিলেন বিপজ্জনক ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে।

স্লোয়ার বলটি হাসারাঙ্গা পড়তে পেরেছিলেন বলেই মনে হচ্ছিল। একটু জায়গা বানিয়ে চেষ্টা করেন তিনি উড়িয়ে মারতে। তবে ১১২ কিলোমিটার গতির বলে জোর পাননি শটে। সহজ ক্যাচটি নেন নাঈম।

৫ বলে ৬ রানে আউট হাসারাঙ্গা। শ্রীলঙ্কা ৯.৪ ওভারে ৪ উইকেটে ৭৯।

সাকিবের আরেকটি

নিসানকাকে হারানোর রেশ না কাটতেই আরেকটি উইকেট হারাল শ্রীলঙ্কা। এক ওভারে দুটি উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরালেন সাকিব আল হাসান।

সাকিবের দ্বিতীয় শিকার আভিশকা ফার্নান্দো। এই বলটিও সাকিব ভাসিয়ে দেন বাতাসে। তবে লেংথ ভিন্ন, একদম ফুল লেংথ। ফ্লাইট আর লুপে বিভ্রান্ত আভিশকা ফ্লিকের মতো খেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু উইথ দা আর্ম বল সোজা হয়ে ব্যাটকে ফাঁকে দিয়ে বল আঘাত করে স্টাম্পে।

৩ বলে শূন্য রানে আউট আভিশকা। শ্রীলঙ্কা ৮.৪ ওভারে ৩ উইকেটে ৭১।

অবশেষে উইকেট

বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ানো জুটি ভাঙলেন সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে প্রথম ওভারেই দলকে এনে দিলেন উইকেট।

বলটি বাতাসে একটু ভাসিয়ে দিয়েছিলেন সাকিব, একটু মন্থর গতিতে। কিন্তু পিচ করে এটিই স্কিড করে। পাথুম নিসানকা চেষ্টা করেন সুইপ করতে। কিন্তু ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। বল লাগে স্টাম্পে।

২১ বলে ২৪ করে আউট নিসানকা। ভাঙল ৪৫ বলে ৬৯ রানের জুটি।

শ্রীলঙ্কা ৮.১ ওভারে ২ উইকেটে ৭১।

আগ্রাসী আসালাঙ্কা

উইকেটে যাওয়ার পরপরই সুইপ করে বাউন্ডারি। পরের ওভারে নাসুম আহমেদ তিন বলের মধ্যে দুটি ছক্কা। চারিথ আসারাঙ্কা নেমেই আশা জাগালেন লঙ্কানদের। শুরুতে উইকেট হারানোর ধাক্কা অনেকটাই সামলে নিল শ্রীলঙ্কা তার ব্যাটিংয়ে।

তাকে দেখেই হয়তো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে পাথুম নিসানকা খেললেন দারুণ কয়েকটি শট। আগ্রাসী কুসাল পেরেরাকে প্রথম ওভারে হারালেও শ্রীলঙ্কা পাওয়ার প্লেতে তুলে ফেলল রান।

বাঁহাতি আসালাঙ্কা দুটি করে চার-ছক্কায় অপরাজিত ১৮ বলে ৩২ করে, ১৫ বলে ১৯ নিসানকা।

নাসুমের দুর্দান্ত শুরু

দলে এসে ছাপ রাখতে এতটুকুও সময় নিলেন না নাসুম আহমেদ। প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দিলেন বিপজ্জনক কুসাল পেরেরাকে।

নাসুম বলটি করেছিলেন অনেকটা ঝুলিয়ে, লেংথ ডেলিভারি। পিচ করে বলটি একটু স্কিড করে। অফ স্টাম্প থেকে সেটি সুইপ করার চেষ্টায় লাইন মিস করেন পেরেরা। বল ছোবল দেয় স্টাম্পে।

৩ বলে ১ রানে আউট কুসাল পেরেরা। শ্রীলঙ্কা ১ উইকেটে ২।

নতুন ব্যাটসম্যান চারিথ আসালাঙ্কা।

যথেষ্ট স্কোর?

ম্যাচের মাঝবিরতিতে টিভিতে মুশফিকুর রহিম বললেন, “সত্যি বলতে, উইকেটে ব্যাটিংয়ের জন্য দারুণ। আমরা আইপিএল ও অন্য ম্যাচগুলি দেখছিলাম। ১৪০ রান এখানে যথেষ্ট মনে হচ্ছিল। তবে আজকে উইকেট ভালো। জিততে হলে বোলিং-ফিল্ডিং ভালো করতে হবে আমাদের। বিশেস করে, নতুন বলে ব্যাটিং সহজ। তাই শুরুতে উইকেট নিতে হবে।”

চ্যালেঞ্জিং স্কোর

প্রথম ১০ ওভারে ৭১, পরের ১০ ওভারে ৯৯! মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর সৌজন্যে শেষটা দুর্দান্ত করল বাংলাদেশ। ২০ ওভারে রান ৪ উইকেটে ১৭১।

ইনিংসের শেষ বলে স্কুপ করে বাউন্ডারিতে মুশফিক শেষ করলেন ৫৭ রান অপরাজিত থেকে। তার ৩৭ বলের ইনিংসে চার ৫টি, ছক্কা ২টি। শেষ দিকে নেমে দুটি বাউন্ডারিতে মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ৫ বলে ১০ রান করে। শেষ ৬ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৬৪ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৭১/৪ (নাঈম ৬২, লিটন ১৬, সাকিব ১০, মুশফিক ৫৭*, আফিফ ৭, মাহমুদউল্লাহ ১০*; করুনারত্নে ৩-০-১২-১, বিনুরা ৩-০-২৭-১, চামিরা ৪-০-৪১-০, কুমারা ৪-০-৩১-১, আসালাঙ্কা ১-০-১৪-০, হাসারাঙ্গা ৩-০-২৯-০, শানাকা ২-০-১৪-০)।

রান আউট আফিফ

দ্রুত একটি রান চুরি করার চেষ্টায় পারলেন না আফিফ। বরং ক্রিজে ফেরার চেষ্টায় হয়ে গেলেন রান আউট। বোলিং করে ফলো ঘ্রুরর পর দ্রুত ছুটে গিয়ে নিজের বলেই দারুণ ফিল্ডিংয়ে সরাসরি থ্রোয়ে বল স্টাম্পে লাগালেন লাহিরু কুমারা।

৬ বলে ৭ করে আউট আফিফ। বাংলাদেশ ১৮.৩ ওভারে ৪ উইকেটে ১৫০।

মুশফিকের ফিফটি

দুঃসময়ের প্রহর পেরিয়ে অবশেষে নিজেকে ফিরে পেলেন মুশফিকুর রহিম। দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়ে ফিফটি স্পর্শ করলেন ৩২ বলে। ইনিংসে চার ৪টি, ছক্কা ২টি।

১১ ইনিংসের খরার পর এলো তার এই ফিফটি। সবশেষ ২৮ ইনিংসে এটি তার কেবল দ্বিতীয় ফিফটি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২৪ ইনিংস খেলে তার প্রথম ফিফটি এটি।

নাঈমের বিদায়

নতুন স্পেলে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই শ্রীলঙ্কাকে কাঙ্ক্ষিত ব্রেক থ্রু এনে দিলেন বিনুরা ফার্নান্দো। ৬ চারে ৫২ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলে আউট হলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ।

দীর্ঘদেহী এই বাঁহাতি পেসার বলটি ঠুকে দেন উইকেটে দেন উইকটে। পিচ করে একটু বল একটু থমকে আসে। নাঈম পুল করলেও গড়বড় করেন টাইমিংয়ে। নিজের বলে ক্যাচ নেন বিনুরা।

১৬.১ ওভারে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ১২৯।

জুটির ফিফটি

অল্প সময়ের মধ্যে লিটন ও সাকিবের বিদায়ের পর যেমন দরকার ছিল, তেমনই একটি জুটি গড়লেন নাঈম ও মুশফিক। চতুর্থ উইকেটে দুজনের জুটি পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলল ৩৮ বলে।

৫১ রানের জুটিতে মুশফিকের রান ১৭ বলে ২৪, নাঈমের ২১ বলে ২৭।

বাংলাদেশের একশ

নাঈমের ফিফটি ছোঁয়ার বাউন্ডারিতেই বাংলাদেশ পেরিয়ে যায় শতরান। ১৩.৪ ওভারে বাংলাদেশের রান স্পর্শ করে তিন অঙ্ক।

নাঈমের পঞ্চাশ

নিজের মতো খেলে, নিজের গতিতে নাঈম পা রাখলেন আরেকটি ফিফটিতে। কুমারাকে মাথার ওপর দিয়ে চার মেরে ফিফটি পূর্ণ করেন ৪৪ বলে, চারটি চারে।

টি-টোয়েন্টিতে ২৫ ম্যাচে তার চতুর্থ ফিফটি এটি, চলতি বিশ্বকাপে তিন ম্যাচে দ্বিতীয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফিফটি করলেন নিজের প্রথম ম্যাচেই।

৪৬ রানে অবশ্য তিনি আউট হতে পারতেন। তবে সরাসরি থ্রোয়ে বণ স্টাম্পে লাগাতে পারেননি আভিশকা ফার্নান্দো।

ইনিংসের মাঝামাঝি

লিটন ও সাকিবের আউটের পর জুটি গড়ার চেষ্টা করছেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও লিটন কুমার দাস। ১০ ওভার শেষে রান ২ উইকেটে ৭২। নাঈম খেলছেন ৩৪ বলে ৪০ রান নিয়ে, মুশফিক ৫ বলে ৪।

এবার পারলেন না সাকিব

আগের দুই ম্যাচে দলের জয়ে ব্যাট হাতে বড় অবদান রাখার পর এবার পারলেন না সাকিব। আউট হয়ে গেলেন তিনি ৭ বলে ১০ করে।

উইকেটে যাওয়ার পরপরই দুটি চার মারেন সাকিব। তবে দারুণ শুরুটা পারলেন না ধরে রাখতে। চামিকা করুনারত্নের বলটি ছিল দারুণ লেংথে। সাকিব ফ্লিক আর পুল শটের মাঝামাঝি কিছু করতে চেষ্টা করেন। তবে বলটি তত শর্ট ছিল না। বল স্কিড করে উড়িয়ে দেয় বেলস। উল্লাসে মেতে ওঠেন করুনারত্নে।

৭.৪ ওভারে বাংলাদেশ ২ উইকেটে ৫৬।

বাংলাদেশের পঞ্চাশ

পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর হঠাৎ বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে দেখা গেল বেশ ‘পাওয়ার।’ অনিয়মিত বোলার চারিথ আসালাঙ্কার এত ওভারে দুটি চার মারেন সাকিব, একটি নাঈম। ৬.৩ ওভারে নাঈমের বাউন্ডারিতে বাংলাদেশের রান স্পর্শ করে ফিফটি। এই ওভার থেকে আসে ১৪ রান।

পাওয়ার প্লে শেষে

 পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে এসে লিটনকে হারানোর ধাক্কা, নইলে শুরুটা খারাপ নয় বাংলাদেশের। ৬ ওভারে দলের রান ১ উইকেটে ৪১।

আউটের পর উত্তেজনা

লিটনের আউটের পর মাঠে ছড়ায় উত্তেজনা। উইকেটেই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় লিটন ও বোলার লাহিরু কুমারাকে। দুজনের শরীরী ভাষাও ছিল বেশ আক্রমণাত্মক। শেষ পর্যন্ত আম্পায়ার এসে তাদেরকে আলাদা করেন। কুমারাকে টেনে নিয়ে যান লঙ্কান ফিল্ডাররা।

লিটনের বিদায়

বিশ্বকাপে প্রথমবার উইকেটবিহীন পাওয়ার প্লে কাটানোর কাছাকাছি গিয়েও পারল না বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বিদায় নিলেন লিটন দাস।

লাহিরু কুমারার বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে জায়গা বানিয়ে লফটেড অফ ড্রাইভ খেলেন লিটন। কিন্তু বলের নিচে যেতে পারেননি। তাই মিড অফ ফিল্ডারের নাগালের বাইরে রাখতে পারেননি বল। মারে ছিল না তেমন জোর। একটু লাফিয়ে ক্যাচ নেন লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা।

১৬ বলে ১৬ রান করে আউট হলেন লিটন। ৫.৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ৪০। আগের তিন ম্যাচে তার রান ছিল ৫, ৬ ও ২৯।

সতর্ক শুরু বাংলাদেশের

প্রথম চার ওভারে দলের চার পেসারকে ব্যবহার করেছে শ্রীলঙ্কা। তবে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি ভাঙতে করতে পারেনি তারা। রানের গতি খুব বেশি না হলেও বাংলাদেশকে স্বস্তির শুরু এনে দিয়েছেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও লিটন দাস।

৪ ওভারে বাংলাদেশের রান । চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা উদ্বোধনী জুটি এটিই। প্রথম পর্বের তিন ম্যাচে শুরুর জুটির সর্বোচ্চ রান ছিল ১১।

দুটি বাউন্ডারিতে নাঈম খেলছেন ১৫ বলে ১৮ রানে, লিটন এক বাউন্ডারিতে ১১ বলে ৯।

স্পিনারের জায়গায় পেসার

মাহিশ থিকশানাকে নিয়ে যে শঙ্কা ছিল শ্রীলঙ্কার, সেটিই সত্যি হলো। সাইড স্ট্রেইনের কারণে খেলতে পারছেন না আগের তিন ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করা এই রহস্য স্পিনার। তার জায়গায় শ্রীলঙ্কার পছন্দ বেশ কৌতূহল জাগানিয়া। বাংলাদেশ পেসার কমিয়ে স্পিনার বাড়ালেও শ্রীলঙ্কা স্পিনারের বদলে একাদশে এনেছে বাঁহাতি পেসার বিনুরা ফার্নান্দোকে। এখনও পর্যন্ত ৪ টি-টোয়েন্টি খেলে বিনুরার উইকেট ৫টি।

শ্রীলঙ্কা একাদশ: পাথুম নিসানকা, কুসাল পেরেরা, চারিথ আসালাঙ্কা, আভিশকা ফার্নান্দো, দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), ভানুকা রাজাপাকসা, ভানিন্দু হাসারাঙ্গা, চামিকা করুনারত্নে, দুশমন্থ চামিরা, লাহিরু কুমারা, বিনুরা ফার্নান্দো।

পেসারের বদলে স্পিনার

শারজাহর উইকেট মন্থর ও নিচু বাউন্সের হবে বলেই ধারণা সবার। বাংলাদেশ একাদশেও তাই অনুমিত একটি পরিবর্তন দেখা গেল। গত ম্যাচে দারুণ বোলিং করলেও একাদশে বাইরে যেতে হলো ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদকে। তার বদলে একাদশে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। টুর্নামেন্টে এটি তার প্রথম ম্যাচ।

বাংলাদেশ একাদশ: মোহাম্মদ নাঈম শেখ, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান সোহান, শেখ মেহেদি হাসান, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ।

ব্যাটিং চেয়েছিল বাংলাদেশ

টস হারলেও তা প্রভাব ফেলছে না বাংলাদেশের পরিকল্পনায়। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ টসের সময় বললেন, টস জিতলে আগে ব্যাটিংই করতেন তারা। অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের মতে, কন্ডিশনের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেওয়া হবে গুরুত্বপূর্ণ।

টস জিতে বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কা

আগের ম্যাচে এই মাঠে টস জিতে বোলিং নিয়ে নেদারল্যান্ডসকে ৪৪ রানে গুটিয়ে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। এবারও তারা টস জিতে বেছে নিল আগে বোলিংয়ের পথ।

লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা বললেন, টানা তিন ম্যাচ জিতে সুপার টুয়েলভে এসে তার দলের আবহ দারুণ এবং সবাই আত্মবিশ্বাসী।

একটু ‘ভিন্ন’ তবে প্রত্যাশিত উইকেট

উইকেট অনেকটাই কালচে। পিচ রিপোর্টে ড্যানি মরিসন ও মুরালি কার্তিক বললেন, বেশ ভালোভাবে রোল করা হয়েছে উইকেট। তবে উইকেটের আচরণে যে ‘রোল’ করার প্রভাব খুব থাকে না, সেটাও উল্লেখ করলেন কার্তিক। তার মতে, উইকেট মন্থর ও নিচু বাউন্সের হবে। যদিও এই উইকেট একটু ভিন্ন বলে মনে হচ্ছে সাবেক ভারতীয় এই স্পিনারের কাছে, তবে খুব আলাদা হবে না বলেও ধারণা তার।

মিরপুরের মতো শারজাহ

আশি ও নব্বইয়ের দশকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের অনেক ধ্রুপদি লড়াইয়ের স্বাক্ষী শারজাহ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। তখন বেশির ভাগ সময়ই এখানে উইকেট কথা বলেছে ব্যাটসম্যানদের পক্ষে। তবে সেই দিন আর দিন। উইকেট নতুন করে তৈরির পর এখানে বেশ মন্থর ও নিচু বাউন্ডের উইকেট চোখে পড়েছে সম্প্রতি আইপিএলে।

বিশ্বকাপের এই লড়াইয়ের আগেও বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেছেন, শারজাহর উইকেটকে তার ঢাকার মতোই মনে হয়েছে।

নতুন করে পুরনো লড়াই

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার দেখা হয়েছে নিয়মিতই। তবে টি-টোয়েন্টিতে দুই দল মুখোমুখি হচ্ছে সাড়ে তিন বছর পর! এই ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে সুপার টুয়েলভ, মানে বিশ্বকাপের আসল পর্বে দুই দলের অভিযান।

সবশেষ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফিতে লড়াই হয়েছিল দুই দলের। সেবার দুই ম্যাচেই লঙ্কানদের হারিয়েছিল বাংলাদেশ।

এমনিতে মুখোমুখি লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কা এগিয়ে অনেকটাই। ১১ বারের দেখায় তাদের জয় ৭টি, বাংলাদেশের ৪টি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বিস্ময়করভাবে প্রথম আসরের পর আর দেখা হয়নি দুই দলের। ১৪ বছর আগের সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১৪৭ রানে আটকাতে পারলেও বাংলাদেশ করতে পেরেছিল কেবল ৮৩।